সানাউল হক সানী
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৪, ০২:৩৮ এএম
আপডেট : ২২ জুন ২০২৪, ০৭:৩৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কানাডায় আলিশান বাড়ি মতিউরকন্যা ইপসিতার

প্রায় ৯ কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি ক্রয়
কানাডায় আলিশান বাড়ি মতিউরকন্যা ইপসিতার

কানাডার গুরুত্বপূর্ণ প্রভিন্স অন্টারিও থেকে ৯০ কিলোমিটার উত্তরে ব্যারি সিটি। এটি মূলত অন্টারিওর বর্ধিতাংশ। তীরঘেঁষে অবস্থিত এ শহরে মূলত শৌখিন কানাডিয়ানরা অবসর কাটাতে যান। বিভিন্ন দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে সারাবছরই। বাড়ি কেনেন অপেক্ষাকৃত ধনকুবেররা। কানাডার সেই শৌখিন শহরে প্রাসাদ রয়েছে বাংলাদেশের আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের কন্যা ফারজানা রহমান ইপসিতার। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি তিনি বাড়িটি কেনেন। এতে খরচ হয়েছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার কানাডিয়ান ডলার। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন এবং জমি ট্রান্সফার ফি বাবদ আরও গুনতে হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কানাডিয়ান ডলার। সব মিলিয়ে বাড়িটির মালিক হতে বাংলাদেশি টাকায় ৯ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে।

কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচিত এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তার ছেলে মুসফিকুর রহমান ইফাত কোরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কিনে আলোচনায় আসেন। বিপুল টাকায় কিনেছিলেন কয়েকটি গরু। ঘটনা ভাইরাল হয়ে গেলে মুসফিকুর রহমান ইফাতকে ছেলে হিসেবে অস্বীকার করেন মতিউর রহমান। তবে পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত আলোচিত ইফাত মতিউর রহমানেরই ছেলে। এর পরেই বিষয়টি ঘাঁটতে গিয়ে বের হতে থাকে মতিউরের অবৈধ সম্পদের থলের বিড়াল। বাড়ি-গাড়ি, রিসোর্ট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ শত শত কোটি টাকার সম্পদের খবর বের হয়ে আসে। মতিউরের কন্যা ফারজানা রহমান ইপসিতা বর্তমানে থাকেন কানাডায়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দামি গাড়িসহ মাঝেমধ্যেই পোস্ট দেন। তার বিষয়টি খোঁজ নিতে গিয়ে কালবেলা সন্ধান পায় কানাডায় বিপুল টাকায় কেনা বাড়ির। কানাডার জমি রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষের নথি অনুসারে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি অন্টারিওর ব্যারি শহরে এই বাড়িটি কেনেন ফারজানা রহমান ইপসিতা। শহরের মোনার্কি স্ট্রিটের ১১৭ নম্বর বাড়িটি তার।

কানাডায় জমি বেচাকেনা নিয়ে কাজ করেন এমন দুজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতের সঙ্গে কথা হয় কালবেলার। তারা বলছেন, কানাডায় বাড়ির এখন উচ্চমূল্য। এ ছাড়া জীবনযাত্রায় বেড়েছে খরচ। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে কানাডায় কাজ করে সেই আয়ে বাড়ি করা সম্ভব নয়। সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। তারা বলছেন, কানাডায় সাধারণত ব্রোকাররা বাড়ি খুঁজে দেন। সেক্ষেত্রে ব্রোকারদের আলাদা চার্জও দিতে হয়।

তথ্য বলছে, ব্যারি শহরে ফারজানা রহমান ইপসিতা যে বাড়িটি কিনেছেন তিনি সেখানে থাকেন না।

তারা মূলত অন্টারিও শহরে থাকেন। ওই বাড়িটি ভাড়া দেওয়া। তবে সূত্র বলছে কানাডায় ইপসিতা যে বাড়িটিতে বর্তমানে থাকেন, সেটিও তার নিজের কেনা। কালবেলা অবশ্য বিষয়টি সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে পারেনি।

কানাডার সরকারি নথি অনুসারে ব্যারি শহরের ৩৯, স্প্রাই লেনের ফেং জুয়ান হোয়াং নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই বাড়িটি কেনেন ইপসিতা এবং তার স্বামী মোহাম্মদ নাসরাত ফয়সাল। বাড়িটি যৌথ মালিকানায় রয়েছে। বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে যে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, ইপসিতার জন্মতারিখ ১৯৯২ সালের ৩১ জুলাই। জানা যায়, ২০১৮ সালের দিকে কানাডায় পাড়ি জমান ইপসিতা। সেখানে বর্তমানে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেন।

বাড়িটিতে ঘুরে এসেছেন কালবেলার একজন প্রতিনিধি। তার তথ্য বলছে ট্রিপ্লেক্স এ বাড়িটির অত্যাধুনিক সব আসবাবপত্র দিয়ে সজ্জিত। বাড়ির সামনে দীর্ঘ লন। এ ছাড়া একটি সুইমিংপুলও রয়েছে। রয়েছে আলাদা পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। প্রধান সড়ক ঘেঁষে গড়ে তোলা ফুল ফার্নিশড এ বাড়িটি যেন রাজপ্রাসাদ।

জানা যায়, ইপসিতা কানাডায় থাকলেও বাংলাদেশে তার নামে রয়েছে অন্তত এক ডজন কোম্পানি। এর মধ্যে রয়েছে এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছেন মতিউর রহমানের দুই সন্তান তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও ফারজানা রহমান ইপসিতা। এ ছাড়া গাজীপুরের গ্লোবাল সু ও গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং কোম্পানিতেও মালিকানা রয়েছে ইপসিতার।

এসব বিষয়ে জানতে নানাভাবে ফারজানা রহমান ইপসিতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি ড. মতিউর রহমানকেও। পরবর্তী সময়ে মতিউর রহমানের অফিস এবং বাসার ঠিকানায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। দিনভর চেষ্টা করা হয় মোবাইল নম্বরেও। তিনি কল রিসিভ করেননি। এর আগে গত বুধবার তিনি কালবেলার কাছে দাবি করেছিলেন, মুসফিকুর রহমান ইফাত তার ছেলে নয়। তার এক ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও মেয়ে ফারজানা রহমান ইপসিতা। এর বাইরে তার কোনো সন্তান নেই।

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, টরন্টোতে অর্থ অবশ্যই যথাযথ প্রক্রিয়ায় যায়নি। অর্থ পাচার হয়েছে বা মানি লন্ডারিং যা-ই বলুন না কেন, এই অর্থ অবৈধভাবে গেছে। আমাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে উভয় দেশের সমঝোতার ভিত্তিতে এই অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের আইন অনুযায়ী যে অর্থ পাচার হয়েছে সেটা তো বাজেয়াপ্ত হবেই, তার সঙ্গে পাচারকারীর তিনগুণ জরিমানা এবং ১৪ বছর জেল হওয়ার বিধান রয়েছে। সরকারকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে এনে পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আইসিসির চুক্তিতে সই করা ১২৪ দেশে গেলেই গ্রেপ্তার হবেন নেতানিয়াহু

বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে জনগণ উদগ্রীব : আমান

নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে যাব : ধর্ম উপদেষ্টা

নির্বাচনী সংস্কার সবার আগে দরকার : এ্যানি 

গুমের সঙ্গে জড়িতরা রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না : প্রেস সচিব

এক ইলিশের দাম ৬ হাজার টাকা

ইয়াং অ্যাক্টিভিস্ট সামিট ২০২৪ লরিয়েট সম্মাননা পেলেন বাংলাদেশি তরুণ

ছায়ানটের লোকসংগীত আসরে দেশসেরা ৫ গীতিকবির গান

চাঁদাবাজদের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পুলিশে দিন : হাসনাত আবদুল্লাহ

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী : রিজভী 

১০

ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বোলিংয়ে টাইগাররা

১১

নাটোরে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

১২

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ভুয়া মামলা, স্ত্রীসহ ৩ জন পুলিশ হেফাজতে

১৩

মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ : ধর্ম উপদেষ্টা

১৪

হঠাৎ কেন ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়াল ইরান

১৫

দলকে আরও শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন : যুবদল সভাপতি

১৬

গ্লোবাল ক্লাইমেট মিডিয়া নেটওয়ার্কের নির্বাহী কমিটি গঠন

১৭

মেহেরপুর ইসলামি আন্দোলনের উর্বর ভূমি : গোলাম পরওয়ার

১৮

রেলপথ যেভাবে পাল্টে দিয়েছে সময়ের ধারণা

১৯

‘সেন্টমার্টিনে নিষেধাজ্ঞা পর্যটনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না’

২০
X