এনায়েত শাওন
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩, ০৯:২০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিদেশি চাপে বিচলিত হবে না সরকার

বিদেশি চাপে বিচলিত হবে না সরকার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের আগে বিদেশিদের এসব তৎপরতাকে অনেকেই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও দেখা গেছে একই প্রবণতা। তবে দৃঢ়তার সঙ্গে সবরকম চাপ মোকাবিলা করেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন ও ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে সরকার। এবারও নির্বাচনকেন্দ্রিক বিদেশি চাপে বিচলিত নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক বক্তব্য সে ধরনের ইঙ্গিত বলেই মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান, ছোট-বড় নানাবিধ চাপ সব সময়ই ছিল, তবে সবচেয়ে বড় চাপের সম্মুখীন হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর। এরপর ধারাবাহিকভাবে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধে তৎপরতা ও সর্বশেষ ড. ইউনূসের জন্য বিজ্ঞাপন আকারে ৪০ বিশ্বনেতার খোলা চিঠির মতো ঘটনা দেখা যায়। তারা আরও বলেন, সব চাপ যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অদম্য সাহস ও বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে সামলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তা চাক্ষুস দেশবাসী। তা ছাড়া, স্বল্প উন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি বড় প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রী যে এসব দেশি-বিদেশি চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন না তা তার সোমবারের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যই প্রমাণ করে। সেদিন তিনি বলেছিলেন, এমন কোনো চাপ নেই, যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে। কে কী চাপ দিল, এতে কিছু যায়-আসে না, আমার শক্তি একমাত্র জনগণ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালবেলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন একজনের কন্যা–যিনি দেশের স্বাধিকারের প্রশ্নে কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। প্রধানমন্ত্রীও নতি স্বীকার করেননি। তিনি মৃত্যু ভয়কে তুচ্ছ করে চলেছেন। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আজকের পদ্মা সেতু, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর। পরপর তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী। যেসব দেশি-বিদেশি চাপ এসেছে সেগুলো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনগণের শক্তিতে বলীয়ান। বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছিলেন, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না, ঠিক তেমনি কোনো চাপেই কাজ হবে না।

নেতারা বলেন, ২০১০ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই দেশি-বিদেশি চাপের শুরু হয়। সেই চাপ ঘনীভূত হয় ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের শুরু মাধ্যমে। তবু প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় আইনসিদ্ধভাবেই রায় কার্যকর ও বিচার চলমান থাকে। দেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের জ্বালাও-পোড়াও ছাড়াও এই বিচারের রায় কার্যকর না করতে পাশ্চাত্যের দেশ আমেরিকা, কানাডাসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ, কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির পরও বিবৃতি দিয়েছিল তার সরকার। সাকা চৌধুরীকে ফাঁসি না দিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ও পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ নেতা ইমরান খান। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর প্রধান যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসি দেওয়ার পর তুরস্ক বাংলাদেশ থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে। এমনকি তুরস্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেত গুল বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি লিখেছিলেন জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযমকে যেন ফাঁসির দণ্ড দেওয়া না হয়, তার অনুরোধ জানিয়ে। ফাঁসি বন্ধ করতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বেশ কিছু পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান বিবৃতি দেয়।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালবেলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের মাধ্যমেই বলে দিয়েছেন, তিনি প্রভাবশালীদের চাপের কাছে মাথা নত করেন না। দেশ ও জনগণের স্বার্থে তিনি কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন না। তিনি তাই করেন, যা দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়, তার সিদ্ধান্ত শুধু দেশের জন্যই নয়, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্বরূপ।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, পদ্মা প্রকল্প নিয়ে জটিলতার আগে ২০১১ সালে বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদ থেকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে আদালতে গিয়েও বিফল হন তিনি। ২০১১ সালের মার্চে হিলারির অফিস থেকে ফোন করে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংকের পদ হারানোর পর থেকে ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এক্ষেত্রে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব‌্যাংকের অর্থায়ন আটকাতে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ইউনূসের যোগসাজশকে দায়ী করেন, সহকারীর ভূমিকা রেখেছিলেন বাংলাদেশের এক পত্রিকার সম্পাদক। প্রমাণ হিসেবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ফাঁস হওয়া ই-মেইল দেখান, যেখানে গ্রামীণ ব‌্যাংক নিয়ে তার তদ্বিরের বিষয় রয়েছে। ঠিক এই সময়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ নিয়ে চলে ষড়যন্ত্র। অবশেষে ২০১২ সালের ২৯ জুন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বন্ধ করা হয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন। সে সব ষড়যন্ত্র ও চাপ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চলমান জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাঝেই চলে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিএনপিসহ কয়েকটি দল বয়কট করে যা নিয়ে সরকারের বৈধতা ও সমর্থন অর্জনে চাপ মোকাবিলা করতে হয়। সেই নির্বাচনে ১৫৩ সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া পশ্চিমাদের প্রশ্নের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার। এমনকি মার্কিন সিনেটে প্রস্তাব পাস ও চিঠি পাঠিয়ে সংলাপের কথা বলা হয়। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রভাব ফেলবে এবং সহায়তা কমানো হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে দেশি-বিদেশি সংস্থা। তখন নানাবিধ চাপে পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার; কিন্তু সব চাপেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পরই শেখ হাসিনার সরকারকের অভিনন্দন জানিয়ে এক প্রকার স্বীকৃতি দেয় ভারত। বিশ্বের অন্য দেশগুলোও তৎক্ষণাৎ ভারতের পথ অনুসরণ করে।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, কিসের চাপ, এগুলো চাপের কিছু না। স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিটি দেশের নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। অন্য দেশও অনুরোধ করতে পারে। সেগুলো অন্যায় অনুরোধ ছিল কি না, তা দেখতে হবে, সে অনুরোধ রাখা যাবে কি না, তা আমাদের বিষয়। নিজে উদ্দেশ্য যদি সৎ হয়, সিদ্ধান্ত যদি দেশের জনগণের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে হয় তবে এসব চাপ কিছুই না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তীব্র গরমে ব্রাহ্মণপাড়ায় বেড়েছে রিচার্জেবল ফ্যানের চাহিদা 

ইমরান খানের ওপর বড় নিষেধাজ্ঞা আদালতের

গেইলকে ভয় পান বোল্ট!

৪৬তম বিসিএসের প্রিলি পরীক্ষা শুরু

দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক ও সহকারী নিহত

তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধসে নিহত ১৫৫

বিএনপি-জামায়াতের ৭ নেতাকর্মী কারাগারে

পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, অতঃপর

প্রেম করে বিয়ে / ফ্ল্যাটে মিলল স্বামী-স্ত্রীর লাশ, পাশে ছিল চিরকুট

দিনাজপুরে ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ড, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা

১০

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট শুরু

১১

ছুটির দিনটি কেমন যাবে আপনার?

১২

এক রাতে ৫ সেচ মেশিন চুরি, বোরো ধান চাষে শঙ্কা

১৩

টোল আদায় নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২৫

১৪

ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেল মোটরসাইকেল আরোহীর

১৫

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৬

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান বিরোধী নয় : হাইকোর্ট

১৭

আজ ৪৬তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষা, যেসব নির্দেশনা মানতে হবে

১৮

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

১৯

২৬ এপ্রিল : নামাজের সময়সূচি

২০
*/ ?>
X