গত ঈদুল ফিতরে কানাডা থেকে দেশে এসেছিলেন আরিয়ান আলম দীপ্ত (২০)। ওইবার পরিবারের সঙ্গে উৎসবমুখর সময় কাটে তার। দীর্ঘ আট মাস পর ফের দেশে ফিরেছেন তিনি। এবার এসেছে তার নিথর দেহ। পরিবারে নেই আনন্দ। দীপ্তর বাসা ও এলাকাজুড়ে শুধুই বিষাদ-শোকের ছায়া। যে স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন তারুণ্যে ভরা এই তরুণ, তা কফিনবন্দি হয়ে ফিরেছে দেশে। দীপ্তর সঙ্গে কফিনবন্দি বিষাদের ‘স্বপ্ন’ নিয়ে দেশে এসেছে মাহির শাহরিয়ার খানের (১৭) নিথর দেহও।
তারা কানাডায় গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশটির ম্যানিটোবায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় দীপ্তসহ তার দুই বন্ধু মাহির শাহরিয়ার খান ও অ্যাঞ্জেলা বাড়ৈ নিহত হন। তাদের মধ্যে গতকাল শুক্রবার ভোরে দুজনের লাশ আনা হয় দেশে। অ্যাঞ্জেলার মরদেহ এখনো কানাডায়। ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন নিবিড় কুমার। তিনি জনপ্রিয় গায়ক কুমার বিশ্বজিতের ছেলে।
দীপ্তর বাসা রাজধানীর তেজগাঁও নাখালপাড়ায়। ওই এলাকার ২৩ নম্বর ‘জুবিলেশন’ নামের বাড়িতে বাবা-মা ও বোন। বিদেশ থেকে আসা দীপ্তর কফিন সেখানেই নেওয়া হয়। গতকাল ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের ছায়া। আদরের দীপ্তকে হারিয়ে পরিবারের লোকজন অধিক শোকে যেন পাথর। বাড়িজুড়ে বিষাদের ছায়া। আদরের সন্তানকে হারিয়ে বাবা এটিএম আলমগীরের চোখ বেয়ে পড়ছিল পানি, মা রেজিনা সুলতানা বিলাপ করছিলেন।
দীপ্তর বোন সানজিদা আলম মাইশা জানান, দীপ্ত দেশে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাস্টারমাইন্ড ও অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনালে পড়ালেখা শেষ করে কানাডায় যায়। প্রথমে টরন্টোর ব্রেমার কলেজ থেকে ডিপ্লোমা করে। পরে সেখানকার নামি প্রতিষ্ঠান হামবার্গ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ভর্তি হয়। তার স্বপ্ন ছিল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার। এ বছরের জানুয়ারিতে ক্লাসও শুরু হয়।
চোখের পানি মুছতে মুছতে মাইশা বলছিলেন, গত ঈদুল ফিতরের পর বড় বোন তানজিনা আলম সিনথিয়ার সঙ্গে দেশ ছেড়েছিল দীপ্ত। এবার একাই ফিরে এলো লাশ হয়ে।
গতকাল জুমার নামাজ শেষে বাসার কাছে তেজকুনি পাড়া খেলাঘর মাঠে দীপ্তর জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর দাফনের জন্য ক্যান্টনমেন্ট বালুঘাট পারিবারিক কবরস্থানে নেওয়া হয় তার মরদেহ।
মাহির শাহরিয়ার খানের মরদেহ রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের ৮ নম্বরের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনরা জানান, মাহিরের স্বপ্ন ছিল অডিট ফার্ম গড়ে তোলার। এজন্য এ-লেভেল শেষ করে গত ৪ জানুয়ারি টরন্টো পাড়ি জমান তিনি। ভর্তি হন জর্জ ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে। তার বাবা শরীফ হোসেন খান ব্যবসায়ী। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন মাহির। বাবা চাইতেন, পড়ালেখা শেষে তার ছেলে ব্যবসার হাল ধরবে। তবে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন কেড়ে নিল।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ছিল দীপ্তর জন্মদিন। বন্ধুরা নর্থ ইয়র্ক থেকে তার বাসা ইতোবিকোক গিয়েছিলেন জন্মদিন উদযাপন করতে। এর দুদিন পর বন্ধু নিবিড় কুমার, মাহির শাহরিয়ার খান ও অ্যাঞ্জেলা বাড়ৈর সঙ্গে ঘুরতে বের হয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন তারা।