জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৪ এএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ইভিএম নিয়ে যন্ত্রণায় ইসি

মাঠ কর্মকর্তারা অস্বস্তিতে
বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। পুরোনো ছবি
বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। পুরোনো ছবি

বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এখন গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার কমে আসা এবং দক্ষ জনবল ও অর্থের অভাবে যথাযথ সংরক্ষণ করতে না পারায় এসব অকেজো যন্ত্র নিয়ে মহাযন্ত্রণায় পড়েছে সংস্থাটি। কোথাও কোথাও এসব যন্ত্র রাখা নিয়েও বিবাদে জড়াতে হচ্ছে অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে ইভিএম মেরামত বা নতুন ইভিএম কেনার বদলে প্রকল্পটি বন্ধ করে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে চায় কমিশন।

ইসি সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে উচ্চমূল্যে কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৪০ হাজার মেশিন সচল রয়েছে। ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ও ইসির পরীক্ষায় দেখা যায়, অনেক ইভিএম ভাঙা ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। ইভিএমের ভেতর পানি ও কাদামাটি জমে আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিরাপদ সংযোগ তার (সিকিউরড কানেকটিং কেবল) নেই। ১০ বছর সচল থাকার কথা থাকলেও মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে অচল হয়ে আছে যন্ত্রগুলো। ইভিএম মেরামত বা সংরক্ষণে কোনো বরাদ্দ না থাকায় এখানে-সেখানে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা অনেক ইভিএম এখন আবর্জনা হিসেবে পরিণত হয়েছে। গোডাউন ভাড়া না নিয়ে বিভিন্ন স্থানে রাখা ইভিএমগুলো সরিয়ে নিতে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তাতে সাড়া নেই কমিশনের। বিষয়টি নিয়ে মাঠ কর্মকর্তারা অস্বস্তিতে পড়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে মাঝেমধ্যে কোনো কোনো সংস্থার সঙ্গে বিবাদে জড়াতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। এসব ইভিএমের ভবিষ্যৎ কী—তা নিয়ে স্পষ্টভাবে কোনো কিছু বলতে পারছেন না কমিশনের দায়িত্বশীল কেউই।

সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কেএম নুরুল হুদা কমিশন দেড় লাখ ইভিএম কিনলেও সেগুলা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন ইভিএম কেনা এবং পুরোনো ইভিএম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইসির নেওয়া ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প সরকার স্থগিত করে দেয়। ফলে হাতে থাকা পুরোনো ইভিএমগুলো সচল রাখতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে বর্তমান আউয়াল কমিশনকে। সমস্যা সমাধানে মাত্র পাঁচ বছর আগে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্পে ক্রয়কৃত ইভিএমগুলা সচল করতে আরও ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার চাহিদাপত্র দেয় কমিশন। ইভিএম মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি চালাচালির পর অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করে ইসি সচিবালয়। বৈঠকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে চরম হতাশ সংস্থাটি।

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইভিএমের চাহিদা যেন তলানিতে নামছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে শুরুতে দেড়শ আসন এবং পরে ৭০ থেকে ৮০ আসনে সম্পূর্ণ ইভিএমে ভোট গ্রহণ করার ঘোষণা দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কমিশন। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনেই ইভিএমে ভোট গ্রহণ না করে সব আসনেই ব্যালটে ভোট নেওয়া হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাগজের ব্যালটে ভোট হলেও গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ সিটিতে সাধারণ এবং কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়। আর ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম দফার ১৫২টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ২২টিতে ইভিএমে ভোট গ্রহণের কথা জানিয়েছে কমিশন। ইভিএম নিয়ে জনগণের অনাগ্রহ এবং সচল ইভিএমের অভাবে এসব যন্ত্রের ব্যবহার যেন দিন দিন কমছে। এ অবস্থায় ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে খোদ কমিশনই সন্দিহান।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম ইনডোর স্টেডিয়ামে রাখা দুই হাজারের ইভিএম সরাতে বলছে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি ইসির কাছে বারবার জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী। তবে গোডাউন ভাড়া না পাওয়া এবং অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ইভিএম স্থানান্তর করতে পারছে না ইসি। বিষয়টি নিয়ে ইসি ও স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের মধ্যে একরকম বিবাদ চলছে।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, ইভিএমের জন্য গোডাউন ভাড়া করেও রাখা যাচ্ছে না। কারণ, গোডাউন ভাড়ার কোনো বরাদ্দ নেই। তবে বিকল্প জায়গা বের করে ইভিএমগুলো সরানোর ব্যবস্থা করছি। স্টেডিয়াম থেকে ইভিএমগুলো পাশের অঞ্চলে সরানোর জন্য আমরা একটা পরিকল্পনা করছি। প্রয়োজন হলে ইভিএমগুলো বিএমটিএফে নিয়ে আসব।

২০১০ সালের ১৭ জুন যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের প্রচলন শুরু করে ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সে সময় তারা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা করে প্রায় সাড়ে ১২শ ইভিএম তৈরি করে নেয়। ওই কমিশন এই যন্ত্রে ভোট নিয়ে সফলও হয়। পরবর্তীকালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ২০১৫ সালের ১৫ জুন ভোট নিতে গেলে একটি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। সে মেশিনটি পরে আর ঠিক করতে পারেনি কমিশন। ফলে ওই মেশিনগুলো নষ্ট করে নতুন করে আরও উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় রকিব কমিশন। এরপর ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় বিএমটিএফ থেকে গড়ে প্রতিটি আড়াই লাখ টাকা করে দেড় লাখ ইভিএম ক্রয় করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অপসারণ করল মন্ত্রণালয়

জয়ার বারান্দায় মিষ্টি আলুর চাষ 

সেমির আগে মার্তিনেজের আবেগঘন বার্তা

ছাত্রলীগ সেক্রেটারির বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৮

ব্রাজিল ফুটবলের লজ্জার রাতের এক দশক আজ

ট্রেনের আসন সংখ্যা কমানোর প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন

সৈয়দপুর রেলস্টেশন / দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি লুপ লাইনের কাজ

কোটা আন্দোলন / ট্রেন আটকে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’

ইরানের ভবিষ্যৎ ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে!

মাটির নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় গ্রেনেডের সন্ধান

১০

বৈশাখীতে ‘শিকারি’

১১

পদ্মা তীর রক্ষা বাঁধে ধস, আতংকে এলাকাবাসী

১২

গণহত্যা জাদুঘরকে সবধরনের সহায়তার আশ্বাস দিলেন গণপূর্তমন্ত্রী 

১৩

আকর্ষণীয় বেতনে নিয়োগ দেবে ওয়ার্ল্ড ভিশন

১৪

বাসচাপায় কলেজছাত্র নিহত, গাড়িতে আগুন

১৫

যমুনায় ধীরগতিতে কমছে পানি, দুর্ভোগে ৯০ হাজার মানুষ

১৬

সহপাঠীকে হত্যার পর রক্তমাখা শরীরে লাশের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাজিন

১৭

ইসরায়েলকে শায়েস্তা করতে পুতিনের কঠিন সিদ্ধান্ত!

১৮

প্রথমবারের মতো মা হচ্ছেন ‘বার্বি’ তারকা রবি

১৯

কোটা আন্দোলন / যশোর প্রেসক্লাবের সামনে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

২০
X