যেন মৃত্যুকূপ হয়ে ছিল রাজধানীর বেইলি রোডের আটতলা ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনটি। বৃহস্পতিবার রাতে আগুনে নারী-শিশুসহ অন্তত ৪৬ প্রাণের বিনিময়ে ভয়ংকরভাবে প্রমাণটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ভবনটির একমাত্র সিঁড়ি ছিল সরু, কোনো অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না। গ্রিন কোজি কটেজের তলায় তলায় ছিল বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান। এসব দোকানের রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারগুলো ছিল সেই সরু সিঁড়িতে। এতে যাতায়াতের পথ প্রায় বন্ধ হয়েই ছিল। রেস্তোরাঁগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় দরজা, জানালা ছিল অবরুদ্ধ। সঙ্গে ছিল সিলিংসহ নানা কারুকাজ। ওই ভবনে আগুন লাগার পর লোকজন আর বের হতে পারেননি। তারা প্রাণ দিয়ে দেখিয়ে দিলেন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার একটি ভবনে এতসব অনিয়ম।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলছে, ভবনটিতে রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন ছিল না। ফায়ার সার্ভিসও বলছে, ভবনটি অগ্নিঝুঁকিতে থাকায় তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ভবনটির এক থেকে সাততলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তবে তা শুধু অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহারের জন্য। রেস্তোরাঁ, শোরুম (বিক্রয়কেন্দ্র) বা অন্য কিছু করার জন্য অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, একমাত্র সিঁড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার, দোকানের মালপত্র রাখা ছিল। ফলে লোকজন বের হতে পারেননি।
বৃহস্পতির রাত পৌনে ১০টার দিকে ওই ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩ ইউনিট রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ভেতরে তল্লাশি শুরু করে। এরপর বিভিন্ন তলা থেকে অচেতন অবস্থায় লোকজনকে উদ্ধার করা হয়। ওই রাতেই নিহত হন ৪৪ জন। গতকাল শুক্রবার আরও দুজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও আটজন শিশু রয়েছে। ভবনটি থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জীবিত উদ্ধার করেন ৭৫ জনকে। গতকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে ৪০ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ছয়জনের মরদেহ মর্গে পড়ে আছে। তারা পুড়ে অঙ্গার হওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষার পর ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত হলে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বেইলি রোডের ওই ভবনে অগ্নিনির্গমন পথ (ফায়ার এক্সিট) না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ব্যবস্থা করেছি, তবুও মানুষ এতটা সচেতন নয়।’ তিনি বলেন, ‘ভবন বা স্থাপনা তৈরির সময় আমি সবসময় স্থাপত্যবিদদের অনুরোধ করি যেন খোলা বারান্দা বা ভেন্টিলেশন ও অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু স্থাপত্যবিদরা সেভাবে নকশা করেন না, আবার মালিকরা এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়তে চান না। ৪৬ জন মানুষ মারা গেছেন। এর চেয়ে দুঃখ ও কষ্টের আর কী হতে পারে। অথচ আমরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার (অগ্নিনির্বাপণ) লাগানোসহ অগ্নিনির্বাপণ পথের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ বারবার দিচ্ছি। সেটা কিন্তু তারা মানে না।’
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ভবনটিতে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মাত্র একটি সিঁড়ি ও ভবনের একটি ছাড়া প্রায় প্রতিটি ফ্লোরে খাবারে দোকান থাকায় গ্যাস সিলিন্ডারগুলো রাখা ছিল অপরিকল্পিতভাবে।
ফায়ার সার্ভিসের অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, ওই ভবনে ছিল না ফায়ার এক্সিট, একমাত্র সিঁড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার, দোকানের মালপত্র রাখা ছিল। আইন অনুযায়ী কোনো ভবন ১০ তলার বেশি উচ্চতার হলে সেখানে ফায়ার এক্সিট লাগে। কিন্তু ওই ভবনটি আটতলা, তাই ফায়ার এক্সিট রাখা হয়নি।
তবে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও ভবনটি যেহেতু বাণিজ্যিক, সেহেতু আলাদা অগ্নিনির্গমন পথ রাখা দরকার ছিল। আবাসিক ভবন হলে কম লোক বাস করেন, আগুন লাগলে দ্রুত নামতে পারেন। কিন্তু বাণিজ্যিক ভবনে বহু মানুষ আসা-যাওয়া করে।
কেন এত মৃত্যু:
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বার্ন ইনস্টিটিউট ও মর্গে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে যারা মারা গেছেন, তাদের বেশিরভাগের শরীরে দগ্ধ হওয়ার কোনো চিহ্ন নেই। যেন একেকজন শুয়ে আছেন অচেতনভাবে। অথচ এই মানুষরা বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত রেস্তোরাঁয় আড্ডায় মগ্ন ছিলেন। কেউ ব্যস্ত ছিলেন খাওয়া-দাওয়ায়। নিহতদের অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন ভবনটির বিভিন্ন তলার রেস্তোরাঁয়। এখন তাদের পরিচয় লাশ।
আগুন নেভানোর এত সরঞ্জাম থাকার পরও কেন তাদের লাশ হতে হলো—সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বলছেন, আগুন লাগার পর ভবনের দুটি লিফটই বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে অগ্নিপ্রতিরোধক কোনো লিফট ছিল না। চার ফুট আয়তনের সরু সিঁড়ি থাকলেও বেশিরভাগই গ্যাস সিলিন্ডারসহ নানা মালপত্রে বন্ধ ছিল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁ হওয়ায় ভেতরে বাতাস যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ছাদে একটি রেস্তোরাঁ থাকায় সেখানেও আগুনে আটকে পড়া লোকজন আশ্রয় নিতে পারেননি। ফলে বাঁচার চেষ্টা করলেও বাধ্য হয়েই রেস্তোরাঁগুলোতে ধোঁয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে বেশিরভাগ লোক মারা যায়।
একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যুর নেপথ্যে বিষাক্ত কালো ধোঁয়াকেও কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, যারা মারা গেছেন তারা কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিংয়ের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ একটা বদ্ধ ঘর থেকে যখন বের (ধোঁয়া) হতে পারে না, তখন ধোঁয়াটা শ্বাসনালিতে চলে যায়। প্রত্যেকেরই তা হয়েছে।
পোড়া রোগের চিকিৎসায় খ্যাতিমান চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, ‘যাদের শ্বাসনালিতে বেশি ক্ষত হয়েছে, তারা মারা গেছেন। তবে যারা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তারাও কেউ শঙ্কামুক্ত নন।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কার্বন মনোক্সাইড বিষাক্ত গ্যাস। সাধারণত কাঠ ও কয়লার মতো জ্বালানি কিংবা গাড়ির ধোঁয়া থেকে এর উৎপত্তি হয়। আবদ্ধ জায়গা বা বায়ু চলাচল নেই, এমন জায়গায় কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়া ঘটে। বেইলি রোডের ভবনটিতে আগুনের ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট এই গ্যাসেই অনেকে মারা গেছেন।
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল জানান, আগুনে কেউ আটকা পড়লে ধোঁয়ায় তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। গরম কালো ধোঁয়া গলা দিয়ে প্রবেশের সময় নরম টিস্যু পুড়ে যায়, যা শরীরে বিষের মতো প্রবেশ করে। তিনি বলেন, আগুনের ধোঁয়ায় কার্বন মনোক্সাইড তৈরি হয়। এই কার্বন মনোক্সাইডের মধ্যে শ্বাস নিতে গেলে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং সে ক্ষেত্রে মানুষ মারা যায়। এজন্যই বেইলি রোডের ঘটনায় বাইরে থেকে পোড়া ক্ষত দেখা না গেলেও বেশি মানুষ মরেছে।
আগুনের সূত্রপাত্র নিচতলার ‘চায়ের চুমুক’ থেকে
ভবনটির প্রথম তলায় ‘চায়ের চুমুক’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ওই তলাতে ‘গ্যাজট অ্যান্ড গিয়ার’, ‘স্যামসাং’, ‘শাকহোলিক’ ও ‘ওয়াফে বে’ নামে চারটি দোকান। দ্বিতীয় তলার সম্পূর্ণটিতে ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্ট। তৃতীয় তলায় ইলিয়ান ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবির শোরুম। চতুর্থ তলায় ‘খানাস’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট। অন্যদিকে পঞ্চম তলায় ‘পিৎজা ইন’, ষষ্ঠ তলায় ‘স্টিট ওবেন’ ও ‘জেস্টি’ নামে দুটি রেস্টুরেন্ট। সপ্তম তলায় ‘ফোকুস ও ‘হাক্কা ডাকা’ নামে দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এ ছাড়া ভবনটির ছাদে ‘এম্বোশিয়া’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
কোথা থেকে আগুন লেগেছে, সেই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খোলেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নিচতলায় চায়ের চুমুক নামে একটি রেস্টুরেন্টে থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে সারা ভবনের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র এক মাস আগে ওই রেস্টুরেন্টেটি যাত্রা শুরু করে।
অবশ্য ঘটনার রাতে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানাজানি হয়। তবে গতকাল ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাত নিচতলার চুমুক রেস্টুরেন্ট থেকে। আমি নিজে দেখেছি সেখান থেকেই প্রথমে আগুনের ধোঁয়া বেরোচ্ছে।’
তিনি দাবি করেন, কাচ্চি ভাইয়ের কিচেন যেটা পেছনে, সেই কিচেন ঠিক আছে। আগুনের চিহ্ন নেই। আগুন লাগছে সামনে। তাহলে কাচ্চি ভাইয়ের কিচেন থেকে আগুন কীভাবে লাগল?
নিচতলার একটি দোকানের সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন। তিনি বলেন, দ্রুত ফায়ার সার্ভিস সেখানে পৌঁছালেও অন্যান্য সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়ায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে মার্কেটে একটি মাত্র সিঁড়ি থাকায় মারা যাওয়া ব্যক্তিরা নামতে পারেননি। নিচে নামতে গিয়ে অনেকে পুড়ে গেছেন।
সর্বোচ্চ প্রাণহানি কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয়
ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী সূত্র জানায়, নিচ তলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে ভবনের প্রতিটি ফ্লোর আগুনে পোড়ে। তবে আগুনে হতাহতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয়। সেখান থেকে অন্তত ১৫ জনকে একসঙ্গে অচেতন অবস্থা্য় পাওয়া যায়। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সবাইকেই চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধে সবচেয়ে বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয় দ্বিতীয় তলার কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট থেকে।
কাচ্চি ভাই থেকে বেশি মরদেহ উদ্ধারের কারণ হিসেবে বলা হয়, কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে কোনো ধরনের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ছিল না। ঘটনার সময় সেখানে মানুষের উপস্থিতিও ছিল বেশি। ভেন্টিলেশন না থাকায় প্রচণ্ড ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তারা মারা যান।
গাফিলতির খোঁজে তদন্ত কমিটি
ভবনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারও গাফিলতি ছিল কি না, তদন্ত করে দেখছে ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্যের কমিটি। গতকাল দুপুরে পুড়ে যাওয়া ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি আছে। ধোঁয়ার কারণে মানুষ অচেতন হয়ে পড়েছিল, সেখানে কোনো ধরনের ভেন্টিলেশন ছিল না। আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি, আমরা আসলে দেখতে চাই কারও কোনো গাফিলতি ছিল কি না।
তিনি বলেন, এই ভবনে ফায়ার সেইফটি প্ল্যান ছিল কি না, আমরা তদন্তে দেখতে চাই। এ ছাড়া ভবন নির্মাণ করতে অন্য যেসব প্রতিষ্ঠানের অনুমতির প্রয়োজন, তা ছিল কি না, আমরা সেসবও তদন্ত করে দেখব।
ভবনটিতে অফিস করার অনুমতি ছিল। কিন্তু অফিস না করে এখানে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেসহ দোকান করা হয়েছে—এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শুধু ফায়ার সেফটি প্ল্যানটা দেখি। এ বিষয়ে রাজউক বলতে পারবে। তবে এ নিয়ে আমরাও তদন্ত করে দেখব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালে একটি বেজমেন্টসহ আট তলা আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে ‘গ্রিন কোজি কটেজের’ নকশা অনুমোদন দেয় রাজউক। ভবনটি নির্মাণ করে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। এরপর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ফ্লোর বিক্রি করা হয়।
তিনজন আটক, চলছে মামলার প্রস্তুতি
বেইলি রোডে ৮ তলা ভবনে আগুনের ঘটনায় চুমুক নামে একটি খাবার দোকানের দুই মালিকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল চুমুকের মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন এবং কাচ্চি ভাই নামে আরেকটি খাবারের দোকানের ব্যবস্থাপক মো. জিসানকে আটক করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ভবনের নিচতলার খাবার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আগুনের ঘটনায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করবে। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ মামলা করতে চাইলে মামলা করতে পারবেন।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনের মালিকের দায়িত্বের কোনো অবহেলা রয়েছে কি না, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভবনের মালিক থেকে শুরু করে এ ঘটনায় যার দায় পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যাদের মরদেহ হস্তান্তর হয়েছে
আশরাফুল ইসলাম (২৫), নুরুল ইসলাম (৩২), পপি রায় (৩৬), সম্পূর্ণা পোদ্দার (১২), জান্নাতিন তাজরিন (২৩), নাজিয়া আক্তার (৩১), আরহান মোস্তফা (১৪), মাইশা কবির মাহী (২১), মেহেরা কবীর দোলা (২৯), পম্পা সাহা (৮৯), জিহাদ হোসেন (২২), আতাউর রহমান (৬৩), কামরুল হাবিব (২০), মেহেদী হাসান (২৯), ফৌজিয়া আফরিন (২২), নুসরাত জাহান (১৯), সৈয়দা ফাতেমা জহুরা (১৬), সৈয়দ আব্দুল্লাহ (৮), শম্পা আক্তার (৪০), জারিন তাসনিন (২০), শান্ত হোসেন (২৩), দিদারুল হক (২৩), সৈয়দ মোবারক (৪৮), রুবী রায় (৪৮), প্রিয়াঙ্কা রায় (১৮), তুষার হাওলাদার (২৬), জুয়েল গাজী (৩০), আসিফ (২১), কেএম মিনহাজ (২৫), নয়ন (১৭), সাগর হোসেন (২০), তানজিলা নওরিন (৩৫), লুৎফুন নাহার (৫০), শিমন মিয়া (২১), সংকল্প সান (৮), আলিশা (১৩), নাহিয়ান আমিন (১৯), আমেনা আক্তার (১৩), নাফিসা ইসলাম (২০) ও মো. নাইম (১৮)।