১৯৯৫ সালের দিকে চট্টগ্রামের রেলওয়ে পোর্টস গুডস ইয়ার্ডে (সিজিপিওয়াই) এক রেলওয়ে কর্মচারী মারা গেলে তাকে ‘বহিরাগত’ বলে চট্টগ্রাম বন্দর কবরস্থানে দাফনে অস্বীকৃতি জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বাধ্য হয়ে রেলওয়ের কর্মচারীরা সিজিপিওয়াই মসজিদ এবং শতবর্ষী হযরত কুতুব বিল্লাহ শাহ মাজারের পাশে থাকা কবরস্থানে দাফন করেন। সেই সময় দাফনকৃত জমিটি ছিল শুধুই একটি জঙ্গল ও পরিত্যক্ত জলাভূমি। পরবর্তী সময়ে রেলওয়ে কর্মচারীরা ধীরে ধীরে এটি একটি কবরস্থানে রূপান্তর করেন এবং তাদের আপনজনদের এখানে শায়িত করতে থাকেন। অন্তত ৪৫০ জন ব্যক্তির কবর রয়েছে এই কবরস্থানে।
রেলওয়ে কর্মচারীদের অভিযোগ, এনবিআরের নিয়ম ভেঙে সিজিপিওয়াই এলাকায় ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সাইফ পাওয়ারটেক নামের একটি বেসরকারি কোম্পানিকে ২১ দশমিক ২৯ একর জমি ইজারা দিয়েছে। সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্স এবং কনটেইনার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের মধ্যে রেল কর্মচারীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও এই চুক্তি সই হয়েছে।
ইজারার জমিটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরোনো কবরস্থান, মসজিদ এবং মাজার আছে বলে সংবাদ প্রকাশ হলে এবং কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে কবরস্থানে কিছু হবে না বলে সিদ্ধান্ত থেকে ২০২২ সালে সরে আসে রেল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। রেলওয়ে কর্মচারী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে এখানে কাজ শুরু করেছে সাইফ পাওয়ারটেক।
এর প্রতিবাদে এবং ইজারা বাতিলের দাবিতে ঈদের পর রেলওয়ের সিআরবি ভবন ঘেরাও ও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সম্প্রতি নগরীর হালিশহর সিজিপিওয়াই গেটে এক মানববন্ধন থেকে এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, সারা দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে সিজিপিওয়াই থেকে পণ্য ও জ্বালানি তেল পরিবহন। বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়, তা সিজিপিওয়াই হয়ে সারা দেশে চলে যাচ্ছে স্বল্প সময়ে এবং স্বল্পমূল্যে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রেলের পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে রাজস্ব আয়ের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে এই সিজিপিওয়াই। আমাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে কিছু সুবিধাভোগী কর্মকর্তা রেলওয়ের কবরস্থান, মসজিদ এবং মাজার ও সোবহান স্মৃতির স্থাপনার তথ্য গোপন করে রেলওয়ে জমি ইজারা দিয়েছে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য।
কবরস্থান কমিটির সভাপতি এবং সিজিপিওয়াইয়ের চিফ ইয়ার্ড মাস্টার আব্দুল মালেক কালবেলাকে বলেন, একজন মানুষ মারা গেলে তার শেষ ঠিকানা এই কবরস্থান। কর্তৃপক্ষ তথ্য গোপন করে আমাদের কাউকে না জানিয়ে, আলোচনা না করেই এই কবরস্থানের জমি ইজারা দিয়েছেন। সরকার তার জমি ইজারা দিতেই পারে; কিন্তু কবরস্থান, মসজিদ, মাজার কেন ইজারা হলো, সেই প্রশ্ন আমাদের।
তিনি বলেন, এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আমাদের আপনজনদের শেষ স্মৃতি। এই স্মৃতি রক্ষার জন্য আমরা সমবেত হয়েছি। এখানে হাত দেওয়া যাবে না। ঈদের পর আমরা সিআরবিতে বিশাল সমাবেশ করব। দাবি না মানলে আমরা আন্দোলনে যাব।
এ প্রসঙ্গে রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সুবক্তগীন বলেন, ইজারার বিষয়ে বিস্তারিত না জেনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে রেল হচ্ছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এখানে সাধারণ মানুষ বা বসবাসকারীদের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
মন্তব্য করুন