কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীন সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর এবং ফিজিক্যাল এডুকেশন ইন্সট্রাক্টর পদে ৩ হাজার ৫৩৪ জনকে নিয়োগ দিতে গত ২৩ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে অনুষ্ঠিত এই নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে শুরু থেকেই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এরপর প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ধরা পড়ে পিএসসির আলোচিত ড্রাইভার আবেদ আলীসহ ২২ জন। এ ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। এরই মধ্যে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে আদালতে আবেদ আলী ও তার চক্রের ৮ সদস্য দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
সূত্রমতে, সংস্থাটির তদন্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আবেদ আলী চক্রের ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছেন—এমন ১২০ জনকে চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করেছে সিআইডি। আবেদ আলী ও তার ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, অপরাধীদের সঙ্গে তাদের কথোপকথন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তারা সরাসরি আবেদ আলীর কাছ থেকে ইন্সট্রাক্টর, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর, রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী, ৪৬তম বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন কিনেছেন।
ওই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের অনেকের নাম খুঁজে পাওয়া গেছে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর এবং ফিজিক্যাল এডুকেশন ইন্সট্রাক্টর পদে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপনেও। পাশাপাশি সিআইডির উদ্ধারকৃত ডিজিটাল আলামত, অভিযুক্তদের আদালতে দেওয়া জবানবন্দি এবং ব্যাংক লেনদেন ও কালবেলার নিজস্ব অনুসন্ধানেও ফাঁস হওয়া প্রশ্নে নিয়োগ পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। গত ১৯ ডিসেম্বর কালবেলায় প্রকাশিত প্রশ্নফাঁসের প্রতিবেদনে যে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল, তাদের সবাই নিয়োগ প্রজ্ঞাপনে জায়গা পেয়েছেন। চাকরি হয়েছে আবেদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-(ডুয়েট) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান মান্নারও।
জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। চার্জশিট দিতে একটু সময় লাগবে। আমরা একটা অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দিচ্ছি। ৩০ জানুয়ারির মধ্যেই এটি আদালতে জমা দেওয়া হবে।’
ফাঁস প্রশ্নে চাকরি পেয়েছেন যারা:
আবেদ চক্রের প্রশ্নফাঁসের অর্থ লেনদেনে ১১৫টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব হিসাবে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবেদ ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ১২টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি হিসাবেই বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার আগে বিপুল অর্থের লেনদেন হয়েছে। আর যেসব ব্যক্তি ওই হিসাবগুলোতে টাকা পাঠিয়েছেন, তাদের সবারই চাকরি হয়েছে। তাদের মধ্যে মাহমুদ হাসান মান্না জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/সিভিল) পদে মেধাতালিকায় ২৪০তম হয়ে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে যোগ দিতে চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়েছেন। আবেদ আলীর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও মান্নার কথা উল্লেখ আছে। মান্না তাকে রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষায়ও ১১ জন প্রার্থী দিয়েছিলেন। মান্না ডুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আবেদ পরিবারের সঙ্গে তার গভীর ব্যবসায়িক যোগাযোগ রয়েছে। মান্না, আবেদ, তার স্ত্রী শিল্পী এবং সন্তান সিয়ামের যৌথ মালিকানায় ১১ দশমিক ১৮ অযুতাংশ জমি ক্রয় বাবদ ৫০ লাখ টাকার একটি বায়নানামার দলিল সংগ্রহ করেছে কালবেলা। দলিলে জমিটির মোট দাম সাড়ে ১০ কোটি টাকা। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ওই জমির দলিল দিয়ে আবেদ ও মান্না একটি যৌথ হিসাব খোলেন। এই হিসাবের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পিএসসির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার আগে-পরে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। হিসাবটিতে ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত মাত্র দেড় বছরে ৯৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৪৩ টাকা জমা হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি টাকা জমা হয়েছে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে। ওই মাসের ১৮ তারিখ ছিল কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ইন্সস্ট্রাক্টর ও জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরের নিয়োগ পরীক্ষা। পরীক্ষার পরদিন ১৯ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ দিনে মান্না ও আবেদ আলীর যৌথ হিসাবটিতে জমা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৯ মার্চ, অর্থাৎ পরীক্ষার পরের দিন রাজীব ঘরামি ও শম্পা বেপারি নামের অগ্রণী ব্যাংকের একটি যৌথ হিসাব থেকে আবেদ ও মান্নার হিসাবে ১০ লাখ টাকা ট্রান্সফার করা হয়। এর কিছুদিন আগে অ্যাকাউন্টটি খোলা হয় এবং এতে অন্য কোনো লেনদেন নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, রাজীব ঘরামি ও শম্পা বেপারির চাকরি হয়েছে। রাজীবকে বরিশালে আর শম্পাকে পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া মিঠুন চন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তি রূপালী ব্যাংকের একটি হিসাব থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ১৯ তারিখ আবেদ-মান্নার হিসাবে ১৮ লাখ টাকা পাঠান। এই মিঠুনও চাকরি পেয়েছেন। তালিকায় ৬৩ নম্বরে থাকা মিঠুনকে পদায়ন করা হয়েছে ভোলায়।
আবেদ-মান্নার হিসাবে টাকা পাঠানো আরেক ব্যক্তি হলেন মোবারক হোসেন। তিনি মোট ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, মোবারক হোসেনের মেধাক্রম ১০২। তিনি জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/মেকানিক্যাল) পদে ময়মনসিংহ পলিটেকনিকে চাকরি পেয়েছেন। এ ছাড়া ১৭ মার্চ আলোচিত ওই যৌথ হিসাবটিতে আরিফুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ২ লাখ ৯১ হাজার টাকা ক্যাশ ডিপোজিট করেন। এই আরিফুরও জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন) পদে নাইক্ষ্যংছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে নিয়োগ পেয়েছেন। শুধু আবেদ নয় কিংবা মান্না নয়, আবেদের স্ত্রী শাহরিন আক্তার শিল্পীর ব্যাংক হিসাবেও অনেকে অর্থ জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি হিসাবে ২০২৩ সালের ১৩ মার্চ ২ লাখ টাকা জমা দেন উত্তম সরকার। এই উত্তমও টেক/সিভিল ক্যাটাগরিতে মেধাতালিকায় ১৭ নম্বরে জায়গা করে চাকরি পেয়েছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। টাকা লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তম সরকার কালবেলাকে বলেন, তিনি এমসি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার বসের হয়ে টাকা পাঠিয়েছেন। আবেদ আলী বা শিল্পী নামে কাউকে তিনি চেনেন না।
আবেদের তালিকা থেকে চাকরি হয়েছে যাদের
২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরের প্রজ্ঞাপনে সিআইডির ১২০ জনের এ তালিকা থেকে কয়েক ডজন পরীক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৬ নম্বর মেধাক্রমে ঢাকা পলিটেকনিকে মো. আল আমিন, ২৪ নম্বর মেধাক্রমে ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকে জেসমিন আক্তার, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/কম্পিউটার) শাখায় ১১২ নম্বর মেধাক্রমে রাজশাহী পলিটেকনিকে আব্দুল্লাহ আল মামুন, ১৭৪ নম্বর মেধাক্রমে টাঙ্গাইল পলিটেকনিকে মো. আল আমিন নিয়োগ পেয়েছেন। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/ ইলেকট্রিক্যাল) পদে ৬ নম্বর মেধাক্রমে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিকে চিরন তঞ্চংগ্যা, ১৪ নম্বর মেধাক্রমে সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিকে মো. রুহুল আমিন, ৬৯ নম্বর মেধাক্রমে রাজশাহী পলিটেকনিকে মো. মেহেদী হাসান, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/ইলেকট্রনিকস) পদে ১৪ নম্বর মেধাক্রমে টাঙ্গাইল পলিটেকনিকে মো. রবিউল ইসলাম, ১১৬ নম্বর মেধাক্রমে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিকে মিল্টন চন্দ্র দাস নিয়োগ পেয়েছেন। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন) পদে ৩ নম্বর মেধাক্রমে নওগাঁ পলিটেকনিকে কে এম আসিফ মাহবুবকে নিয়োগ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ইলেকট্রো মেডিকেল পদে ৭ নম্বর মেধাক্রমে বরিশাল পলিটেকনিকে রাজীব চন্দ্র, টেক/ফুড পদে ১৩ নম্বর মেধাক্রমে নরসিংদী পলিটেকনিকে সুজন কুমার সাগর, টেক/পোলট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং পদে ৩ নম্বর মেধাক্রমে শেরপুর পলিটেকনিকে মো. শাকিল আহমেদ, টেক/এনভায়রনমেন্ট পদে ১ নম্বর মেধাক্রমে সাতক্ষীরা পলিটেকনিকে সৌমেন চক্রবর্তী, টেক/সিরামিক পদে ৭ নম্বর মেধাক্রমে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক্সে মো. সোলায়মান হোসেন নিয়োগ পেয়েছেন। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং বেসিকস) পদে ৫০ নম্বর মেধাক্রমের শৈলকুপা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মো. মেহেদী হাসান, ১২৪ নম্বর মেধাক্রমে গোপালগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মো. আরিফুল ইসলাম, টেক/ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন পদে ৭৫ নম্বর মেধাক্রমে সৈয়দপুর সরকারি পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মিজানুর রহমান, ৪০ নম্বর মেধাক্রমে রংপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মো. জিয়াউর রহমান, টেক/মেশিন অপারেশন বেসিকস পদে ৩৯ নম্বর মেধাক্রমে গৌরীপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মো. সাখাওয়াত হোসাইন, টেক ফিশ কালচার অ্যান্ড ব্রিডিং পদে ২ নম্বর মেধাক্রমে শুভ চক্রবর্তী, টেক/মোবাইল অ্যান্ড অটোমোবাইল বেসিকস পদে ১ নম্বর মেধাক্রমে জয়ন তঞ্চংগ্যা, টেক জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল পদে দ্বিতীয় মেধাক্রমে মেরিন চাকমা, টেক/মেকানিক্যাল পদে ৪ নম্বর মেধাক্রমে সুপ্রভ চাকমা, ৮ নম্বর মেধাক্রমে সুপম চাকমা চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়েছে।
৪৬ বিসিএস প্রিলিতেও উত্তীর্ণ আবেদ আলীর ফাঁস করা প্রশ্নপত্রে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিতে ১৬ জন টিকেছেন বলে তথ্য পেয়েছে সিআইডি। তাদের মধ্যে তিনজনের নাম পেয়েছে কালবেলা। তারা হলেন সুলতানা রিজিয়া, পিতার নাম মো. আব্দুল হালিম। রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ১১০১২৫৮৭। সাকিব আনোয়ার, পিতার নাম মো. আনোয়ার হোসেন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১১০১০০৮১ এবং এস এম আবির হোসেন, পিতা জয়নাল আবেদীন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ১১১১৮২৬৬।
সিআইডির অগ্রগতি প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে
প্রশ্নফাঁসের মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার তদন্ত সংক্রান্ত একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরি করেছে তদন্ত সংস্থাটি। আজ আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হতে পারে। প্রতিবেদনে সিআইডি উল্লেখ করেছে, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ, বিজ্ঞ আদালতে আসামিদের ফৌঃকাঃবি আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় ও অন্যান্য সাক্ষ্যে (উদ্ধারকৃত আলামত) আলোচ্য রিটের মূল বিষয়বস্তু বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) অধীন রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীসহ ৪৬তম বিসিএস ও অন্যান্য নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট ১২টি অগ্রগতির বিষয় উল্লেখ করেছে সিআইডি, যার মধ্যে রয়েছে আসামিদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে বিএফআইইউ বরাবর চিঠি, পিএসসিতে কর্মরত আসামিদের বিষয়ে অবগত করার জন্য বিপিএসসিতে চিঠি, গ্রেপ্তার আসামিদের ব্যবহারকৃত সিমগুলো উত্তোলন ও হস্তান্তর বন্ধ করা, আলামত হিসেবে জব্দকৃত টাকা ৮৩ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা, রেলওয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী ও ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সদস্যদের সরবরাহকৃত প্রশ্নপত্র পড়ানোর ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি বুথ উদ্ঘাটন, প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও উত্তীর্ণ হয়েছে—এমন ১৬ জন পরীক্ষার্থীকে সিআইডি অফিসে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে নোটিশ।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাদিম মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, ‘যাদের মেধা আছে কিন্তু টাকা নেই, তারা চাকরি পাচ্ছে না। ওদিকে আবেদ আলীরা দেশটাকে ধ্বংস করেছে। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের প্রক্রিয়াধীন বিষয়ে এভাবে তড়িঘড়ি ফল ও গেজেট প্রকাশের মানে হলো—
পিএসসি এখনো পুরোনো দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারেনি। জড়িতদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি চিহ্নিত প্রার্থীদের রেডমার্ক করতে হবে, তারা যাতে আগামীতেও কোনো চাকরির পরীক্ষায় বসতে না পারে।’
প্রশ্নফাঁসের তথ্য জানার পরও ফল প্রকাশ এবং প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে জানতে পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেমকে ফোন দেওয়া হলে প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে রাজি নই। আপনি আমাদের জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’ পরবর্তী সময়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে ফোন করলে তিনি জানান, ‘ভাই, আমি খুবই অসুস্থ। আমি কোনো কথা বলতে পারব না। আমি কোনো তথ্য দিতে পারব না।’