ভিসা পেয়েও ফ্লাইট জটিলতায় মালয়েশিয়া যেতে না পারা প্রায় ১৭ হাজার কর্মীকে দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানায় বাংলাদেশ। তবে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন স্পষ্ট করে জানান, তাদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা (৩১ মে) বাড়ানো হবে না। ফলে বাংলাদেশিসহ বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগের সময়সীমা আর বাড়ছে না। এমন সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে হাজারো বাংলাদেশি শ্রমিকের মালয়েশিয়া যাত্রা।
পেনাং টুন আহমেদ ফুজির ইয়াং দিপারতুয়া নেগেরিতে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি কর্মীদের নিয়ম-কানুন সব দেশের জন্য একই। এ ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষপাতিত্ব নেই। ২৮ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত চার দিনে ২০ হাজারেরও বেশি বিদেশি শ্রমিক একসঙ্গে ঢুকেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকের ভিসা অনুমোদন অন্তত ১০ বছর আগের। স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভিসা প্রাপ্তি ও টিকিটের ব্যবস্থা করতে এত সময় লাগার কথা নয়। নিয়োগকর্তারা কেন তাদের কর্মীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করতে শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন বলে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন তিনি। সাইফুদ্দিন ইসমাইল বলেন, তারা যদি বিষয়টিকে জরুরি ভাবত, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সব কাজ করা উচিত ছিল।
তিনি আরও জানান, সর্বশেষ ২০ হাজার শ্রমিকসহ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৬ লাখেরও বেশি বিদেশি কর্মী প্রবেশের কথা দেশটিতে, যা আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ইউনিটের (ইপিইউ) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
নতুন কোটা অনুমোদনের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ম্যানুফ্যাকচার, সার্ভিস ও কনস্ট্রাকশন খাতের জন্য বিদেশি কর্মীর চাহিদা পূরণ হয়েছে। কৃষি খাতের জন্য আগের অনুমোদিত কোটা অনুযায়ী ব্যবস্থা করব।
২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছর ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৩ জনকে অনুমতি দেয় মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র পান ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জন। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ মের মধ্যে যেতে পারেননি ১৬ হাজার ৯৭০ জন।
ভুক্তভোগীদের দাবি, মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া অভিবাসন খরচের লিমিট মানেনি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও সিন্ডিকেটরা শ্রমিকদের কাছ থেকে ব্যক্তিভেদে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করে নিয়েছে। গড়ে ৫ লাখ টাকা করে ধরলেও যারা যেতে পারেননি তাদের মোট ৮৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা গচ্ছা গেছে। জীবনের শেষ সম্বল এজেন্সি ও দালালদের হাতে তুলে দিয়ে পথে বসেছেন তারা। আদৌ তারা এ টাকা ফেরত পাবেন কি না, তার সদুত্তর নেই মন্ত্রণালয়সহ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছে। তাদের তোপের মুখে অনেক এজেন্সির লোকজন এরই মধ্যে অফিস বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন।