মাসুদ রানা
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:২২ এএম
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জামিন কৌশলে সফল বিএনপি

কয়েকজন কারামুক্ত
বিএনপির লোগো। গ্রাফিক্স : কালবেলা
বিএনপির লোগো। গ্রাফিক্স : কালবেলা

কারাগারে আটক দলের শীর্ষ নেতাদের জামিনের ক্ষেত্রে নতুন কৌশলে সফল হয়েছে বিএনপি। শঙ্কা ছিল এক মামলায় জামিন পেলে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের কারাবন্দি রাখা হবে। এ ভাবনায় আইনি কৌশল হিসেবে জামিন আবেদন গ্রহণ করে, তা নিষ্পত্তির নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর নেতাদের গ্রেপ্তার দেখান অধস্তন আদালত। পরবর্তী সময়ে একাধিক মামলায় শীর্ষ নেতারা জামিনও পেয়ে যান।

সরকারের পদত্যাগের ‘একদফা’ দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। সমাবেশ কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ কনস্টেবল হত্যা, পিস্তল ছিনতাই, পুলিশের কাজে বাধা, ককটেল বিস্ফোরণ, নাশকতা, ভাঙচুর, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, গাড়ি পোড়ানো, হত্যাচেষ্টাসহ নানা অভিযোগে একাধিক মামলা হয়। এজাহারনামীয় আসামি হলেও দলের শীর্ষ নেতাদের সব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। বিএনপির আইনজীবীদের দাবি, এক মামলায় জামিন পেলে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। এতে কারামুক্তিতে দীর্ঘসূত্রতা হবে।

এসব বিষয় মাথায় নিয়ে তারা শীর্ষ নেতাদের জামিনে আইনি কৌশল নেন। সব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জামিন আবেদন গ্রহণ ও নিষ্পত্তি চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গ্রেপ্তার ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত শীর্ষ নেতাদের সব মামলায় গ্রেপ্তার দেখান। পর্যায়ক্রমে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে তারা জামিনও পান। এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর এক মামলায় এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের দুই মামলায় জামিন হলে তারা কারামুক্ত হতে পারবেন। এর মধ্যে সাবেক ফুটবলার ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ১২টি মামলায় জামিন পেয়ে কারামুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও যুগ্ম মহাসচিব শামসুজ্জামান দুদুকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে একই প্রক্রিয়ায় জামিনের জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন তাদের আইনজীবীরা।

জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়। রমনা থানার প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় গত ২৯ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। পরে গত ১৮ ডিসেম্বর পল্টন মডেল থানার আরেক মামলায় পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অন্য ৯ মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার না দেখানোয় গত ৯ জানুয়ারি মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন তার আইনজীবী। আদালত গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। পরদিন ১০ জানুয়ারি ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিন শুনানি শেষে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় ৯ মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তিনি ১১ মামলার মধ্যে ১০টিতে জামিন পান। পুলিশের গ্রেপ্তার দেখানো রমনা থানার মামলায় জামিন না পাওয়ায় তিনি কারামুক্ত হতে পারেননি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ১০ মামলার মধ্যে ৯টিতে জামিন পেয়েছেন। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় জামিন পাননি। পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় গত ৩ নভেম্বর আদালত তার ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত ১০ নভেম্বর এ বিএনপি নেতাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পল্টন থানার নাশকতার আরেক মামলায় পুলিশের আবেদনের পর গত ১৮ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলগেটে দুদিনের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত। গত ১৭ জানুয়ারি আসামিপক্ষের আবেদনের পর রমনা ও পল্টন থানার আট মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওইদিন পল্টন মডেল থানার দুই মামলায় জামিন পান আমীর খসরু। পরদিন ১৮ জানুয়ারি তিনি রমনা ও পল্টন মডেল থানার আরও চার মামলায় জামিন পান। গত ২১ জানুয়ারি রমনা ও পল্টন মডেল থানার পৃথক আরও দুই মামলায় জামিন দেন আদালত। গত ২৪ জানুয়ারি পল্টন থানার আরেক মামলায় জামিন পান আমীর খসরু। রমনা থানার প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়। শাহজাহানপুর থানার নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৩১ অক্টোবর রাতে ঢাকার শহীদবাগ থেকে মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ৫ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২৪ জানুয়ারি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা রেলওয়ে থানার আরেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি মির্জা আব্বাসের পল্টন থানার পাঁচ এবং রমনা মডেল থানার চার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। পরে ৫ ফেব্রুয়ারি পল্টন থানার চার ও রমনা মডেল থানার দুই মামলায় জামিন মঞ্জুর করা হয়। পরদিন ৬ ফেব্রুয়ারি শাহজাহানপুর, পল্টন থানার ও রমনা মডেল থানার পৃথক আরও তিন মামলায় জামিন পান তিনি।

বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়। তার মধ্যে পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর গত ৩ নভেম্বর আদালত তার ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত ১০ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ১৯ নভেম্বর পল্টন থানার অস্ত্র ছিনতাইয়ের আরেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত ৩০ জানুয়ারি পল্টন থানার তিন এবং রমনা মডেল থানার দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখান আদালত। ওইদিন জামিন আবেদন করলে আদালত পল্টন থানার দুই ও রমনা মডেল থানার এক মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেন। পরে ৫ জানুয়ারি আদালত পল্টন ও রমনা মডেল থানার পৃথক দুই মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন।

এ বিষয়ে বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, নিজেরা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আবার জামিন পাওয়া—এমন সফলতা আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম মামলা হয়েছে, পুলিশ গ্রেপ্তার দেখাবে। সেটা করা হয়নি। আইনকে ব্যবহার করা হয়েছে। মামলায় জামিনের আবেদন নিষ্পত্তি করতে উচ্চ আদালতের ডিরেকশন নিতে হয়েছে, যা এক ধরনের হয়রানি ও মানসিক চাপ।

মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরুর আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ কালবেলাকে বলেন, আমাদের শঙ্কা ছিল এক মামলায় গ্রেপ্তার হলে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে। কারণ, এর আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে; তাই পুলিশ গ্রেপ্তার না দেখালেও আমরা গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে আবেদন করি। সিএমএম আদালত আবেদন গ্রহণ না করায় উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের গ্রেপ্তার দেখান আদালত। জামিন আবেদন করলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলা ছাড়া তারা সব মামলায় জামিন পেয়েছেন। এতে আমাদের আইনি কৌশল সফল হয়েছে।

মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হলেও পুলিশ মাত্র এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখান। আমাদের ভয় ছিল এক মামলায় জামিন পেলে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে, যাতে সহসাই কারামুক্ত হতে না পারেন। আমাদের আবেদনের পর তাকে এখন সব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং ৯ মামলায় জামিনও পেয়েছেন। গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন না করা হলে জামিনের বিষয়টি ঝুলে থাকত। তাই মনে করি, জামিনের বিষয়ে আমরা আইনি কৌশলে সফল হয়েছি। আশা করছি, বাকি মামলায় তিনি জামিন পেয়ে কারামুক্ত হবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঈদে আসছে জুয়েলের পিনিক

বায়ু দূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার খবর কী

‘জনগ‌ণের সম্পদ খাওয়া আর জাহান্না‌মের আগুন খাওয়া সমান’

কমছে তাপমাত্রা, শীত জেঁকে বসবে কবে?

‘আ.লীগ নির্বিচারে মানুষ মেরে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে’

তারেক রহমান সবসময় পাশে আছেন, থাকবেন : মীর হেলাল

দশ দিনেও মুক্তি মেলেনি ৪ বাংলাদেশির

আজ টিভিতে যেসব খেলা দেখা যাবে

ছাত্রদল নেতাকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে

লেবাননে এক দিনে নিহত ৫৯

১০

টাইম জোনের ধারণা এসেছে যেভাবে

১১

সরকারের চাপে বাধ্য হয়ে ওজন কমালেন ৫৪২ কেজি

১২

উত্তর আফ্রিকার মুসলিম দেশে নজর জিনপিংয়ের

১৩

‘উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে আ.লীগ সরকার’

১৪

২৩ নভেম্বর: ইতিহাসের আজকের এই দিনে

১৫

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

১৬

আজকের নামাজের সময়সূচি

১৭

প্রথম দিনে উইন্ডিজ তুলল ২৫০ রান

১৮

গাঁজা-জাল নোটসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

১৯

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ

২০
X