এবারের বাজেটের প্রেক্ষাপট তো অন্যান্য বছরের তুলনায় ভিন্ন। সার্বিকভাবে দেশে সংকটময় এবং চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে বাজেটের আকার অন্যান্যবারের তুলনায় অনেক ছোট করা হয়েছে। এবারের বাজেটে আয় যদিও গত বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ বেড়েছে, তবে প্রকৃত অর্থে এবং প্রকৃত মূল্যে বাজেটের আকার কমেছে। এই প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার বাজেটের আকার কমিয়ে ছোট করেছে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমি মনে করি, এটার প্রয়োজন ছিল। কারণ বর্তমানে অর্থনীতিতে যে টানাপোড়েন চলছে, মুদ্রানীতিকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য এটা দরকার ছিল।
এরপর আমি বলব, আর্থিক খাতে যে দুর্বলতা, সেটার আলোকে ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা অনেক বেশি। ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি হবে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারই যদি ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা নিয়ে নেয় তাহলে ব্যাংক চলবে কীভাবে! এই বিষয়টা আমার কাছে একেবারেই বোধগম্য নয়।
আবার বাংলাদেশ ব্যাংক যদি টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। ফলে মুদ্রানীতিতে প্রভাব পড়বে। এটা একটা বড় জটিলতা বা ফাঁদ। আমি কী চাই সে সম্বন্ধে আমি নিজেই নিশ্চিত নই—সরকারের অবস্থা অনেকটা সে রকমই। এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে, যদি বাইরে থেকে বেশি ঋণ নেওয়া যেত, তাহলে ভালো একটা সমাধান হতো; কিন্তু সরকার তো সেটা করতে পারছে না। ফলে গত বছরের মতো এবারও বাজেট বাস্তবায়ন হবে না।
ব্যাংক খাত সংস্কার নিয়ে বাজেটে একটা ঘোষণা আশা করেছিলাম। কিন্তু বাজেট বক্তৃতায় এই বিষয়ে তেমন কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এই খাতে সংস্কার ছাড়া কীভাবে আমরা অর্থনৈতিক কাঠামোগত পরিবর্তন করব, সেটা বুঝতে পারছি না। আমাদের দুটো সমস্যা, এক. সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। সেটা হবে হয়তো বছরখানেক পরে। দুই. কাঠামোগত পরিবর্তন। এটি ছাড়া তো সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের ব্যাংকিং খাতের সংস্কার করতে হবে, শিক্ষা খাত আরও আধুনিক করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে ভঙ্গুরতার জন্য দেশের প্রচুর টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে, সেটা থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। এসব খাতে ব্যাপক সংস্কার ছাড়া কাঠামোগত পরিবর্তন সম্ভব হবে না। যদিও এসব বিষয়ে কৌশলগত কোনো পদক্ষেপ বাজেট বক্তৃতায় নেই।
এদিকে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, সেটা অর্জন হবে না। এ বছর ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো ঘাটতি থাকবে। আর আগামী বছর
৪০-৫০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে। এনবিআর নতুন ক্ষেত্র তৈরি না করে যেসব খাতে বেশি কর পায় সেখানেই আরও বেশি বেশি করারোপ করে। এতে অনেক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়। আগামী বাজেটে ইন্টারনেটের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। এতে এই খাতে বিনিয়োগ কমার আশঙ্কা রয়েছে।
ড. আহসান এইচ মনসুর: নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট