শেখ হারুন
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১১:০৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ড্রেন-কালভার্ট বানানো শিখতে বিদেশ ভ্রমণ!

এলজিইডি
ড্রেন-কালভার্ট বানানো শিখতে বিদেশ ভ্রমণ!
ড্রেন-কালভার্ট । ছবি: সংগৃহিত

দেশের হাটবাজার, সড়ক, কালভার্ট, ড্রেন এবং ছোট-বড় সেতুর মতো গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে এসব অবকাঠামো নির্মাণকাজ করে আসছে সংস্থাটি। এবার গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের মতো কাজ শিখতে বিদেশ যেতে চান এলজিইডির কর্মকর্তারা। বৈদেশিক প্রশিক্ষণের নামে অগ্রিম অর্থও আবদার করেছেন তারা।

সম্প্রতি মানিকগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব করেছে এলজিইডি। ওই প্রকল্প প্রস্তাবে বিদেশ ভ্রমণের আবদার করা হয়েছে। এজন্য প্রকল্পের আওতায় অগ্রিম ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এদিকে, সরকারি অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপরও নিজেদের নিয়মিত কাজ শিখতে অবকাঠামো উন্নয়নে অভিজ্ঞ সংস্থাটির বিদেশ যেতে চাওয়ার এমন আবদারে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনেরও প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজার, সড়ক, কালভার্ট এবং সেতু নির্মাণ করতে চায় স্থানীয় সরকার বিভাগ। ‘মানিকগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এসব অবকাঠামো নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা। চলতি বছরে শুরু হয়ে ২০২৯ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে চার বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি।

প্রস্তাবনা বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার জনগণের আর্থসামাজিক এবং শিল্পসমৃদ্ধ এলাকাভিত্তিক নেটওয়ার্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় সহজ এবং নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, শিল্পজাত পণ্যের বাজারজাতকরণের সুবিধা বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ জনগণের বাণিজ্যিক সুবিধা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মানিকগঞ্জ জেলার নিবন্ধিত ৪২৭ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ, শিল্প এলাকা ও গ্রামীণ হাটবাজার এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণ, গ্রাম, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে শহরের সুবিধা গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সম্প্রসারণ ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সুযোগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করা।

আলোচ্য প্রকল্পের প্রস্তাবনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রস্তাবিত ডিপিপিতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে অগ্রিম হিসেবে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শুধু বিদেশ প্রশিক্ষণ নয়, চালকের সংস্থান না থাকলেও অধিক সংখ্যক গাড়ি কেনার আবদার করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ, আপ্যায়ন, বেতন-ভাতা বাবদ অত্যধিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। রয়েছে পরামর্শক খাতেও অধিক ব্যয় প্রস্তাব। এ ছাড়া বেশ কিছু খাতে অযৌক্তিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।

ব্যয় বিভাজন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রকল্পের আওতায় দুটি জিপ, ৭টি ডাবল কেবিন পিকআপ এবং ১১টি মোটরসাইকেলসহ মোট ২০টি যানবাহন কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অধিক পরিমাণে গাড়ি কেনার প্রস্তাব করা হলেও পর্যাপ্ত চালকের সংস্থান রাখা হয়নি। এ ছাড়া, যানবাহন মেরামত খাতে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া, পরামর্শকদের জন্য ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, প্রচার বিজ্ঞাপন বাবদ ৭৮ লাখ, কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ লাখ, আপ্যায়নের জন্য চাওয়া হয়েছে ২০ লাখ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। আউটসোর্সিং স্টাফদের জন্য ৭ কোটি, আসবাবপত্র খাতে ১২ লাখ, সড়ক নিরাপত্তা খাতে ২ কোটি, পরিবেশগত খরচ ৪ কোটি ২৭ লাখ, পুনর্বাসন খাতে ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।

এলজিইডির প্রস্তাবটি প্রশ্নের মুখে পড়েছে পরিকল্পনা কমিশনেরও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্প যাচাই-বাছাই করছে পরিকল্পনা কমিশন। যাচাই-বাছাইয়ে বিদেশ প্রশিক্ষণ এবং গাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন খাতে এলজিইডির ব্যয় প্রস্তাবকে অত্যধিক মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। একই সঙ্গে আলোচ্য প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে যাচ্ছে কমিশন। পাশাপাশি অযৌক্তিক বিভিন্ন খাতের অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব এবং প্রস্তাবনায় বিভিন্ন অসংগতির বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে এবং অযৌক্তিক প্রস্তাবগুলো বাদ দিতে বলা হবে।

সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, বর্তমানে যেহেতু সরকারি অর্থায়নে বিদেশ প্রশিক্ষণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই এটা অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ নেই। পিইসি সভায় এটা বাদ দিতে বলা হবে। এ ছাড়া গাড়ি কেনাসহ অন্য যেসব খাতে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলো বাদ দেওয়া। চাইলেই অযৌক্তিক কোনো কিছুই অনুমোদন দেওয়া হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাইকোর্টের ৯ নির্দেশনা মেনে করতে হবে অনলাইন ব্যবসা

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বাদ দেওয়ায় এডমিনকে গুলি করে হত্যা

যুদ্ধবিধ্বস্ত হাজারো গাজাবাসীকে প্রতিদিন ইফতার করাচ্ছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ / গভীর রাতে আদালতে শুনানি, ৪ আসামি রিমান্ডে

শক্তি বাড়ছে চীনের, টার্গেটে কি ভারত?

ময়মনসিংহে অটোরিকশা-ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ৩

প্রকৃতিতে পসরা সাজিয়েছে চোখজুড়ানো বরুণ ফুল

সকালের শুরুতেই তীব্র যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

জবি ঊষার নতুন নেতৃত্বে নাইম-লিশা

১০

ওআইসির সদস্যপদ ফিরে পেল সিরিয়া

১১

ইতিহাস গড়তে ডালাস যাবে ব্যান্ড নগর বাউল

১২

বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ পোশাক শ্রমিক নিহত

১৩

মাগুরার সেই শিশুটির সবশেষ অবস্থা

১৪

কানাডা কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিল?

১৫

জামা না কেনায় মার্কেটে দুই তরুণীকে ‘জিম্মি’, সাংবাদিককে হেনস্তা

১৬

আজ সারা দেশে ছাত্রদলের মানববন্ধন কর্মসূচি

১৭

টিভিতে আজকের খেলা

১৮

সাবেক এমপির বাড়ি দখল করা সেই নারী সমন্বয়ক গ্রেপ্তার

১৯

বাবা হারালেন অভিনেত্রী রুনা খান

২০
X