কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। কিন্তু এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বরাবরই যোজন দূরে থেকেছে দায়ী উন্নত দেশগুলো। বিশ্বে বর্তমানে মোট কার্বন নিঃসরণের সাত ভাগই হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে তা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা আছে। কারণ ওই সময়ের মধ্যে কার্বন নির্গমনের ১০ ভাগই হবে কুলিং ইকুইপমেন্ট থেকে। তবে আশার কথা, ২০৫০ সালের মধ্যে কুলিং ইকুইপমেন্ট থেকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে একযোগে কাজ করতে রাজি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬০টি দেশ। এজন্য এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে দেশগুলো।
গতকাল বুধবার কপ২৮ সম্মেলনের সপ্তম দিনে প্রেসিডেন্ট ড. সুলতান আল জাবের জানান, গত পাঁচ দিনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য ৮৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। এ অর্থ জলবায়ুকে মানবজাতির অনুকূলে রাখার পথেই ব্যবহার করা হবে। সেগুলোর মধ্যে খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর, স্বাস্থ্য, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং শিল্পকারখানার কার্বন কমানো অন্যতম। জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। সুলতান আল জাবের বলেন, শীতলীকরণ যন্ত্রের নিঃসরণ কমাতে হবে। পাশাপাশি টেকসই শীতলায়নে সাধারণের প্রবেশাধিকার বাড়াতে হবে।
এদিকে দুবাইয়ের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি। সেখানে বলা হয়েছে, এখনই সঠিক পদক্ষেপ নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন টন পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে কুলিং ইকুইপমেন্টের মাধ্যমে মোট বিদ্যুৎ খরচের ২০ ভাগ খরচ হয়।
আবার রেফ্রিজারেন্ট গ্যাসের লিকেজে একদিকে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয় অন্যদিকে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমনও বাড়ে। বিশ্বের ২০টি উন্নত দেশকে (জি-২০) ৭৩ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ইনগার এন্ডারসেন বলেন, প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হলে পিক আওয়ারে চাহিদা দেড় থেকে দুই টেরাওয়াট কমবে, যা পুরো ইউরোপের চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ।
মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব জলবায়ুর:
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন আয়োজিত একটি সাইড ইভেন্টে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে নানা ধরনের প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে সংক্রামক রোগের প্রদুর্ভাব বেড়ে যাওয়া ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি অন্যতম।
লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দের দাবি:
কোনো ধরনের দূষণ না করেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মালদ্বীপসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। এজন্য এ বছর শুরু হওয়া লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার দাবি জানান মালদ্বীপের জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ ও জ্বালানিমন্ত্রী তরিক ইব্রাহিম। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এক্সপো সিটিতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের সপ্তম দিনে গতকাল বুধবার একটি সাইড লাইন ইভেন্টে তিনি এ দাবি জানান।
সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেইঞ্জ জার্নালিস্টস ফোরামের সঙ্গে মতবিনিময়ে মালদ্বীপের মন্ত্রী আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে অনেক দ্বীপ বসবাসের উপযোগিতা হারিয়েছে। স্যানিটেশনসহ নানা সমস্যায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সামুদ্রিক কোরাল ও মৎস্য আহরণ এবং পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়ছে।
জার্নালিস্টস ফোরামের নেতারা বলেন, অকাল বন্যায় বাংলাদেশেই ২ লাখ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। ধনীদেশগুলোর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড এবং প্রথমবারের মতো গঠিত লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের বরাদ্দ অপ্রতুল। দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু ন্যায্যতা আদায়ে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে আলাদা জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
গতকাল বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। আজ বৃহস্পতিবার জলবায়ু সম্মেলন এক দিনের জন্য বিরতি থাকবে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে ফের শুরু হয়ে সম্মেলন চলবে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।