আত্মপ্রকাশের পর সাংগঠনিক বিস্তৃতি বাড়াতে জোরেশোরে কাজ করছে দেশের নবাগত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত এক মাস সাংগঠনিক কাঠামো গঠনে সময় দিয়েছে দলটি। ইফতার-রাজনীতি ছাড়া সেভাবে কোনো কর্মসূচিতে না গেলেও ঈদের পর বড় কর্মসূচিতে যাওয়ার ছক কষছে দলটি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিচার এবং তাদের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে ভালোভাবে রাজপথে সক্রিয় থাকার চিন্তা করছে তারা।
এনসিপি সূত্রে জানা যায়, ঈদের পর থেকেই মূলত রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াতে চায় দলটি। আওয়ামী লীগের বিচারসহ নতুন নতুন এক গুচ্ছ দাবিতে মাঠে থাকার মাধ্যমে নিজেদের জানান দেবে এনসিপি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি জানালেও এবার সরাসরি মাঠের কর্মসূচি থাকবে।
এ ছাড়া জেলা-উপজেলায় পথসভা এবং বিভাগীয় মহাসমাবেশ করার চিন্তা করছে দলটি। বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে দলের আহ্বায়ক ও সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম উপস্থিত থাকবেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। জুলাই গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে এনসিপির কর্মসূচি রমজানের পর বেগবান হবে বলেও জানান তারা।
এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, ঈদের পর নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু হবে। নিবন্ধনের প্রস্তুতির জন্য একটি বিশেষ টিম গঠন করা হচ্ছে। ইসির গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দল নিবন্ধনের জন্য ২০ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
নিবন্ধন পেতে একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় দলীয় কার্যালয় থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবেন। এ ধাপগুলো ঈদের পরপরই শেষ করতে চায় এনসিপি। এপ্রিলের মধ্যে দেশের অধিকাংশ জেলা, উপজেলা-থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় কমিটি গঠনের লক্ষ্য রয়েছে দলটির।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব কালবেলাকে বলেন, আমরা এই রমজানের মধ্যে প্রায় ২০০টি উপজেলা পর্যায়ে ইফতার পার্টি এবং মতবিনিময় সভা করেছি। এ ছাড়া সারা দেশেই নেতাকর্মীরা নিজ নিজ উদ্যোগে ইফতার পার্টির মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। ঈদের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা কমিটি গঠন এবং কার্যালয় স্থাপনে কাজ করব। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য জায়গা খোঁজার কাজ চলছে। আশা করি, ঈদের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন করতে পারব। এ নিয়ে এনসিপির একটি টিম কাজ করছে।
নির্বাহী আদেশের বদলে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে এনসিপি। সে দাবিতে ঈদের পর কর্মসূচিও পালন করবেন তারা। তার আগে গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানাবেন তারা। এ নিয়ে ঈদের পর ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে কর্মসূচি পালন করার চিন্তা করছে দলটি। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো যাতে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে না পারে, সেটিও চায় এনসিপি।
আওয়ামী লীগ যাতে রাজনীতিতে সক্রিয় না হতে পারে এবং তাদের পুনর্বাসনের কোনো চেষ্টা যাতে কেউ করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবে এনসিপি। গত ২২ মার্চ পুরান ঢাকায় এক ইফতার অনুষ্ঠানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের কোনো ধরনের পরিকল্পনা করা হলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
একই দিন বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে এক কর্মসূচি থেকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, তারা নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চান না। দলটির দ্রুত বিচার দাবি করেন তিনি।
এ দাবিতে এনসিপির কর্মসূচির বিষয়ে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কালবেলাকে বলেন, ঈদের পর দলের নিবন্ধনের শর্ত পূরণ আমাদের প্রধান কাজ হবে। এর বাইরে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং তাদের যেন বিচার হয়, দল হিসেবে সেটা নিয়ে আমাদের কিছু কর্মসূচি থাকবে। এ ছাড়া সাংগঠনিক বিস্তৃতির জন্য বিভাগীয় সমাবেশসহ বেশ কিছু কর্মসূচি থাকবে।
এনসিপিরি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ গত ১৫-১৬ বছরে সব ধরনের হত্যা, গণহত্যা, গুমের ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী। তারা রাজনৈতিকভাবেই এ হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছে, তারা বিরোধী দল ও মতকে দমন করেছে। এসব কিছুর বিচার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সে বিচারের জন্য আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ আমরা যদি বিচার ছাড়াই সামনে অগ্রসর হই, তাহলে এ বিচারগুলো বাংলাদেশে হবে কি না, তা আমরা জানি না।
তিনি বলেন, ঈদের পর এনসিপির কার্যক্রম সারা দেশে চলবে, সারা দেশে কর্মসূচি পালন হবে। বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচন থাকবে এনসিপির মূল এজেন্ডা।
সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সারা দেশে কমিটি গঠনের কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি। মানুষের পজিটিভ রেসপন্স আমরা পাচ্ছি। আমরা আশাবাদী অল্প সময়ের মধ্যেই নির্বাচনে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য যে শর্তাবলি পূরণ করতে হয়, সেগুলো জাতীয় নাগরিক পার্টি পূরণ করতে সক্ষম হবে। এর মধ্য দিয়ে সামনের যে গণপরিষদ নির্বাচনের বাস্তবতা রয়েছে, সে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সক্ষমতা অর্জন করব।
মন্তব্য করুন