বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে সংঘর্ষ ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবারের এসব ঘটনায় সাত জেলায় ১২ মামলায় ৯০০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে। এসব মামলায় এরই মধ্যে দলটির বেশকিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা। কালবেলা নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
অগ্নিসংযোগ ও বাঙলা কলেজে ভাঙচুরে ২ মামলা: রাজধানীর মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও কলেজ গেটে ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। এতে ওই এলাকার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২২৭ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলা দুটিতে অজ্ঞাতপরিচয়ে আরও এক হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দারুস সালাম থানায় ওই মামলা হয়।
মোটরসাইকেল পোড়ানো মামলার বাদী মোটরসাইকেলের মালিক বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী রুবেল হোসেন। তিনি ছাত্রলীগের কর্মী। তার মামলায় ১২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে কলেজ গেট ও ভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করেছেন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্টাফ মহিদুর রহমান। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা কলেজের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ইটপাটকেল ও লাঠিসোটা দিয়ে বিভিন্ন ভবনের কাচের জানালা ভাঙচুর করে। ওই মামলায় ১০৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মফিজুর রহমান পলাশ কালবেলাকে বলেন, মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আটজন এবং কলেজে ভাঙচুরে জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। দারুস সালাম থানার ওসি শেখ আমিনুল বাশার জানান, ১৮ আসামিকে বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়া বিএনপির সম্পাদকসহ গ্রেপ্তার ৫: বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় সদর থানায় তিনটি ও দুপচাঁচিয়ায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সদর থানার মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনাসহ পৃথক চার মামলায় দলটি ২১১ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে মামলাগুলো করা হয়।
এদিকে মামলার পর রাত ৩টার দিকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) অভিযান চালিয়ে বগুড়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাজেদুর রহমান জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া দুপচাঁচিয়া থানার মামলায় গ্রেপ্তার হন আরও তিনজন। তারা হলেন আদমদীঘি থানা যুবদলের সদস্য রাজু আহম্মেদ, ছতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য তামিম হোসেন ও বিএনপি কর্মী আবু বক্কর।
বগুড়া জেলা পুলিশের গণমাধ্যমের মুখপাত্র ও সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরাফত ইসলাম মামলা ও পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ককটেল বিস্ফোরণ ও পরিবহন ভাঙচুরের ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। ওই মামলাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।
ফেনীতে আসামি ২ সহস্রাধিক: ফেনীতে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার ফেনী মডেল থানার এসআই হায়াত উল্লাহ বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইন ও পুলিশের কর্তব্যরত কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় এ মামলা করেন। এসব মামলায় ফেনী বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার ও সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালসহ বিএনপি-যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষস্থানীয় ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে দেড় থেকে ২ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ও ট্রাঙ্ক রোডে নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা পুলিশ ও পথচারীদের গাড়ি ভাঙচুর করে।
মামলার প্রতিক্রিয়ায় আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ও ছাত্রলীগ অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। আবার এখন মামলাও হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে।
জয়পুরহাটে পুলিশ ও ছাত্রলীগ সভাপতির মামলা: জয়পুরহাটে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া হোসেন রাজা বাদী হয়ে ১৫০ জনের নামে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জয়পুরহাট সদর থানায় এ মামলা করা হয়। সদর থানার ওসি হুমায়ন কবীর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া পুলিশের মামলায় সদর উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলীম ও ছাত্রদলের কর্মী মারজান হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
খাগড়াছড়িতে বিএনপির ১৫৭ নেতাকর্মীর নামে মামলা: খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষ চলাকালে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের ১৫৭ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার এসআই মিনহাজুল আবেদিন বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ৬০০ থেকে ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ্যোগ্য আসামিরা হলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি প্রবীণ চন্দ্র চাকমা, সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক মিন্টু ও খাগড়াছড়ি পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুর রব রাজা।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানা পুলিশের ওসি আরিফুর রহমান জানান, এরই মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কিশোরগঞ্জে আসামি ৮৯ জন: কিশোরগঞ্জে পদযাত্রা থেকে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে সদর মডেল থানার এসআই ফজলুর রহমান বাদী হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৬০ থেকে ৭০ জনের আসামি করে মামলাটি করেন।
সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এজাহারে জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আবু নাসের সুমন ও জেলা যুব দলের সাংগঠনিক সম্পাদক তারেকুজ্জামান পার্নেলসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা রয়েছে। এ ছাড়া অন্যরা হলেন নাজমুল আলম, আমিনুল ইসলাম আশফাক, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, মারুফ মিয়া, সাইদুর রহমান, জুবায়ের ইসলাম, বাছির উদ্দিন রিপন, দেলোয়ার হোসেন দিলু, হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া আলো, রাফিউল হোসেন নৌশাদ, আলামিন ভূঁইয়া, তাকবির উদ্দিন রাকিব, জাকির হোসেন রাজিব, তরিক মোমেন, শওকত হোসেন, অ্যাডভোকেট শাহারিয়া মুসা তান্না।
পিরোজপুরে আসামি ৩৮০, গ্রেপ্তার ১৫: পিরোজপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে পুলিশের ওপর হামলায় বিএনপির ৩৮০ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে পিরোজপুর সদর থানার এসআই মাকসুদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানান পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হাসান। পুলিশ এ ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। মামলায় পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন ও সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলুসহ নামীয় ৮০ জন এবং অজ্ঞাত ২০০ থেকে ৩০০ বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন জানান, পুলিশ জেলা বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় লাঠিচার্জ করেছে। এতে তাদের ১০ থেকে ১২ নেতাকর্মী আহত হন।
মন্তব্য করুন