সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশে দুই জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) পরিবর্তন করেছে সরকার। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ডিসি মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রত্যাহার করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে বদলি করা হয়েছে। আর সুনামগঞ্জের ডিসি দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীকে বদলি করে ময়মনসিংহে পাঠানো হয়েছে। সুনামগঞ্জের ডিসি করা হয়েছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীকে। গতকাল শনিবার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আভাস মিলেছে, ডিসি-এসপিদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলেই তাদের বদলি করা হতে পারে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসিদের বদলির সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) মো. আমিন উল আহসান বলেন, যদি কোনো ডিসির বিরুদ্ধে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন, তাহলে তা নিয়ে আমরা ইসির সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাইনি। ময়মনসিংহের ডিসিকে কেন প্রত্যাহার করা হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। এটি ইসি ও জনপ্রশাসনের সিদ্ধান্ত।
ইসি, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠ প্রশাসনের সব স্তরেই বিশেষ করে ডিসি-এসপি পদে ব্যাপক রদবদল হতে পারে। কারণ যেসব ডিসি-এসপি এক বছরের কম-বেশি সময় ধরে বর্তমান কর্মস্থলে আছেন, তাদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিকদের একটি সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। নির্বাচনে এ সুসম্পর্ক অনেকেই কাজে লাগিয়ে ভোটের ফলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাতে পারেন। তাই ইসি মনে করছে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে মাঠ প্রশাসনের সব স্তরের কর্মকর্তাদের বদলি করা জরুরি।
এমন সিদ্ধান্ত থেকেই প্রথম পর্যায়ে যেসব ইউএনও তার কর্মস্থলে এক বছর ধরে আছেন, তাদের বদলি করা হবে। আর যেসব ওসি ছয় মাস ধরে একই থানায়, তাদেরও বদলির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক বছর বা তার কাছাকাছি সময় একই জেলায় আছেন—এমন ডিসিদেরও বদলির চিন্তা আছে ইসির। তবে কোনো ডিসি-এসপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই তাকে বদলি করা হবে। এ ছাড়া ছয় মাস বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে এক জেলায় আছেন—এমন এসপিদের বদলি করা হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, বদলির বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। ডিসি-এসপিদের বদলির সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কিছু আমার জানা নেই। যদি ইসি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে হতেও পারে। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এদিকে জনপ্রশাসন সচিব ও জননিরাপত্তা সচিবকে লেখা চিঠিতে ইসি লিখেছে, পর্যায়ক্রমে সব ইউএনও এবং ওসিদের বদলি করা হবে। প্রথম পর্যায়ে যেসব ইউএনওর বর্তমান কর্মস্থলে এক বছরের অধিক চাকরিকাল হয়েছে, তাদের অন্য জেলায় বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসিতে পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ছয় মাসের বেশি সময় ধরে এক থানার দায়িত্বে রয়েছেন—এমন ওসিদের বদলির প্রস্তাবও পাঠাতে বলা হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
রদবদলের ক্ষেত্রে কোনো বিশৃঙ্খলার শঙ্কা আছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অশোক কুমার বলেন, আমি মনে করি নেই। একজন কর্মচারী যে উপজেলা বা জেলায় দায়িত্ব পালন করুক না কেন, তিনি সুষ্ঠুভাবেই দায়িত্ব পালন করবেন। ওসি ও ইউএনওদের রদবদল ইসি চেয়েছে। আমাদের কমিশনাররা এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জেলা এবং অঞ্চলে সফর করেছেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ইসি গত ৩০ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কী ধরনের তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব তো খোলাখুলি বলা হয় না। তথ্যের ভিত্তিতে তারা মনে করেছে বদলি করা প্রয়োজন।
এর আগে গত ২২ নভেম্বর ইসি মো. আলমগীর জানিয়েছিলেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া প্রশাসনে রদবদল হবে না। এর এক সপ্তাহ পরই গত বৃহস্পতিবার ইউএনও-ওসিদের বদলির সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ইসি। এ বিষয়ে কর্মকর্তারা জানান, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে মাঠ প্রশাসনে বদলির রেওয়াজ রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকেন ডিসি-ইউএনও। নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকেন ডিসি। আর সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন ইউএনও। পুরো নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলান জেলার এসপি এবং ওসিরা।
আরপিও অনুযায়ী নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তপশিলের পর সরকার চাইলেও বদলি করতে পারে না। বদলির জন্য কমিশনের অনুমতি লাগে। কমিশনের যদি মনে হয় কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর আচরণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিপক্ষে, তখন তাকে বদলি করতে পারে।
তপশিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল গত ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হবে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ আগামী ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর।