বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১০ এএম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ক্যান্সার ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে পারে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ
ক্যান্সার ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে পারে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস

দেশে অনুমিত ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। প্রতি বছর আড়াই থেকে ৩ লাখ রোগী নতুন করে এই পরিসংখ্যানে যুক্ত হয়। এদের একটা বড় অংশ চিকিৎসার বাইরে থেকে যায়, একটা অংশ অপচিকিৎসার দ্বারস্থ হয়। সর্বোচ্চ এক-চতুর্থাংশ রোগী সঠিক চিকিৎসার সন্ধান পান, যাদের আবার অর্ধেকই আসেন দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ে। যখন চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ায় সম্ভাবনা নিম্নমুখী। এমনকি অনেকের পক্ষে ক্যান্সার চিকিৎসার বিপুল ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হয় না, এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ ৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ইউনাইটেড বাই ইউনিক’।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক রোগীকে ক্যান্সার ঝুঁকিমুক্ত রাখা সম্ভব। ক্যান্সার হওয়ার চেয়ে না হওয়ার দিকে নজর দেওয়া বেশি জরুরি। কারণ এতে ব্যাস্টিক ও সামস্টিক অর্থনীতিতে চাপ বাড়ে। শারীরিক কষ্ট ও যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু তো বলাই বাহুল্য।

এ প্রসঙ্গে ক্যান্সার রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, বিশ্বায়নের প্রভাবে বাংলাদেশেও ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, ক্যান ফুডের ব্যবহার বেড়েছে। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণ চিনি, লবণ ও ট্রান্সফ্যাটের (রূপান্তরিত চর্বি) মতো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান থাকে। এসব খাবার যেমন হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি করে, একই সঙ্গে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্যও দায়ী। এ ছাড়া আরেকটি ক্ষতিকর খাবার হলো রেড মিট বা পশুর মাংস। এসব খাবার এড়িয়ে শাকসবজি ও ফলমুল খাওয়া উচিত। পাশাপাশি আঁশযুক্ত খাবারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ বলেন, শুধু স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ক্যান্সার ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব।

জাঙ্ক ফুড ক্যান্সারের একটি বড় ঝুঁকির কারণ। চিনি আছে বলেই সোডা পানীয় ক্ষতিকর নয়, এটি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। গ্রিল করা বা ঝলসানো মাংস খেতে যারা ভালোবাসেন, তারা ক্যান্সারের বিপদে রয়েছেন। কারণ, ঝলসানো মাংস প্রস্তুতে উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়, যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হাইড্রোকার্বন তৈরি করে। এ ছাড়া বেশিরভাগ মাইক্রোওয়েভ পপকর্নের প্যাকেটের গায়ে থাকে ‘পারফ্লুরোঅক্টানোইক অ্যাসিড নামক রাসায়নিক উপাদান, যা স্তন, বৃক্ক, মূত্রথলি, কোলোরেক্টাল, প্রোস্টেট, ফুসফুস, থাইরয়েড, লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা ক্যান্সারের জন্য দায়ী। ক্যানে থাকা খাবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য হাইড্রোজেনেইটেড অয়েল বা ট্রান্স-ফ্যাট ব্যবহার করা হয়। গবেষকরা দেখেছেন, বাণিজ্যিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা খাবারে থাকা ‘হাইড্রোজেনেইটেড’ ও আংশিক ‘হাইড্রোজেনেইটেড’ উদ্ভিজ্জ তেল স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় দ্বিগুণ।

বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে ব্যবহার হয় বিভিন্ন জীবণুরোধকারী ওষুধ, কীটনাশক ও অন্যান্য ‘কারসিনোগেনিক রাসায়নিক উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম সুইটেনারগুলো শরীরে টক্সিন ডি কেপি তৈরি করে এবং মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

আটা পরিশোধনের সময় এর প্রায় সব পুষ্টিগুণই নষ্ট হয়ে যায়। পরে একে ক্লোরিন গ্যাসের সাহায্যে ব্লিচ করা হয় ক্রেতার চোখে আকর্ষণীয় করার জন্য। এই আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রাও অনেক বেশি। নন-অর্গানিক ফল বা সবজি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। কিন্তু চাষের সময় এদের ওপর যে কীটনাশক স্প্রে করা হয়, তা স্বাস্থ্যকর নয়।

প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে—এমন তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। প্রক্রিয়াজাত মাংস বলতে সসেজ, হট ডগ এই ধরনের মাংস থেকে প্রস্তুত খাবারে অন্ত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। হাইড্রোজেনেইটেড ভেজিটেবল অয়েলে ভেজে তৈরি করা হয় চিপস, সঙ্গে থাকে অতিরিক্ত লবণ। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন মাত্র ১ আউন্স চিপস খেলেই বছরে গড়ে প্রায় দুই পাউন্ড ওজন বাড়তে পারে। আলুর চিপসকে মচমচে বানানোর জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা হয়। এতে অ্যাক্রিলামাইড নামক কারসিনোজেন ধরনের বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়। এসব উপাদানই ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

অন্যদিকে জিএমও হচ্ছে জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম। কখনো জিইও বা জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড অর্গানিজম বলা হয়। ডিএনএ পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে অর্গানিজমকে জেনেটিক্যালি মেনিপুলেট করে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন করা হলে ওই অর্গানিজমকে জিএমও বলে। গবেষণায় প্রতীয়মান হয় যে, জিএম ফসলে অন্য জীব থেকে ঢুকানো জেনেটিক ইনফরমেশন মানুষের পাকস্থলী ও ইনস্টেস্টাইনের মাধ্যমে হজম হতে পারে না। কিন্তু রক্তের মাধ্যমে সাধারণ ডিএনএর সঙ্গে মিশে যেতে পারে। এর ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা শত ভাগ বেড়ে যায়।

অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল বাড়তে পারে। রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল বেশি পরিমাণে বাড়লে প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ হতে পারে, এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রক্রিয়াজাত ও কৃত্রিম চিনি শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে সহায়ক। মেডিসিনে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত জার্মান চিকিৎসক ওটো ওয়ারবার্গ ১৯৩১ সালে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন যে, টিউমার ও ক্যান্সার কোষ বেড়ে উঠতে উচ্চ মাত্রায় ‘ফ্রক্টোজ’ যুক্ত চিনির ওপর নির্ভরশীল।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পুরোনো শত্রু মিত্র হওয়ার অনেক উদাহরণ আছে : উপ-প্রেস সচিব

গাজীপুরে দুই শিশুকে হত্যা, পুলিশ হেফাজতে বাবা-মা

‘নতুন করে আর কোনো সরকারকে স্বৈরাচার হতে দেওয়া হবে না’

অনার্স পড়ুয়া ভাগ্নের হাত ধরে মামি উধাও

পররাষ্ট্রনীতিতে পারদর্শী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ : ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

লালবাগে রহমতুল্লাহ স্কুল মিলনায়তনে জিয়াউর রহমানের নাম পুনঃস্থাপন

পূর্ণিমায় মজেছেন নেটিজেনরা

বরিশাল সিটি করপোরেশনে ফল বাতিলের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের মামলা

২১ শতকের ‘চেঙ্গিস খান’ হতে চান ইলন মাস্ক

ড. ইউনূসকে ৫ বছর ক্ষমতায় রাখার দাবিতে ঢাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

১০

সমন্বয়ক পরিচয়ে ২ লাখ টাকা দাবি, ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৪ 

১১

‘মব’ করে পুকুরের মাছ লুট, মামলার পর বাদীর বাড়িতে হামলা

১২

বিশ্বমঞ্চে পৌঁছেছে গল্প, ফাতিমা রয়ে গেছেন গাজায় মাটির নিচে

১৩

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ

১৪

ইসরায়েলে ঝাঁকে ঝাঁকে নামছে মার্কিন সামরিক বিমান

১৫

জাতীয় জাদুঘরে শুরু তিন দিনের দুর্লভ মুদ্রা প্রদর্শনী

১৬

চাঁদা না পেয়ে প্রকাশ্যে গুলি, মারধরে আহত ১

১৭

আ.লীগ নেতা শাহে আলম মুরাদসহ দুজন রিমান্ডে

১৮

আফিল লেয়ার ফার্মে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

১৯

শারীরিক নির্যাতনের শিকার শিশুর খোঁজ নিলেন তারেক রহমান

২০
X