অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত হওয়ার পর নতুন কর্মস্থলে মতিউরের যোগদান নিয়ে বহুমাত্রিক ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আদৌ তিনি যোগদান করেছেন কি না, করলে তিনি সশরীরে উপস্থিত হয়েছেন, না অন্য কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে যোগদানপত্র পাঠিয়েছেন। যদি যোগদান করেই থাকেন, তাহলে কার কাছে সেই যোগদানপত্র জমা দিয়েছেন, অথবা যোগ দেওয়ার পর তিনি কোনো ছুটিতে আছেন কি না তার কোনো বিষয়েই কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের দায়িত্বশীল বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই বিভাগের সঙ্গে আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর বৈঠকেও তারা মতিউরকে দেখেননি। সব মিলে নতুন সংযুক্ত হওয়া এই কর্মকর্তার বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কারও কাছেই কোনো তথ্য নেই বলেই তারা দাবি করেছেন। তদুপরি গতকাল সরেজমিন চার ঘণ্টা ধরে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে প্রতিটি কক্ষে দফায় দফায় খোঁজ করেও মতিউরের সন্ধান মেলেনি।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে গতকাল এ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও এ চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি।
এর আগে গত রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে মতিউরকে প্রত্যাহার করে তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। এর পর থেকেই মতিউরের যোগদান নিয়ে চলছে ধোঁয়াশা, যা জাতীয় স্বার্থে বিষয়টি স্পষ্ট করার দায়িত্ব নিচ্ছেন না অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কোনো কর্মকর্তা।
তবে গতকাল অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর বৈঠক থাকলেও সেখানে আমন্ত্রিতদের তালিকায় রাখা হয়নি মতিউরকে। বৈঠকে বিভিন্ন পদমর্যাদার ৩৪ জন কর্মকর্তাকে রাখা হলেও মতিউরকে ডাকা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত হওয়ার পর নিয়মমাফিক সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিভাগে যোগদানপত্র জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু গত সোমবার মতিউর রহমান অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে অন্য লোকের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কাস্টমস শাখায় একটি যোগদানপত্র পাঠান বলে জানা যায়। সূত্র আরও জানায়, এর পরিপ্রেক্ষিতে একই দিন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার একটি সভায় মতিউরকে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়; কিন্তু তিনি উপস্থিত হননি।
এদিকে মতিউরকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করার প্রজ্ঞাপনে এই বিভাগের উপসচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা মকিমা বেগমের স্বাক্ষর রয়েছে। গতকাল মতিউরের যোগদান ও এপিএর বৈঠকে যোগদান করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি কোনো কথা বলতে পারব না। আপনারা বিভাগের সিনিয়র সচিব স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
এ বিষয়ে জানতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা আবদুল গফুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এরপর দায়িত্বশীল বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে আলাদা আলাদা কথা বলেও কারও কাছে মতিউরের বিষয়ে কোনো তথ্য বের করা যায়নি। এক কথায় মতিউরের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের দায়িত্বশীল সবার মুখেই তালা ঝুলছে।