জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৪, ০২:১৬ এএম
আপডেট : ১৫ মে ২০২৪, ০৭:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনীতির আলোচনায় ডোনাল্ড লুর সফর

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক
রাজনীতির আলোচনায় ডোনাল্ড লুর সফর

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর থেকেই আলোচনায় ডোনাল্ড লু। দেশটির রাজনৈতিক পালাবদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হাত ছিল বলে অনেকে মনে করেন। সেই থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় লুর তৎপরতার দিকে গভীর দৃষ্টি রাখছেন অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। গত বছর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন এই কর্তার কয়েক দফা ঢাকা সফর রাজনীতি ও কূটনীতিতে আলোচনার শীর্ষে ছিল। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তার এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দৌড়ঝাঁপ ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ইস্যুতেও আলোচনায় ছিল লুর নাম। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আরেকবার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এর পাঁচ মাস পর সেই ডোনাল্ড লু যখন আবার ঢাকায় পা রেখেছেন, তখন তাকে ঘিরে রাজনীতিতে চলছে নতুন গুঞ্জন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, লুকে সরকার দাওয়াত করে আনেনি। তার প্রয়োজনেই তিনি এসেছেন, তাদের এজেন্ডা আছে।

অন্যদিকে বিএনপির ভাষ্য, এই সফরকে তারা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কারণ তারা বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে আন্দোলন করেন না।

বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে দুই দলই বোঝাতে চাইছে, লুর এবারের সফরকে কেউ-ই পাত্তা দিচ্ছে না। যদিও মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে বিশ্লেষকরা গুরুত্বপূর্ণই মনে করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ বদরুল হাসান কালবেলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী একটি দেশ। জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে তাদের একরকম অবস্থান থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মনোভাবের পরিবর্তন ঘটেছে। তারা এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। এরই মধ্যে জো বাইডেনের চিঠি এবং তাদের কূটনীতিকদের কথাবার্তায় সেটি উঠে এসেছে। সেজন্য এবারের সফর বিরোধীদের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও ক্ষমতাসীনদের জন্য রাজনৈতিকভাবে অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ।’

দুই দিনের সফরে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমবার ঢাকা সফরে এলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা। তার এ সফরকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে কয়েকদিন ধরে ব্যাপক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনের পর মার্কিন সরকারের কোন বার্তা নিয়ে লু ঢাকা এসেছেন, তা নিয়েই কৌতূহল কাজ করছে নানা মহলে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে বাহাস চলছে। এই সফর নিয়ে জনগণের মধ্যেও নানা আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। হিসাবনিকাশ চলছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে। মার্কিন সরকারের এ প্রতিনিধির সফরকালে বাংলাদেশ কী পাবে, সরকার কতটুকু আদায় করতে পারবে, যুক্তরাষ্ট্র কী দেনদরবার করবে অথবা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোন কোন বিষয় উঠে আসবে, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

জানা গেছে, ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে ডোনাল্ড লু ব্যবসা-বাণিজ্য, শ্রম অধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা ইস্যু, প্রতিরক্ষাসহ নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা করবেন। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ইস্যুকে অগ্রাধিকার দিয়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি সামনে আনা হবে। এ ছাড়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা অব্যাহত রাখবে ওয়াশিংটন। আর সরকারের তরফ থেকে ভিসা নীতি ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা তোলা হবে।

রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অনেকের মনেই প্রশ্ন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে যেই লু বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সংলাপে বসার জন্য চিঠি দিয়েছেন, নির্বাচনের পর সেই লু কি শুধুই নির্দিষ্ট এজেন্ডার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন? নাকি নতুন করে আবারও রাজনৈতিক বিষয় সামনে আনবেন? বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

নির্বাচনের আগে দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ নিয়ে তৎপর থাকতে দেখা গেছে। বিএনপি নেতারাও ইউরোপ-আমেরিকার কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রায়ই আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। যদিও লুর এবারের সফরের আগে বিএনপি নেতারা বলছেন, বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে আন্দোলন করে না তাদের দল। সেজন্য গণতন্ত্র রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

গত সোমবার সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড লু’র সফর নিয়ে কিছুই ভাবছে না দল। তার আসায় আমাদের কিছু আসে যায় না। আমাদের কাছে তার সফরটা এত গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করেছে।’

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, ‘কে এলো আর কে গেল, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই।’

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, ডোনাল্ড লুর সফর ঘিরে নির্বাচনের আগে যে ধরনের আবহ ছিল, এখন তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। পুরোপুরি স্থিতিশীল একটি সরকার। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সব দেশ এখন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তাই সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতেই এ সফর।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ডোনাল্ড লুকে নিয়ে বাংলাদেশে এত মাতামাতি কেন! তার প্রয়োজনে তিনি এসেছেন, তাদের এজেন্ডা আছে। সম্পর্ক যখন থাকে, সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকে। সেটা তারা করতে এসেছেন, আমরা দাওয়াত করে কাউকে আনছি না।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের স্যাংশন, ভিসা নীতি এগুলো কেয়ার করি না।

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশ সরব অবস্থানে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভোট শেষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ওয়াশিংটন জানায়, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। পরে ভোট নিয়ে নিজেদের অনঢ় অবস্থানের জানান দিলেও বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানান ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রও বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলনে একই বার্তা দেন। তবে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠিতে। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী তার সরকার।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা গেছেন

ময়মনসিংহে মায়ের হাতে মেয়ে খুন

কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না : সুলতান সালাউদ্দিন টুকু

টিসিবির পণ্যসহ আটক বিএনপির সেই সভাপতিকে অব্যাহতি

বাংলা ভাষাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র মর্যাদা দিল ভারত

রাজশাহী মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

শেরপুরে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে বিজিবি

চট্টগ্রামে ফের তেলের ট্যাংকারে ভয়াবহ আগুন

আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চায় বাংলাদেশ

খুলনায় সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৪ নেতাকে বহিষ্কার

১০

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ৫ পরিচালকের যোগদান

১১

দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুর, বাকেরগঞ্জ থানার ওসি প্রত্যাহার

১২

আন্দোলনে নিহত ৩ যুবকের মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ

১৩

মালয়েশিয়ায় আরও জনশক্তি পাঠাতে সহযোগিতা চাইলেন রাষ্ট্রপতি

১৪

সিলেটে পিকআপ চাপায় প্রাণ গেল পুলিশ কর্মকর্তার

১৫

খুলনায় বিএনপির সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৫

১৬

চবির হলে আসন বরাদ্দে বৈষম্য, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

১৭

মসজিদে তালা দিয়ে দোকানে দুর্বৃত্তের হামলা

১৮

‘নারী অধিকার কমিশন’ গঠনের দাবিতে সংহতি সমাবেশ

১৯

দলীয়করণমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন গড়তে চাই : আমিনুল হক

২০
X