ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল ও দুই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নালিশ করেছেন জামালপুর-শেরপুর সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হোসনে আরা। লিখিত চিঠিতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সামনে তাকে ধাক্কা ও থাপ্পড় মারার অভিযোগ করেন এই নারী এমপি। এসব বিষয়ে জানতে বারবার ফোন করা হলেও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল কল রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে এরই মধ্যে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ কালবেলাকে বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
গত ১৮ আগস্ট এ-সংক্রান্ত পৃথক দুটি চিঠি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বরাবর পাঠান হোসনে আরা। লিখিত অভিযোগে তিনি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও তার ভাই দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল আলম এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। জানতে চাইলে হোসনে আরা কালবেলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও জেলা আওয়ামী লীগ বরাবর চিঠি দিয়েছি।
চিঠিতে হোসনে আরা অভিযোগ করেন, শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে গত ১১ আগস্ট থেকে আমি এলাকায় অবস্থান করছি। নির্বাচনী এলাকায় সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছি। তার ধারাবাহিকতায় ১৬ আগস্ট নিজ উদ্যোগে শোক দিবসের দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার
আয়োজন করি। ইসলামপুর আওয়ামী লীগের সব সদস্যকে অংশগ্রহণের অনুরোধ করি; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে আমার শোকসভায় কাউকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। অথচ এর আগে ১২ আগস্ট ইসলামপুর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় কোনো ধরনের ফোনকল বা দাওয়াতপত্র ছাড়াই অংশ নিই। দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করি, আমাকে কোনো খবর দেওয়া হয়নি কেন। সেখানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তিনি আমার দিকে তেড়ে আসেন এবং অশালীন ভাষায় হুমকি দেন। পাল্টা প্রশ্ন করেন আপনি কে? তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিই। উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং সদস্য হিসেবে আমাকে কেন দাওয়াতপত্র, মেসেজ বা ফোনকল করা হয় না। এ কথা বলতেই ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। উগ্র ভাষায় বলতে থাকেন, আপনি কে? তখন আমি ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সামনে প্রতিবাদ করলে তিনিও আমার দিকে তেড়ে আসেন। আমাকে ধাক্কা দিতে গেলে আমি আত্মরক্ষার্থে হাত এগিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি। তখন তার থাপ্পড়টি আমার হাতে এসে লাগে।
চিঠিতে তিনি আরও বলেন, একজন পুরুষ দ্বারা নারী সংসদ সদস্যের গায়ে হাত তোলায় আমি মনে করি, পুরো জাতিকে অপমান করা হয়েছে। এর দায়ভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
বিচার দাবিতে নারী সমাজের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন: নারী এমপি হোসনে আরাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে স্থানীয় নারী সমাজ। গত শনিবার বিকেলের দিকে ইসলামপুর পৌর শহরের রেলগেটপাড় থেকে মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে থানা মোড়ের বটতলা চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হোসনে আরাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা পরিকল্পিত। তিনি ইসলামপুরের কৃতী নারী। এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দলের নীতিনির্ধারক নেতারা তাকে ভালো জানেন এবং একজন কৃতী নারীর চোখে দেখেন। তাকে অপমান করা মানে গোটা নারী সমাজকে অপমান করা। তারা অনতিবিলম্বে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার ও তার আইনগত বিচারের দাবি জানান।
মন্তব্য করুন