রাফসান জানি
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৪, ০৩:১৮ এএম
আপডেট : ১১ মে ২০২৪, ০৭:২৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বন্ধের পথে পুলিশের ডোপ টেস্ট

শুদ্ধি অভিযান
বন্ধের পথে পুলিশের ডোপ টেস্ট

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদস্যদের মাদকমুক্ত রাখতে ২০২০ সালে শুরু হয় ডোপ টেস্ট বা মাদক শনাক্তকরণ কার্যক্রম। এতে প্রথম বছরেই ১২০ পুলিশ সদস্যের শরীরে মাদকের উপস্থিতি মেলে। অবশ্য পরের তিন বছরে মাদক গ্রহণ করেন—এমন পুলিশ সদস্য শনাক্ত হন মাত্র ১৪ জন। ডোপ টেস্ট শুরুর পর গত চার বছরে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৪ জনে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদক শনাক্তের পর শাস্তির মুখোমুখিও হতে হয় ওই পুলিশ সদস্যদের। তবে শনাক্ত কিংবা শাস্তি পাওয়া সবাই কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদমর্যাদার। কারণ উপরের পদের কেউ এ পরীক্ষার আওতায় আসেননি। এতে বাহিনীর ভেতরেই দাবি ওঠে ‘সবার জন্য সমান নিয়ম করার।’ কার্যত এ কারণেই পুলিশের ভালো উদ্যোগটি বন্ধের উপক্রম।

পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত নন-ক্যাডার হলেও এএসপি থেকে তার উপরের কর্মকর্তারা বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা। তবে নন-ক্যাডার থেকে পদোন্নতি পেয়েও কেউ কেউ এএসপি বা এডিশনাল এসপি পর্যন্ত হন।

পুলিশের নন-ক্যাডার সদস্যদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ডোপ টেস্ট চালুর পর শুধু নন-ক্যাডারদের তালিকা করে পরীক্ষা করা হয়েছে। রহস্যজনকভাবে ক্যাডার সদস্যদের নাম আসছে না সে তালিকায়। তাদের দাবি, সব পুলিশ সদস্যের জন্যই যেন এক নিয়মে চলে। এক বাহিনীতে দ্বৈত নিয়ম যেন না হয়।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানা প্রতিবন্ধকতায় এএসপি থেকে তার উপরের কর্মকর্তাদের ডোপ টেস্ট না হওয়ায় নিচের পদের সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। এ নিয়ে বাহিনীর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কয়েক দফা কথাও বলেছেন। মূলত তারপর থেকেই ডোপ টেস্টের গতি রহস্যজনকভাবে কমে আসে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, ডোপ টেস্ট কি তাহলে বন্ধের পথে? ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরের উপকমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ডোপ টেস্ট বন্ধ হয়নি। ইতোমধ্যে বরখাস্ত হয়েছেন ১২৪ জন। চাকরি হারানোর ভয়ে ডিএমপির সদস্যদের মাদক গ্রহণের হার কমেছে। যে কারণে সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত পাওয়া যাচ্ছে কম, শনাক্তও হচ্ছে কম। এ ছাড়া ডোপ টেস্ট সব পর্যায়ে না হওয়ায় একটি পক্ষের অসন্তোষ তো রয়েছেই। এসব কারণে কার্যক্রমটি গতি পাচ্ছে না।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালের মার্চে ডিএমপিতে ডোপ টেস্ট শুরুর ঘোষণা আসে। প্রথম বছর তা চলেও জোরেশোরে। ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্য শনাক্ত হন ১২০ জন। ২০২৩ সালে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৬-এ। যার মধ্যে ৯৮ জনই কনস্টেবল, আটজন নায়েক, সাতজন এএসআই, এসআই ১১ জন, একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট ও একজন পরিদর্শক। কিন্তু পরবর্তী ১৪ মাসে শনাক্ত হন মাত্র আটজন।

ডিএমপি সদর দপ্তর জানায়, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত ১৩৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বরখাস্ত হয়েছেন ১২৪ জন। একজন মারা গেছেন এবং একজন অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে। দুজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অন্য ছয়জনের বিরুদ্ধেও পদাবনতিসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে রাজারবাগ ব্যারাকে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও ব্যবসায় জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। এ প্রেক্ষিতে রাজারবাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ডিএমপি সদর দপ্তরের এক গোপন প্রতিবেদন পাঠায়। এ ভিত্তিতে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশে মাদক নির্মূলে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি পরের বছর অবসরে যান। এরপর দায়িত্ব পান মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি ঘোষণা দিয়ে ডিএমপি সদস্যদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন। আর সে ঘোষণা আসে ২০২০ সালের ১০ মার্চ। এর পর থেকেই সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পরীক্ষা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

ডিএমপি সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, তৎকালীন কমিশনারের নির্দেশের প্রতিটি বিভাগে চিঠি দিয়ে সন্দেহভাজন মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যের তালিকা চাওয়া হয়। সে তালিকা কমিশনারের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ যাচাই-বাছাই করে সন্দেহভাজনকে পরীক্ষা করা হয়।

পুলিশের বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল কালবেলাকে বলেন, পুলিশের কেউ যদি মাদকাসক্ত বা শৃঙ্খলাবিরোধী ন্যূনতম অপরাধ করে, তাহলে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। এখানে কোনো র্যাঙ্ক বা কে কর্মকর্তা, তা দেখার সুযোগ নেই। শতভাগ নিশ্চিত হয়ে পুলিশের সদস্যদের ডোপ টেস্ট করানো হয়।

পুলিশকে মাদকমুক্ত রাখতে ডোপ টেস্টের এই উদ্যোগ অনন্য উল্লেখ করে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা কালবেলাকে বলেন, আমরাও চাই পুলিশ সদস্যরা মাদকমুক্ত থাকুক। কিন্তু বাহিনীতে এটি সবার জন্য সমান হতে হবে। ধরে ধরে কনস্টেবল, এএসআই, এসআই, ইন্সপেক্টরদের টেস্ট হবে, এটা কোনো নিয়ম হতে পারে না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতনদের দৃষ্টি আকর্ষণও করেছি। কেননা, ঊর্ধ্বতন কারও ডোপ টেস্ট হয়েছে—এমন কোনো তথ্য এখনো পাইনি।

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন নামের সংগঠনটি কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ডোপ টেস্টের বিরোধিতা কখনোই করা হয়নি। আইজিপি মহোদয়ের নির্দেশনা আছে—পুলিশে যাকে সন্দেহজনক মনে করা হবে, তার ডোপ টেস্ট হবে। সেটা টপ টু বটম। টেস্ট করে যার পজিটিভ আসবে, সে পুলিশে চাকরির যোগ্যতা হারাবে। পুলিশে মাদকাসক্তের কোনো স্থান নেই।

এ বিষয়ে ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, টেস্টের গতি কমেছে, তা সত্য। পুলিশে মাদকাসক্তদের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য কম আসছে। সন্দেহজনক কাউকে পাওয়া গেলে টেস্ট করা হয়। শুরুতে যেমন একসঙ্গে অনেকের টেস্ট হয়েছে, এখন এমনটা হচ্ছে না। যার বিরুদ্ধে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাদের টেস্ট হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অতীতে মাদকাসক্তের কারণে ক্যাডার কর্মকর্তাদেরও চাকরি চলে যাওয়ার রেকর্ড আছে। আসলে মাদক বা অন্যায়-অনিয়ম করলে পুলিশে চাকরির সুযোগ নেই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মসজিদ টার্গেট করে চালানো হচ্ছে বিমান হামলা

আর এক জয় দূরে মেসির মায়ামি!

নির্যাতনের তথ্য চেয়ে আ.লীগের বিশেষ বার্তা

পূজায় বুড়িমারীতে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে ৬ দিন

প্রতি সপ্তাহে সহায়তা দেবে জুলাই ফাউন্ডেশন : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

আন্দোলনে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি, সেই যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে যমুনা গ্রুপ

জনবল নেবে স্যামসাং বয়সসীমা  ২১ থেকে ২৮ বছর 

বায়ুদূষণে শীর্ষে হ্যানয়, ঢাকার খবর কী

সুস্থ থাকতে ভাত নাকি রুটি, কী বলছেন চিকিৎসক

১০

লিটনের শরীরে ৫ শতাধিক বুলেট

১১

সপ্তম রাউন্ডে জমে উঠেছে প্রিমিয়ার লিগের লড়াই

১২

পাচারের টাকায় আমিরাতে মিনি সিটি নিয়ে আসিফের স্ট্যাটাস

১৩

শেরপুরে ভয়াবহ বন্যায় ৭ জনের মৃত্যু

১৪

তিন বিভাগে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস গবেষকের

১৫

সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ জ্যোতির

১৬

১৩ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৭

ভারতীয় দলে আচমকা পরিবর্তন

১৮

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

১৯

৮ বিভাগেই বৃষ্টির পূর্বাভাস

২০
X