দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরকে বড় নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাঁচ দশক আগে একজন মা গড়ে ৬ থেকে ৭ জন সন্তান জন্ম দিতেন। সেই সংখ্যা কমিয়ে আনার নেপথ্যের কারিগর অধিদপ্তরের কর্মীরা। তাদের প্রচেষ্টায় পাঁচ দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে দীর্ঘদিনে অর্জিত সেই সাফল্য এখন হুমকির মুখে। চাহিদা অনুযায়ী উপকরণ না থাকায় পরিবার পরিকল্পনার সরকারি সেবা কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই সারা দেশে কনডম, মুখে খাওয়া বড়ি ও কিটের মারাত্মক সংকট চলছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের জনবল সংকট। প্রতিষ্ঠানটির মোট পদের প্রায় চার ভাগের এক ভাগই বর্তমানে শূন্য হয়ে আছে, যার সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি।
পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এক বছর ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের অস্থায়ী উপকরণ সামগ্রীর সরবরাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এসব উপকরণের মজুদ খুব সীমিত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি ইনজেকশন ও চলমান পদ্ধতির উপকরণ কনডম ও মুখে খাবার বড়ি এবং কিটের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে বাজারে বেসরকারি কোম্পানির বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে নিম্নবিত্ত দম্পতিদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং উপকরণ বিতরণের জন্য দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও তিনজন পরিবারকল্যাণ সহকারী দায়িত্ব পালন করেন। এই কর্মীদের সপ্তাহে চার দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে দম্পতিদের সঙ্গে আলোচনা ও সামগ্রী বিতরণ করার কথা। উপকরণ ঘাটতির কারণে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের অনেকেই নিয়মিত বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন না। আবার যারা যাচ্ছেন তারাও দম্পতিদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ কিংবা ঘাটতি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বাজার থেকে উপকরণ সংগ্রহের পরামর্শ দিচ্ছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক এক কর্মকর্তা জানান, শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদাসীনতা, কেনাকাটায় স্বেচ্ছাচারিতা এবং পরিকল্পনার অভাবে এই ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটতি এতই বেশি যে, গত ১৫ বছরে অধিদপ্তর এমন সংকটে পড়েনি। এর প্রভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারী দম্পতির মধ্যে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এই উপকরণের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে ব্যবহারকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাবে। এতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের পরিবারকল্যাণ সেবা ও মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন সরকারের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট (ইলেক্ট) অধ্যাপক ড. আবু জামিল ফয়সাল। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যক্রম এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ও লোকবল সংকট দীর্ঘদিনের। যারা সরকারি সরবরাহের জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করতেন, তারা যদি এখন বিনামূল্যে উপকরণ না পান তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বেড়ে যেতে পারে। অনেকেই এই সন্তান রাখতে চাইবেন না। এজন্য অ্যাবরশন করাতে যাবেন। এতে মাতৃমৃত্যু হারও বাড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে। কিন্তু তার পরও দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সংকট মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। কেনাকাটায় ভূত তাড়াতে গিয়ে এখন কেনাকাটাও হচ্ছে না।’
কনডম-বড়ি-ইনজেকশন-কিটের সংকট:
সরকারের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টালে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সামগ্রীর মজুত কমে এসেছে। গত ১৮ এপ্রিল এই ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ৪১৮টি উপজেলা স্টোরে কোনো কনডম নেই। আরও ৬৮টি উপজেলায় শিগগিরই মজুতশূন্য হবে। ৭৭টি উপজেলা স্টোরে ‘সুখী’ ব্র্যান্ডের তৃতীয় প্রজন্মের খাবার বড়ি নেই। ১৬০টি উপজেলা স্টোরে এই উপকরণের মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ১৫১টি উপজেলা স্টোরে বড়ির মজুত শিগগিরই শূন্য হবে। ‘সুখী’ ব্র্যান্ডের দ্বিতীয় প্রজন্মের খাবার বড়ি নেই ৩৫৩টি উপজেলা স্টোরে। ৪৮টি উপজেলা স্টোরে শিগগিরই এই বড়ি শেষ হয়ে যাবে। আরও ২৬টি উপজেলা স্টোরে মজুত সর্বনিম্ন অবস্থায় আছে। ‘আপন’ ব্র্যান্ডের বড়ি নেই ১৭০টি উপজেলা স্টোরে। ১২৫টি উপজেলা স্টোরে দ্রুতই এর মজুত শূন্য হয়ে যাবে। আরও ৯৬টি উপজেলা স্টোরে মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ইনজেকশনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। দেশের ৪৭৬টি উপজেলা স্টোরে কোনো ইনজেকশন নেই। ১১টি উপজেলা স্টোরে এর মজুত শেষ পর্যায়ে।
মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন উপকরণের সমন্বয়ে তৈরি প্যাকেজ ‘ডিডিএস কিট’-এর ক্ষেত্রেও তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। দেশের ৪৪টি উপজেলা স্টোরে কোনো ডিডিএস কিট নেই। ৯০টি উপজেলার স্টোরে এই কিট শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আরও ২০০টি উপজেলা স্টোরে কিটের মজুত সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে।
স্বাভাবিক প্রসব সেবা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় সাধারণ ডেলিভারি কিট ৪৫০টি উপজেলা স্টোরে মজুত শেষ, ১১টি উপজেলা স্টোরে খুব দ্রুত মজুতশূন্য হবে এবং ১৪টি উপজেলা স্টোরে সর্বনিম্ন মজুত রয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটের পরিচালক মো. মতিউর রহমান সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ সামগ্রীর সংকট তৈরি হয়েছে সত্য। তবে সংকট মোকাবিলায় প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব উপকরণ সামগ্রীর সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কতদিন সময় লাগবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। উপকরণ কেনাকাটা অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এই সংকট কেটে যাবে।’
সারা দেশে ১১ হাজার ১৪৫টি পদ শূন্য:
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব বলছে, সারা দেশে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শক বা মাঠকর্মীর পদ খালি আছে ৪ হাজার ৩৩৪টি। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শকের কাজ তদারকি করেন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক। সারা দেশে এই পদ শূন্য আছে ৩৫০টি। ফলে সেসব এলাকায় মাঠকর্মীদের কাজের কোনো তদারকি নেই।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রশাসন বিভাগের সূত্র বলছে, কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে ৩২ ধরনের (ক্যাটাগরি) কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। তাদের মোট পদ ৪৮ হাজার ৮৭টি। এর মধ্যে বর্তমানে শূন্য আছে ১১ হাজার ১৪৫টি পদ। সেই হিসাবে মোট পদের ২৩ শতাংশ শূন্য রেখেই কাজ চালাচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট (ইলেক্ট) অধ্যাপক ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, তিনি বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লোকবল সংকটের কারণে সেবার মান এখন তলানিতে। যে লোকবল আছে, সেটা দিয়ে পরিপূর্ণভাবে সেবাও দেওয়া যাচ্ছে না। লোকবলের অভাবে সবার কাছে সেবা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এর প্রভাব পড়বে দেশের জনসংখ্যা ব্যবস্থার ওপর।’
সারা দেশে সংকটের চিত্র:
কালবেলার ঝিনাইদহ ব্যুরো জানায়, জেলায় জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ সরবরাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এর প্রভাবে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের ওপর নির্ভরশীল নিম্ন আয়ের মানুষ ও গ্রামাঞ্চলের দম্পতিদের মধ্যে পদ্ধতি ব্যবহারে অনীহা বাড়ছে।
জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ফলসী ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পারবতী বালা জানান, তার ইউনিয়নে দুই হাজার ৮৫৭ দম্পতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। সরবরাহ ঘাটতি থাকায় এ মুহূর্তে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সামগ্রী সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
একই তথ্য জানান জোড়াদাহ ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ইমরুল কায়েস।
সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানিয়া আক্তার তৃপ্তি বলেন, ‘দম্পতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন ব্যবস্থার বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। দম্পতিরা তাদের সুবিধামতো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ মুহূর্তে উপকরণের স্বল্পতা রয়েছে।’
তিনি অবশ্য মনে করেন, মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। ঘাটতির সময়ে তারা বাইরে থেকে উপকরণ সংগ্রহ করে পদ্ধতি ব্যবহার চলমান রাখবেন।
ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের উপপরিচালক মোজাম্মেল করিম জানান, সরকারিভাবে উপকরণ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় যাতে পদ্ধতি ব্যবহারে কারও মধ্যে অনীহা সৃষ্টি না হয় সেজন্য জেলার ৬টি পৌরসভা ও ৬৭টি ইউনিয়নের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।’
জেলার সিভিল সার্জন শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, ‘মানুষ এখন অনেক সচেতন। মাঠকর্মীরা যদি সঠিকভাবে মানুষকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বোঝাতে পারেন তাহলে সংকটকালেও জন্মহার ধরে রাখা সম্ভব হবে।’
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার ৬টি উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আয়া পর্যন্ত ৭০৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ থাকলেও অর্ধেকের কম জনবল দিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সহকারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সহকারী পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাসহ (এমসিএইচ) মেডিকেল অফিসারের পদগুলো রয়েছে শূন্য। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শন, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও নিরাপত্তা প্রহরীসহ ১২টি পদে আরও ৩৬৪ জন লোকবল প্রয়োজন জেলাতে। এক প্রকার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই কার্যক্রম।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে অনেক স্বল্পতা রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা জনবল সংকট। সদর উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্য ৬৫ জন কর্মী প্রয়োজন। সেখানে কাজ করছে ৩৭ জন।’
তিনি জানান, ‘বতর্মান স্বল্প মেয়াদি পদ্ধতি মুখে খাওয়ার বড়ি, কনডম সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। শুধু দীর্ঘমেয়াদি কিছু উপকরণ সরবরাহ রয়েছে।’
এ বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালনা মো. আব্দুস সালাম (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার কিছুটা কম হলেও অন্যান্য জেলার তুলনায় সন্তোষজনক। তা ছাড়া পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব রয়েছে। জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জনবল ও উপকরণ সংকটের কারণে জেলায় জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দম্পতিরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপকরণ সংগ্রহ করে ব্যবহার করছেন। সেখানেও বিপত্তি, উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে শিল্প কারখানার শ্রমিকসহ স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি খরচের চাপ বেড়ে যাচ্ছে।
শহরের চাষাঢ়া এলাকার বাসিন্দা আবু আলিম বলেন, ‘দুজনে চাকরি করে সংসার চালাই। তার মধ্যে এসব জিনিসের (কনডম ও পিল) দাম বেড়ে গেছে। সরকারিভাবে যদি পাওয়া যেত তাহলে আমাদের মতো মানুষের উপকার হতো।’
নারায়ণগঞ্জ পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন শর্মা বলেন, ‘কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলমান রয়েছে। একটি জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণের স্বল্পতা রয়েছে। যখন এই উপকরণ কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহ করা হবে, আমরাও তখন ব্যবহারকারীদের সরবরাহ করতে পারব। এ ছাড়াও মাঠকর্মীর কিছুর স্বল্প রয়েছে।’
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, সদরসহ ছয় উপজেলায় সরকারি সরবরাহ থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ব্যবহার ও পদ্ধতি গ্রহণের চাহিদা বেড়েছে। তবে অস্থায়ী পদ্ধতি সামগ্রীর সরবরাহ সংকট রয়েছে। মাঠকর্মীরা এখন স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণে দম্পতিদের উদ্বুদ্ধ করেন।
বরগুনা সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘দক্ষ মাঠকর্মীদের মাধ্যমে মানসম্পন্ন সেবায় প্রতিবছর বরগুনায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সামগ্রীর মজুত একেবারে নেই। এতে কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে ইনজেকশনসহ স্থায়ী পদ্ধতির উপকরণের মজুত আছে।’
সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ সামগ্রী ও জনবল সংকট চরমে পৌঁছেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। গত মার্চের প্রতিবেদন বলছে, সাপাহারে সক্ষম দম্পতি ৪০ হাজার ৫৪৪ জন। তার মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারকারীর হার ৮০ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দম্পতিরা জানান, পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কোনো মাঠকর্মী তাদের খোঁজ নেন না। দীর্ঘদিন ধরে তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী থেকে বঞ্চিত।
এখানেই শেষ নয়। আট মাসের বেশি সময় ধরে উপজেলায় নেই পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। পাশের পত্নীতলা উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাসুদ রানা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সাপাহারে সপ্তাহে এক দিন অফিস করেন।
এই কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, ‘উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ের দীর্ঘদিন ধরেই জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ইমপ্ল্যান্ট ইনজেকশন ও কনডম নেই। প্রতিনিয়ত হেড অফিসে চাহিদা পাঠাচ্ছি। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহে ঘাটতি থাকলে দরিদ্র মানুষ বেসরকারি খাতের দিকে ঝুঁকতে পারে। এতে পদ্ধতি ব্যবহার কমে যেতে পারে। এর ফলে অপূর্ণ চাহিদার হার বাড়তে পারে। এ ছাড়া মাঠকর্মী সংকট থাকায় একজন কর্মীকেই নিতে হচ্ছে তিনটি এলাকার দায়িত্ব।’
দিনাজপুরের পার্বতীপুর, ঘোড়াঘাট ও খানসামা প্রতিনিধিরা জানান, সরকারিভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবার মধ্যে মুখে খাওয়ার বড়ি, কনডম, দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি ইনজেকশন সামগ্রীর ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তিন উপজেলায়ই রয়েছে লোকবল সংকট।
ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তৌহিদুর আনোয়ার জানান, ‘জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার কমে যাচ্ছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে কেনার ক্ষেত্রেও দাম বেড়েছে।’