ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে মাস্টার্স করার পর তরিকুল ইসলাম তুষারের মনে হলো আইটিতেই গড়বেন ক্যারিয়ার। কোমর বেঁধে শুরু করেন ডিজিটাল মার্কেটিং এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) শেখা। আশানুরূপ আয় আসেনি তিন বছরেও। তবে হাল ছাড়েননি। দিনে দিনে হয়ে ওঠেন দক্ষ। ফ্রিল্যান্সারদের জনপ্রিয় সাইট আপওয়ার্কে তিনি এখন বাংলাদেশের সফলদের মধ্যে অন্যতম। তুষারের ফ্রিল্যান্সিং অভিযানের গল্প শোনা যাক তার মুখেই।
যেভাবে শুরু
এসএসসি পাসের পরই ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিষয়টা মাথায় আসে। এরপর টুকটাক জানতে শুরু করি। ২০১৩ সালের দিকে গুগল ও ইউটিউব ঘেঁটে কিছু বিষয় রপ্ত করি। তখন সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি আসতে লাগল। এখনকার মতো তখন এত কোর্সও ছিল না। ইচ্ছে ছিল ওয়েব ডেভেলপমেন্টের ওপর কাজ করব। সেটাতে খুব বেশি সফলতা না আসায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে নজর দিই। সেই ধারাবাহিকতায় এসইওর প্রতি আগ্রহ জন্মায়।
চাকরি খোঁজা হয়নি
অনেক বাধা এলেও ফ্রিল্যান্সিংয়েই ক্যারিয়ার গড়ব ঠিক করি। কাজ শুরুর পর তিন বছর লেগেছিল ইনকাম আসতে। কারণ, আমি প্রথমে কাজকে ফোকাস করেছিলাম, ইনকামকে নয়। কাজের প্রতি ভালোবাসাও ছিল। গ্র্যাজুয়েশনের পর চাকরি খোঁজার চেষ্টা করিনি। ফ্রিল্যান্সার হওয়াটাকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েছি। এখন মাসে লাখ টাকারও বেশি আয় হচ্ছে।
আগ্রহ জরুরি
প্রথমে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিল না। অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে ঘাঁটাঘাঁটি করে শেখার কাজটা চালিয়ে যাই। কিছুদিন পর পরিবারের সদস্যরাও বুঝতে পারেন এখান থেকে ভালো কিছু করা সম্ভব। তারাও সাপোর্ট দেন। এখন আমি পরিবারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আপাতত একাই কাজ করছি। যাদের ফ্রিল্যান্সিং শেখাই, চেষ্টা করি তারাও যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে যত অর্জন
বর্তমানে আমি আমেরিকান একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সিতে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) স্পেশ্যালিস্ট হিসেবে কর্মরত। এমনকি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ফাইবার ও আপওয়ার্কে টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যুক্ত আছি। গত বছর আমি আপওয়ার্কে বাংলাদেশের অন্যতম দক্ষ এসইও এক্সপার্ট নির্বাচিত হয়েছিলাম। চলতি বছরে রংপুরের পীরগঞ্জে আয়োজিত ডিজিটাল কর্মশালা মেলায় দশ তরুণ ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করি। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর এবং কোডার্সট্রাস্ট আয়োজিত প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) ও কর্মশালার সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে টিওটি সনদ পাই।
চলছে প্রশিক্ষণ
রংপুরের পীরগঞ্জে আমার লার্ন ফ্রিল্যান্সিং উইথ তুষার নামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে ৬০ থেকে ৭০ জন নিয়মিত ক্লাস করেন এবং প্রায় আড়াইশ জন ফ্রিল্যান্সার বের হয়ে এখন আয় করছেন। আমি LEDP, DOICT, JAICA, LGED ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিংয়ে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ট্রেনার হিসেবে ছিলাম। এ ছাড়া অনলাইনে Toriqul Islam Tusher নামে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে ক্লাস পরিচালনা করি। যেখানে আগ্রহীদের ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকি।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
ফ্রিল্যান্সিংয়ে মূলত বিদেশি কোম্পানি বা ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে কারিগরি দক্ষতার পাশপাশি ইংরেজির দক্ষতা বলা যায় সমান গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া ধৈর্যশীল হতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং করে রাতারাতি ধনী হওয়ার সুযোগ নেই। ভাষাগত দিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে ক্রমাগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ভাষাগত দক্ষতার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতার জন্য ফ্রিল্যান্সারদের দেশের যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম ডিগ্রি পাস থাকা উচিত। এতে ফ্রিল্যান্সিং জগতের দক্ষতা সহজ হবে এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল হওয়া সম্ভব হবে। শুধু মাত্র ইনকামের দিক না দেখে কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়ে। কাজকে ভালোবেসে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবে।
ভবিষ্যতে নিজ এলাকাসহ শিক্ষিত বেকারদের নিয়ে কাজ করে যেতে চাই। আমরা চাকরির পিছে না ছুটে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে ইনকাম করতে পারি এবং বেকার সমস্যার সমাধান করতে পারি। ট্রেনিং সেন্টারটি আরও বড় করতে চাই। যেন নিজের গ্রাম ছাড়িয়ে পাশের গ্রামের বেকার ছেলে-মেয়েদের কাজ শেখাতে পারি।
অনুলিখন : আনিসুল ইসলাম নাঈম
মন্তব্য করুন