জুয়া খেলা এখন বাসা বেঁধেছে মানুষের হাতে আর পকেটে পকেটে। অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে, যা নিয়ে মাতোয়ারা থাকতেন জুয়াড়িরা, সেটিই এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে উঠেছে সমাজে। ডিজিটাল উৎকর্ষে ভর করে স্মার্টফোনের মাধ্যমে জুয়া এখন পরিচিত ‘বেটিং সাইট’ বা ‘ক্যাসিনো গেম’ নামে। আর অনলাইনে জুয়ার এই সামাজিক ব্যাধি সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিশেষ করে যুবসমাজের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে নেওয়া হচ্ছে প্রতারণার আশ্রয়। প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে ক্রীড়া, শোবিজ এবং সোশ্যাল মিডিয়া জগতের তারকাদের তরাকাখ্যাতি ব্যবহার করে বানানো হচ্ছে ভুয়া বিজ্ঞাপন, যা দেখে আকৃষ্ট হচ্ছে যুবসমাজ। ভয়ানক এই নেশায় তারা ঝুঁকে পড়ছেন প্রতারকদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে নামিদামি তারকাদের চেহারা ও কণ্ঠস্বর নকল করে তৈরি হচ্ছে জুয়ার বিজ্ঞাপন। সাধারণ মানুষের কাছে সেসব বিজ্ঞাপন পৌঁছে যাচ্ছে ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া অথবা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস সেবাদাতাদের (আইএসপি) ফাইল ট্রান্সফার প্রটোকল (এফটিপি) সার্ভারের ভিডিওর মাধ্যমে। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা থেকে শুরু করে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, অভিনেত্রী জয়া আহসান, নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, মডেল বারিশা হক, গায়িকা পড়শিসহ কে নেই জুয়ার বিজ্ঞাপনে! এসব থেকে প্রতিকার পেতে খোদ তারকারাও আহ্বান জানিয়েছেন। তারা এ ঘটনায় সামাজিকভাবে বিব্রত হচ্ছেন বলে মনে করেন। অথচ যুবসমাজ ধ্বংসকারী সর্বনাশা এই জুয়া বন্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা চোখে পড়ে না বলে বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন।
জুয়ার বিজ্ঞাপনে এআই
সাম্প্রতিক সম্পূর্ণ ভিন্ন উপায় অবলম্বন করছে জুয়াড়ি চক্র। এআইর মতো ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে কনটেন্ট। কনটেন্টগুলো এমনভাবে তৈরি হচ্ছে, যেন সাধারণভাবে মনে হবে তারকারা সত্যিকার অর্থেই জুয়া ও প্ল্যাটফর্মের প্রচার করছেন। এসব কনটেন্টে তারকাদের মুখাবয়ব তথা চেহারা, কণ্ঠস্বর, অভিব্যক্তি বাস্তবের মতো ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। আর এসব বিজ্ঞাপনে ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। গত এপ্রিলে ঢাকাভিত্তিক ফ্যাক্টচেক সংস্থা ডিসমিসল্যাবের এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে প্রচারিত জুয়ার বিজ্ঞাপনে বছরে ব্যয় হয় অন্তত ১৫ কোটি টাকা। ফেসবুকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটায় বাংলাদেশের জন্য এক দিনে সর্বোচ্চ ৪ হাজার জুয়ার বিজ্ঞাপন শনাক্ত করেছে ডিসমিসল্যাব। শুধু বাংলা ‘কি-ওয়ার্ড’ সার্চ করে এই বিজ্ঞাপনগুলো পাওয়া যায়। সংস্থাটির ধারণা, ইংরেজি কি-ওয়ার্ডে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ কিংবা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মতো খেলার আসরে জুয়ার বিজ্ঞাপন বেড়ে যায়। এই সময়ে জুয়ার সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততাও বৃদ্ধি পায়।
জুয়ার বিজ্ঞাপনে অর্থের পরিমাণ ও ধরন
মেটার ‘অ্যাডস লাইব্রেরি’ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিজ্ঞাপনের জন্য তৈরি বিভিন্ন পোস্টে তারকাদের ‘ডিপফেক’ ছবি এবং ভিডিও ব্যবহৃত হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’ সাকিব আল হাসানের ছবি ও ভিডিও। সঙ্গে আছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস, গায়িকা সাবরিনা পড়শি। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে জুয়ার সাইটকে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য করতে কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে টেলিভিশন সংবাদের আঙ্গিকে। মূল ধারার গণমাধ্যমের লোগো ব্যবহার করে সংবাদ পাঠিকা দিয়ে সংবাদ পড়িয়ে কনটেন্ট উপস্থাপন করা হচ্ছে। সংবাদ পাঠিকার ভিডিও তৈরি হয়েছে ডিপফেক এবং এআই দিয়ে। একটি কনটেন্টে দেখা যায়, সংবাদ পাঠিকা বলছেন, সাকিব আল হাসান ‘টাইম ক্রেজি’ নামক একটি জুয়ার প্ল্যাটফর্মে সামান্য বিনিয়োগেই মোটা অঙ্কের অর্থ জিতেছেন। সেই ভিডিওতে সাকিব আল হাসানের এআই রূপ অন্যদেরও সেখানে বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছেন। ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে মুশফিকুর রহিমের এআই রূপ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে বলছেন, তার বন্ধু ‘সাহিব আল হাসান’ নতুন অ্যাপ ‘ব্যাঙ্গার’ চালু করেছেন। মুশফিক নিজেও এক সপ্তাহের বেশি সময় এই অ্যাপ ব্যবহার করেন এবং এটি নিরাপদ বলে দাবি করছেন। অনেক খেলোয়াড় মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে শুরু করে ৫০ থেকে ১০০ গুণ বেশি অর্থ আয় করে বাবা-মায়ের জন্য বাড়ি-গাড়ি কিনেছেন। ৪২ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে সাকিব আল হাসানের এআই রূপ বলছে, বড়লোক হওয়ার জন্য ‘ব্যাঙ্গার’ অ্যাপ ডাউনলোড করুন। গ্লোরি লাইফ নামে একটি জুয়ার প্ল্যাটফর্মের প্রচারণার ছবিতে রয়েছে গায়িকা সাবরিনা পড়শির ছবি। চলতি বছরের শুরুতে ‘বাবু৮৮’ নামক একটি জুয়ার প্ল্যাটফর্মের শুভেচ্ছাদূত হয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন নায়িকা অপু বিশ্বাস। তবে সেটিকে ডিপফেক ভিডিও বলে দাবি করেছিলেন তিনি। নিজের ভিডিওতে সরাসরি জুয়ার সাইটের প্রমোশন করেছিলেন মডেল ও ব্র্যান্ড প্রমোটার পরিচয় দেওয়া বারিশা হক। কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর সেগুলো সরিয়েছেন তিনি। এসব ছবি ও ভিডিওতে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে অর্থ প্রাপ্তির ভুয়া তথ্যও দেখানো হয়।
সম্প্রতি ব্যাংকিং ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করে সেগুলোকে ভুয়া হিসেবে শনাক্ত করেছে ডিসমিসল্যাব। একটি টিভির লোগো ব্যবহৃত সাকিব আল হাসানকে নিয়ে জুয়ার সাইট প্রচারণায় ভিডিও বিশ্লেষণে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সংবাদে যে সংবাদ পাঠিকা রয়েছেন, তিনি ভারতের জি-নিউজের সাংবাদিক শোভনা ইয়াদাভ। গত ৫ মার্চ সাংবাদিক শোভনার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এ টিভি-শো থেকে তার অংশটুকু নেওয়া হয় এআইর মাধ্যমে ডিপফেক ভিডিও তৈরির জন্য। সাকিব আল হাসানের ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও তৈরি হয়েছে পাকিস্তানি গেমার ও ইউটিউবার সাদ উর রহমানের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট থেকে। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল সাকিব আল হাসানের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত একটি ভিডিও থেকেও তার অংশ ব্যবহৃত হয়েছে ডিপফেক কনটেন্ট তৈরিতে। তামিম ইকবালের একটি ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদেশ থেকে বাংলাদেশে অর্থ পাঠানোর একটি বৈধ প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞাপন থেকে তামিমের ফুটেজ নেওয়া হয়। মুশফিকুর রহিমের ভিডিও তৈরি হয়েছে বিদেশি একটি ব্যাংকের বিজ্ঞাপন থেকে।
যেভাবে তৈরি হয় ডিপফেক এআই কনটেন্ট
বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে এমন ডিপফেক ভিডিও তৈরি হয় বলে জানান সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ আল জাবের। প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে জাবের বলেন, এআই কনটেন্ট তৈরির প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট কমান্ড দিলে, টেক্সট দিলে সেটার অডিও পাওয়া যায়। অডিওতে কণ্ঠস্বর কেমন হবে, সেটাও এআই ঠিক করতে পারে। কোনো জায়গা থেকে কারও ‘ভয়েস’ দেওয়া হলে এআই সেই ‘টিউন’ কপি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়েও এর আগে এমন ডিপফেক তৈরি করে টুইটারে প্রকাশ করা হয়েছিল। সাধারণত ফ্রি, ট্রায়াল এবং প্রিমিয়াম—তিন ধরনের এমন কনটেন্ট বানানো যায়, তবে অপরাধীরা প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নিয়েই সেগুলো বানায়, কারণ সেখানে বেশি ফিচার থাকে। ‘সিনথেশিয়া’, ‘রানওয়ে’-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এ ধরনের উদ্দেশ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।
ফেসবুকের দায়বদ্ধতা ও তারকাদের করণীয়
এআই কনটেন্টে নির্মিত এসব বিজ্ঞাপন প্রচারে ফেসবুকের মতো বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দায়বদ্ধতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। সম্প্রতি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব এবং লিঙ্কড ইনের মতো প্ল্যাটফর্মে কিছু পোস্ট করা হলে, সেটি এআই তৈরিকৃত কনটেন্ট কি না, সে বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার সুবিধা চালু হয়েছে। তবে বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে এমন সুবিধা এখনো নেই। বাংলাদেশে মেটার বিজ্ঞাপনী সংস্থা এইচটিটিপুলের পার্টনার ডিরেক্টর মুনাফ মুজিব চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, এআই নিয়ে এ ধরনের বিষয়গুলো এখনো গবেষণা এবং ‘টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল’-এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিজ্ঞাপনে এআই জেনারেটেড কনটেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সেটা প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য শনাক্ত করা কঠিন। ব্যবহারকারীরা যদি এ ধরনের কনটেন্ট ‘রিপোর্ট’ করেন, তা হলে কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। রিপোর্ট করা হলে সেটি কনটেন্ট রিভিউ টিমের কাছে যাবে। যেমন বাংলাদেশে প্রচারিত এ ধরনের বিজ্ঞাপনে অত্র অঞ্চলের ব্যবহারকারীদের থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রিপোর্ট হলে কনটেন্ট রিভিউ টিমের সেটাকে গুরুত্ব দিয়েই দেখার কথা।
এসব ক্ষেত্রে তারকাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মুনাফ মুজিব বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনার জন্য তারকাদের সাধারণত একটি টিম থাকে। সেই টিম থেকে বা নিজেদেরও নজরে এলে তারা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মকে অবগত করতে পারে। আর আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, সাধারণ মানুষ সাধারণ চোখে বুঝবে না যে এটা ডিপফেক। তারা তারকাদের ছবি বা ভিডিও দেখে সেটাকে সত্য বলেই মনে করবেন। এজন্য তারকারাও ন্যূনতমভাবে স্থানীয় থানায় একটি জিডি করতে পারেন। নিজেদের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকে উন্মুক্ত ঘোষণাও দিতে পারেন যে, তারা এগুলোর সঙ্গে যুক্ত নন।
সামাজিক অবক্ষয়
পরিবারের একজন সদস্যের জুয়ার আসক্তিতে পুরো পরিবার ধ্বংস হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে পুরো সমাজের অবক্ষয়ে রূপ নিতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, প্রথমত, অতীতেও সমাজের একটি অংশ জুয়ায় আসক্ত ছিল, বর্তমানেও একটি অংশ ডিজিটাল মাধ্যমে নতুনরূপে আসক্ত হচ্ছে। মূল ধারার সমাজে তাদের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। দ্বিতীয়ত, অনলাইন জুয়াকে এই জগতের বিচ্যুত আচরণ হিসেবে দেখি। তবে এ ধরনের আচরণকে প্রশ্রয় না দেওয়াই সংযত। কারণ এখান থেকে অনেক সময় ‘ক্রাইমের’ জন্ম হয়। সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী এটাকে বড় পর্যায়ে নিয়ে অন্যের ক্ষতি করে, প্রতারণা করে, তখন সেটি বড় ধরনের অপরাধ। এতে গোটা একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে সমাজেরই প্রচেষ্টা থাকতে হবে।
জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মাধ্যমে
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান তথা আইএসপিগুলো সাধারণত গ্রাহকদের জন্য ‘ফাইল ট্রান্সফার প্রটোকল’ সুবিধা দিয়ে থাকে। এই সুবিধায় ব্যবহারকারীরা নিজস্ব আইএসপির সার্ভার থেকে গান, চলচ্চিত্র, নাটক, সফটওয়্যার এবং গেমসের মতো ডিজিটাল কনটেন্ট দেখতে কিংবা ডাউনলোড করতে পারেন। কালবেলার অনুসন্ধানে এফটিপি সার্ভারগুলোতে প্রচারিত কনটেন্টে জুয়ার বিজ্ঞাপনের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। বিশেষ করে বিদেশি চলচ্চিত্রে সরাসরি বিজ্ঞাপনের ‘ওভিসি’ বা অনলাইন ভিডিও কমার্শিয়াল এবং লোগো সংযোজনের মাধ্যমে জুয়ার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ‘আই’ আদ্যাক্ষর যুক্তসহ দেশের দুটি বৃহৎ আইএসপি প্রতিষ্ঠানের এফটিপি সার্ভারের কনটেন্টে এমনটা দেখা যায়। এফটিপি সার্ভারে শুধু ব্যবহারকারীদের প্রবেশাধিকার থাকায় বড় পরিসরে অন্যান্য আইএসপি প্রতিষ্ঠানে কনটেন্ট যাচাই করা যায়নি।
এআইসহ সব ধরনের জুয়ার প্রচারণায় সাইবার পুলিশের তদারকি রয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার অপরাধ বিভাগের পুলিশ সুপার (এডিসি) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। কালবেলাকে নাজমুল বলেন, অনলাইন বেটিং নিয়ে সাইবার পুলিশ সতর্ক রয়েছে। শুধু এআই না; বরং সব ধরনের অনলাইন জুয়ার প্রচারণা আমাদের নজরে এলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারও অনুমতি ছাড়া তার পরিচয় ব্যবহার করে এ ধরনের কনটেন্ট করা হলে সেটা সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৪ ধারার লঙ্ঘন। আমাদের আহ্বান থাকবে এ ধরনের কেউ ভুক্তভোগী থাকলে বিষয়টি যেন পুলিশকে জানায়। আমরা নিয়মিত তদারকি করি, পাশাপাশি ভুক্তভোগীরাও আমাদের জানাতে পারেন।
যা বললেন তারকারা
মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার মিডিয়া ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। মিডিয়া ম্যানেজার কালবেলাকে বলেন, মুশফিককে যারা চেনেন তারা বিব্রত হচ্ছেন। প্রযুক্তির এমন অপব্যবহার ঠেকাতে দায়িত্বশীলরা নিশ্চয় কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করেন মুশফিক। একইসঙ্গে এমন প্রচারণায় বিশ্বাস না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন এই ক্রিকেট তারকা।
জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল কালবেলাকে বলেন, বলবো না এমন প্রস্তাব আমি পাইনি, এখনও প্রস্তাব আসে। কখনই এসবের সঙ্গে নিজেকে জড়াবো না। আমি চাইবো, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থা বা ব্যক্তি এসবকাজে জড়িতদের নিয়ন্ত্রণে আনবেন।
অভিনেত্রী জয়া আহসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস বলেছেন, তারকাদের ব্যবহার করে এ ধরনের কর্মকাণ্ড যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি এর সুষ্ঠু প্রতিকার চান।