ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষত নিয়েই আজ বুধবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দেশের ৮৭টি উপজেলায় বিরতিহীনভাবে চলবে ভোট গ্রহণ। এর মধ্যে ১৬টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং বাকি ৭১টিতে ব্যালটে ভোট নেওয়া হবে। সাম্প্রতিক সময়ের বড় প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের পর অনুষ্ঠিত এ ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আরও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর যদিও ভোটার উপস্থিতির চেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এদিকে রিমালের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে গতকাল আরও তিনটি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। সেগুলো হচ্ছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, কচুয়া ও নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি। আর আগের দিন দুর্গত এলাকার ১৯টি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়। তারও আগে তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর দুটির নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
ইসির তথ্য মতে, তৃতীয় ধাপে একজন চেয়ারম্যান, চারজন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাতজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান এরই মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৯৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৫৬ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৯৯ জনসহ ১ হাজার ১৯৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৫৬টি পৌরসভা ও ৮৪১টি ইউনিয়নের ২ কোটি ৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৮৪ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৭ হাজার ৪৫০টি। এর মধ্যে দুর্গম এলাকার ৪১৪টি কেন্দ্রে গতকাল রাতেই ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। বাকি ৭ হাজার ৩৬টি কেন্দ্রে আজ ভোরেই এসব সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি মোতায়েন থাকবে ২৯৯ প্লাটুন। ভোটকেন্দ্রে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ২৯ হাজার ৯৫৮ জন, মোবাইল টিমে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৭ হাজার ৭৯৪ জন, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ সদস্য থাকবেন ৩ হাজার ৩৬৪ জন। সব মিলিয়ে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন ৫৯ হাজার ২১৯ জন। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র্যাবের ২৩০টি টিম থাকবে। ভোটকেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আনসার সদস্য থাকবেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৬৯ জন। নির্বাচনে স্বাভাবিক এলাকার ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার, দফাদারসহ ১৭ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-১৯ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। বিশেষ এলাকার (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০-২১ জন সদস্য দায়িত্বে থাকবেন।
তপশিল ঘোষণার পরদিন থেকে ভোট গ্রহণের তিন দিন পূর্ব পর্যন্ত আচরণবিধি প্রতিপালন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রতিরোধে প্রতি উপজেলার জন্য একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভোট গ্রহণের তিন দিন আগে থেকে ভোট গ্রহণের পরের দিন পর্যন্ত প্রতি তিনটি ইউনিয়নে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০টি উপজেলায় অতিরিক্ত ২৯ প্লাটুন বিজিবি, ১৮টিম র্যাব, ১৯২ জন আনসার ও ৬৩ জন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল রাত ১২টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত বোট (নির্দিষ্ট রুটে চলাচলকারী ছাড়া) অন্যান্য যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় ভোট গ্রহণের দুদিন আগে থেকে ভোট গ্রহণের পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয়। এসব উপজেলায় গড়ে ভোট পড়ে প্রায় ৩৬ শতাংশ। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩৮ শতাংশ। প্রথম ধাপের রেকর্ড সংখ্যক কম ভোটের পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। এর পেছনে কৃষকদের ধানকাটা, বৃষ্টিসহ পাঁচটি কারণকে দায়ী করে পরের ধাপে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশাবাদী ছিল ইসি। কিন্তু পরের ধাপেও কাঙ্ক্ষিত ভোটার উপস্থিতি না হওয়ায় বিএনপির বর্জনকেই মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ইসি সূত্র জানায়, রিমালের প্রভাবে সারা দেশেই কমবেশি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজমান। অনেক এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতিতে খানিকটা বিঘ্ন ঘটছে।
রিমালের তাণ্ডবে অনেক এলাকা এখনো বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন। ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর এ ধাপে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করে ভোটের হার বাড়ানো আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়েছে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। অন্যদিকে বিএনপির অল্প কিছু নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়লেও, দলটি উপজেলা পরিষদের ভোট বর্জন করেছে।
তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ৩ হাজার ২৭৭ পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ১৫টি পর্যবেক্ষক সংস্থার কেন্দ্রীয়ভাবে ২২৯ জন ও স্থানীয়ভাবে ৩ হাজার ৪৮ পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।