কেরানীগঞ্জের বছিলা সেতু পার হয়ে খানিকটা সামনে এগোলেই মধু সিটি। ঢাকার উপকণ্ঠের এই জায়গা থেকে দক্ষিণ দিকে মাইলের পর মাইল জমিতে দেখা মেলে আবাসন কোম্পানিটির সাইনবোর্ড। আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি হচ্ছে এসব জমি। জায়গাভেদে প্রতি কাঠার দাম ১৫ থেকে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ জমির বৈধ মালিকানা নেই মধু সিটির। কিছু জমি ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে। আর বাকি সবই দখল করা। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জমিতে জোর করে সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে কোম্পানিটি। সরকারি কোনো অনুমোদনও নেই এই আবাসন প্রকল্পের। মূলত নিজেদের ক্ষমতা এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাজে লাগিয়ে নিরীহ মানুষের জমি দখল করে চলছে মধু সিটি নামে বেসরকারি এই আবাসন প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আয়তনের দিক থেকে বর্তমানে দেশের বৃহৎ এই আবাসন প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালের দিকে। মধু হাজি নামের এক ব্যক্তির নাম অনুসারে তার সন্তানরা এই আবাসন প্রতিষ্ঠানের নাম দেন মধু সিটি। কয়েক একর জায়গা নিয়ে আবাসন প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করলেও এখন কেরানীগঞ্জজুড়েই এই সিটির রাম রাজত্ব। মাইলের পর মাইল, যতদূর চোখ যায় সর্বত্র শুধু মধু সিটির সাইনবোর্ড। নদী, খালবিল, কৃষিজমি, মানুষের ভিটেমাটি—মোটকথা, যতদূর নজর যায়, সেখানেই ভরাট করে বিশাল আকৃতির সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে এই আবাসন কোম্পানি।
অথচ প্রতিষ্ঠানটির কোনো অনুমোদনই নেই বলে নিশ্চিত করেছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ড্যাপ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘কেরানীগঞ্জের কোনো আবাসন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই। এরপরও অনেকে জোর করে জমি দখল করে আবাসন প্রতিষ্ঠান তৈরি করছেন। আমরা খুব শিগগির এসব অপতৎপরতা বন্ধে অভিযান চালাব।’
স্থানীয়রা বলছেন, জমি দখল আর তা রক্ষার জন্য মধু সিটি কেরানীগঞ্জ এলাকায় তৈরি করেছে ‘রামদা বাহিনী’। দিনের আলোতেই এই বাহিনীর সহায়তায় দখল করা হয় জায়গা। তাদের সঙ্গে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়ায় ‘মোটরসাইকেল বাহিনী’। এরপর রাতের অন্ধকারে ভরাট করা হয় বালু দিয়ে। কেউ এর প্রতিবাদ করলে তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। অসংখ্য মানুষ নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। হারিয়েছেন ভিটেমাটি।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, মধু সিটির উদ্যোক্তাদের পিতা মধু হাজি জীবনের শুরুতে অতিকষ্টে সংসার চালাতেন। তবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ভাগ্য ফেরাতে পেরেছিলেন তিনি। এক সময় কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বালু ভরাটের কাজ করতে থাকেন মধু হাজি।
মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে আশ্চর্য এক আলাদিনের চেরাগের বদৌলতে সেই মধু হাজির ছেলেরা কয়েক হাজার একর জমির মালিক বনে গেছেন। স্থানীয় শাক্তা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব, আমিনুল করিম, হাজি মমিনুল্লাহ প্রিন্স ও ছলিম উল্লাহ এবং রফিক—এই পাঁচ ভাই এখন মধু সিটির মালিক। যদিও কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে পরিচালনা পর্ষদের বিস্তারিত তথ্য নেই। কোম্পানির চেয়ারম্যান ছলিম উল্লাহ বছরের বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকেন বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জমি দখলের উৎসব পাকাপোক্ত করতে মধু সিটির মালিকরা বেছে নিয়েছেন রাজনীতিকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাবিবুর রহমান হাবিব ও ছলিম উল্লাহ ছলিম সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। বুড়িগঙ্গা নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলেন মধু হাজি রিভারভিউ সিটি। নদীর ১১৮ একর জমি ছাড়াও সরকারি প্রায় একশ একর খাসজমি দখল করে তৈরি করা হয় এই সিটি। কেরানীগঞ্জের রাজনৈতিক বিভাজনের সুযোগ নিয়ে ধীরে ধীরে নিজেদের সুবিধা আদায় করতে থাকেন তারা। হাবিবুর রহমান হাবিব যুক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও। প্রথমে আদায় করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং পরবর্তী কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মধু সিটিকে। একের পর এক গ্রাম দখলে নিয়ে কোম্পানির সাইনবোর্ড টানিয়েছেন। প্লট আকারে বিক্রি করছেন জমি। জেলা, উপজেলা প্রশাসন কিংবা রাজউকের অনুমতি, নিয়মের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমি দেদার ভরাট করছেন বালু দিয়ে। আর এ নিয়ে মুখ ফুটে কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পান না। যারা মুখ খুলছেন, এর মধ্যে অনেকেই এলাকা ছাড়া হয়েছেন। আবার অনেকেই হয়েছেন আজীবনের জন্য পঙ্গু।
সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে শাক্তা ইউনিয়নে চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন হাবিবুর রহমান হাবিব। যদিও প্রথমে এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা লিটন মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তবে এরপরে অদৃশ্য কারণে বদলে যায় মনোনয়ন।
এ পর্যন্ত মধু সিটির কী পরিমাণ প্লট বিক্রি হয়েছে, সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য না মিললেও সূত্র বলছে, তাদের দুটি সিটিতে বিপুল পরিমাণ প্লট বিক্রি হয়েছে। সম্পূর্ণ অনুমোদনহীন এ প্রকল্পে প্লট কিনে কেউ কেউ সাত-আটতলা ভবনও নির্মাণ করেছেন। ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে যারা এসব স্থাপনা নির্মাণ করেছেন, সেগুলোরও অনুমোদন নেই।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রিয়েল এস্টেট আইন, ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ), জলাধার সংরক্ষণ আইন, ইমারত নির্মাণ আইন ও পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন দখলের উৎসব চলছে। সরকারি এতগুলো সংস্থা থাকতে অনুমোদনহীন একটা আবাসন প্রতিষ্ঠান কীভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তা কারও কাছেই বোধগম্য নয়। সংস্থাগুলোর রহস্যজনক নীরবতায় প্লট কিনে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা। সরকারও রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলে পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলার সুযোগ হারাচ্ছে বলেও মনে করেন অনেকে।
কেরানীগঞ্জের শাক্তা, কলাতিয়া ও রোহিতপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, যেখানেই খোলা মাঠ বা জমি রয়েছে, সেখানেই টানানো হয়েছে মধু সিটির সাইনবোর্ড। হাজার হাজার একর জমির ওপর আড়াই কাঠা, ৩ কাঠা, ৫ কাঠা এবং বৃহৎ আয়তনের প্লটও বানিয়েছে তারা। স্থানীয় টোটাল, মনহরিয়া, আহাদিপুর, মধ্যেরচর, চণ্ডীপুর, শিয়ালি, বেলনা, নয়াগাঁ, হাদিপুর ও কাঁঠালতলী মৌজা এ আবাসন প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন এলাকা। শাক্তা, কলাতিয়া ও রোহিতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি, সরকারি খাসজমি, জলাশয় ও বুড়িগঙ্গার তীর বালু দিয়ে ভরাট করে সেখানে প্লট বানানো হয়েছে। বিধিবহির্ভূতভাবে ১২-১৩ বছরে বিজ্ঞাপন দিয়ে হাজার হাজার প্লট বিক্রি করেছে।
সরেজমিন জানা গেছে, মধু সিটি নামে আলোচনায় থাকলেও ইতোমধ্যে আরও কয়েকটি আবাসন প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে সংশ্লিষ্টরা। যদিও সেসব সিটির পরিচালনা নাম রাখেননি সংশ্লিষ্ট মধু সিটির হর্তাকর্তারা। তবে মধু সিটি নামেই বুড়িগঙ্গা পাড়ে বালুরচরে মধু হাজি রিভারভিউ। এম আর গাঁও এবং খানবাড়ি এলাকার বিশাল এলাকা নিয়ে মধু সিটি-১, ভাওয়াল, চণ্ডীপুর, নয়াগাঁও, শিয়ালিয়াসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে মধু সিটি-২, শুঁটকির টেক, বেলনা মৌজাসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে মধু সিটি-৩ গড়ে তোলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে কলাতিয়া ও রোহিতপুরে যেসব জায়গা দখলে নেওয়া হয়েছে, সেখানে নতুন নামে কোনো প্রকল্প না করে চলমান তিনটি প্রকল্পের আওতায় বিক্রি করা হবে এসব জমি।
ভুক্তভোগীদের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং কৃষিবিদ মোসলেহ উদ্দীন ফারুক বলেন, ‘এলাকার সব জমি দখলে নিচ্ছে মধু সিটি। বাপ-দাদার সম্পত্তিকে মাদ্রাসা-মসজিদে দান করেছিল; কিন্তু সে জায়গায় মধু সিটি রাস্তা করে নিয়েছে রাতের অন্ধকারে। বাধা দিলে কাজ বন্ধ হয়, কিন্তু ফের চালু করে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছে মধু সিটি।’
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান উদ্দীন বলেন, ‘সরকারের যদি প্রয়োজন হয় আমরা আমাদের জায়গা ছেড়ে দেব। কিন্তু মধু সিটির জবরদখল মেনে নিতে পারি না। জীবন থাকতে আমাদের কৃষিজমিতে কাউকে জায়গা দেব না।’
তিনি বলেন, ‘জোর করে বালু ভরাট করেছে। তাদের মোটরসাইকেল বাহিনী রয়েছে। কিছু বললেই চড়াও হয়।’
হাফিজ উদ্দিন নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘রাজধানীতে টাটকা শাকসবজির জোগান হতো আমাদের এ অঞ্চল থেকে। কিন্তু সব শেষ করে ফেলছে মধু সিটি। তিন ফসলি জমিগুলো জোর করে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। কৃষিজমি নষ্ট হওয়ার কারণে বেকার হয়ে গেছে লাখ লাখ মানুষ। যারা কৃষিকাজ করে চলত, তারা বেকার। এসব গরিব মানুষ এখন কোথায় যাবে!’
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলে করিম বলেন, ‘এ মাসের ৬ তারিখে নিজের কৃষিজমি দেখে এলাম। সব ঠিকঠাক। কিন্তু পরদিন সকালে শুনি কারা বেশিরভাগ জমি বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে। বাধা দেওয়ার পর থেমেছে। কিন্তু জানি না কতদিন এ জমি ধরে রাখতে পারব?’
কাজের কারণে ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন শিরিন আক্তার। গত ৬ অক্টোবর নিজের বাড়ি, ভিটেমাটি, পুকুর দেখে এসেছেন। সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু রাতের আঁধারে সব বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। সেই বাড়ি-পুকুর-ভিটেমাটি কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই এখন। সব বেদখল হয়ে গেছে রাতের আঁধারে।
ভুক্তভোগীর তালিকায় কেবল তারাই নন, তিনটি ইউনিয়ন ঘুরে এমন অসংখ্য ভুক্তভোগী পাওয়া গেছে। যারা হারিয়েছেন বাপের ভিটা, কৃষিজমি, শৈশবের স্মৃতির সব। অনেকে প্রতিবাদ করেছিলেন, যার ফল ভোগ করছেন বিছানায় শুয়ে শুয়ে। অনেকে এলাকাছাড়া হয়ে যাযাবর দিনযাপন করছেন।
এমনই একজন মোহাম্মদ জালাল। নির্মম নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে চার থেকে পাঁচ বছর ধরে বিছানায় শুয়ে আছেন। কোনো কাজ করতে পারেন না। সংসার চলছে না, নেই ওষুধপত্রের টাকাও।
জালাল বলেন, ‘কী অপরাধে আমাকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দিল, তা এখনো জানতে পারলাম না। আমার জীবন চার দেয়ালে বন্দি। তিনবেলা দুমুঠো খাবারও অনিশ্চিত। সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিয়েছি। ওদের অনেক টাকা। দুনিয়ার আদালত তাদের বিচার করতে পারবে না।’
আব্দুল আলীম নামে একজন বলছিলেন, ‘অবিশ্বাস্য মনে হবে। মাইলের পর মাইল জায়গা দখল করা যায়। এটা একসময় ভাবতেই পারতাম না; কিন্তু সত্য। চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। যতদূর চোখে দেখা যায়, সব দখলে নিচ্ছে। কেউ নেই, একজন মানুষও নেই এটা থামাবে।’
সাইফুল ইসলাম নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই জমির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সব এখন মধু সিটির সাইনবোর্ড। রাতের আঁধারে দেদার বালু ভরাট চলে। কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও পায় না।’
এলাকার মানুষের এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইল কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের এনওসি এবং বিভিন্ন বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া ছাড়া তেমন কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। আমাদের কাছেও অনেকে অভিযোগ দিয়েছে এমন দখল বাণিজ্যের বিষয়ে। তবে আমরা আইনগতভাবে কিছু করতে পারছি না। সরকারের অনেক সংস্থা রয়েছে। আশা করি তারা বিষয়টির দিকে নজর দেবে।’
সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য মধু সিটির মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানির চেয়ারম্যান ছলিম উল্লাহ ছলিম বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকেন। কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম দেখাশোনা করেন তার ভাই শাক্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব। তাকে বারবার ফোন করা হলেও রিসিভি করেননি। যদিও তিনি গত কয়েকদিন বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগদান করছেন।
মধু সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজি মমিনুল্লাহ প্রিন্সের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে এক ব্যক্তি রিসিভ করেন। পরে এ বিষয় সম্পর্কে জানার পর ভুল নম্বরে কল করা হয়েছে এবং তিনি ওই কোম্পানির কেউ নন বলে দাবি করেন। তবে বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে ওই নম্বরটি হাজি মমিনুল্লাহ প্রিন্স ব্যবহার করেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পরে প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া এবং কমিউনিকেশনের দায়িত্বে থাকা সাব্বির আহমেদ কালবেলাকে জানান, কোম্পানির মালিকরা বিদেশে রয়েছেন। তার কাছে প্রশ্ন লিখে পাঠানো হলে মধু সিটির চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্য সংগ্রহ করতে পারবেন কি না—জানতে চাইলে সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আগে আপনার (প্রতিবেদক) সঙ্গে পরিচিত হই, আপনার চাওয়া শুনি, এরপর দেখি আমরা আপনাকে কীভাবে সহায়তা করতে পারি।’
এই প্রতিবেদক নিজের বিস্তারিত পরিচয় দেওয়ার পর তিনি দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তার মাধ্যমে কোম্পানির ঊর্ধ্বতনদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অনুমোদনবিহীন আবাসন কোম্পানির নামে বিস্তীর্ণ এলাকা দখলের বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান কালবেলাকে বলেন, ‘কেরানীগঞ্জ এলাকাটি ঢাকার আশপাশের অন্যতম শস্যভান্ডার। সেই এলাকাটিতে যে দোর্দণ্ড প্রতাপে ভূমি ব্যবসায়ীরা আবাসন প্রকল্প করছে, যার অধিকাংশ অনুমোদনহীন, সেখানে রাজউকের উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ এবং মনিটরিং শূন্যের কোঠায়। কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ দরকার। যদিও আবাসন কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে অধিকাংশ এলাকা নষ্ট করে ফেলেছে।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে অনুমতির তোয়াক্কা না করেই পুকুর, জলাশয়, কৃষিজমিগুলো ভরাট করে। ওই সময় রাজউক চুপ থাকে। ভরাট শেষ হলে রাজউক সেখানে যায়। তখন বলা হয়, ভরাট যেহেতু হয়ে গেছে অনুমোদন দিয়ে দেন। এভাবেই চলছে। এমন চক্র যতদিন থাকবে, ততদিন পরিকল্পনা অনুযায়ী শহর গড়ে উঠবে না।’