যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশটির ক্ষমতার চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন তিনি। স্থানীয় সময় সোমবার দুপুর ১২টার দিকে মার্কিন কংগ্রেসের হল ঘরে শুরু হবে শপথের আনুষ্ঠানিকতা। ঠান্ডার কারণে গত চার দশকের মধ্যে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান ইনডোরে হতে যাচ্ছে।
গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে ৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় অনেকের কপালেই চিন্তার ভাঁজ ফেলে। অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নিলেই নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ বন্ধ, সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণ, প্রতিবেশী দেশ কানাডা ও মেক্সিকোসহ চীনের পণ্য রপ্তানিতে নতুন করে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ ও জলবায়ু নীতি বাতিলের পরিকল্পনা এবং কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খাল নিয়ে নির্বাচনী প্রচার বা নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে তার বিভিন্ন মন্তব্যই এ উদ্বেগ বা চিন্তার কারণ। এতে অনেক কিন্তু ও প্রশ্ন সামনে আসে।
এ ছাড়া এখন পর্যন্ত প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চ পদের জন্য ট্রাম্প যাদের নাম ঘোষণা করেছেন, তাদের নিয়েও আপত্তি আছে বিরোধীদের। তাদের যুক্তি, ট্রাম্প শীর্ষপদগুলোতে যাদের নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন তাদের অনেকেই এসব পদের জন্য উপযুক্ত নন বা এসব দায়িত্ব সামলানোর মতো যথেষ্ট দক্ষতা তাদের নেই।
এরই মধ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী। ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত হয়ে আসা ‘দ্য পিপলস মার্চ’ নামের এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে—এমন আশঙ্কায় তারা পথে নেমেছেন। তাদের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তারা ‘ট্রাম্পিজম’-এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন।
এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি সম্প্রতি পর্নো তারকাকে ঘুষ দেওয়ার তথ্য গোপন করে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন। মার্কিন কংগ্রেসে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ঘেরা তার শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের মধ্যে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর আরবান, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। থাকবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্নিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামাও।
যেমন ছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ: দ্বিতীয় মেয়াদের মতো প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্পের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন একজন নারী। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি।
২০১৭ সালে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার মেয়াদকালে বিভিন্ন নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে আলোচনায় থেকেছেন তিনি। সে সময় বিভিন্ন ঘোষণা দেওয়ার জন্য বেশিরভাগ সময় তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুইটার (বর্তমানে এক্স) ব্যবহার করতেন। এ ছাড়া সেই মেয়াদে বিভিন্ন দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে বচসায়ও জড়াতে দেখা গেছে তাকে।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের আলোচিত-সমালোচিত বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে জলবায়ু ও বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়া, সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মানুষের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাসহ অভিবাসন সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধ জারি। সেই মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ বাধালেও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করতেও উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া রেকর্ড কর আদায়ের নীতি বাস্তবায়নকে প্রথম মেয়াদের ট্রাম্পের অন্যতম সাফল্য হিসেবে দেখা হয়।
নিজের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত হতে হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। তিনিই দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুবার অভিশংসিত হওয়া প্রেসিডেন্ট। তবে দুবারই ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদে তাকে অভিংশসিত করা হলেও রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন সেনেট তাকে বাঁচিয়ে দেয়।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শেষদিকে বিশ্বজুড়ে যে করোনাভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়ে, তার আঘাত যুক্তরাষ্ট্রেও লাগে। সে সময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় তার ভূমিকা এবং বিতির্কিত বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ট্রাম্পকে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১২ লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়, যার প্রভাব পরে ট্রাম্পের পরের নির্বাচনে।
পরে ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফের রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রার্থী হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে যান ট্রাম্প। তবে সে সময় তিনি ভোট চুরি ও নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন। এমনকি এসব অভিযোগ নিয়ে আদালতেও যান ট্রাম্প। তবে আদালত তার সব অভিযোগই খারিজ করে দেন; কিন্তু মানতে না পেরে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ওয়াশিংটনে সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশ করেন এবং তাদের ক্যাপিটলে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। সেদিন ট্রাম্প সমর্থকদের সেই সমাবেশ শেষ পর্যন্ত দাঙ্গায় রূপ নিলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প, যার জের ধরে তাকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হতে হয় প্রতিনিধি পরিষদে, যদিও সেনেটে তিনি খালাস পান। তবে ওই ঘটনার দিনে তার কর্মকাণ্ড এখনো দুটি ফৌজদারি মামলা বিবেচনাধীন।
প্রথম দিনেই সই করতে পারেন ১০০ আদেশে: দায়িত্ব গ্রহণের পর সবাইকে ‘অবাক করার’ প্রতিশ্রুতি দেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী এজেন্ডা নিয়ে দ্রুত এগোবেন এবং শপথ গ্রহণের পর থেকেই এ পথে তার যাত্রা শুরু হবে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় ১০০টি নির্বাহী আদেশে সই করতে পারেন। এই আদেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও সীমান্ত ইস্যু থেকে শুরু করে বাণিজ্য ও অর্থনীতি, জলবায়ু ও জ্বালানি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় থাকতে পারে।
তবে দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে ক্যাপিটল দাঙ্গায় সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষমার আদেশে সই করতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে তিনি এ বিষয়ে সিএনএনকে বলেছিলেন, ‘আমি অনেককে ক্ষমা করার বিষয়ে মনস্থির করেছি। তবে আমি প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তা বলতে পারি না, কারণ তাদের মধ্যে কয়েকজন সম্ভবত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।’ ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন ক্যাপিটলে দাঙ্গার ঘটনার চতুর্থ বার্ষিকীতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায়, তারা ওই ঘটনায় ১ হাজার ৫৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করে, যাদের মধ্যে ৬০০ জনের বেশি ফেডারেল কর্মকর্তার ওপর হামলা বা বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ‘আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রত্যাবাসন কর্মসূচি’ শুরু করবেন এবং তা দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই। তার নতুন ‘সীমান্ত প্রধান’ টম হোমান এরই মধ্যে আমেরিকানদের জন্য একটি হটলাইন প্রস্তাব করেছেন, যেখানে তারা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহভাজন অবৈধ অভিবাসীদের সম্পর্কে জানাতে পারবে।
এ ছাড়া দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দিনেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নিলেই নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ বন্ধে উদ্যোগ নিতে পারেন, কেননা, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিনেই তিনি এ সুযোগ বন্ধের ব্যবস্থা নেবেন বলে এর আগে জানিয়েছিলেন। ট্রাম্পের যুক্তি, ১৫০ বছরের পুরোনো এই সাংবিধানিক অধিকার ‘অযৌক্তিক’। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নির্বাহী আদেশ জারি করেই এ সুযোগ বন্ধ করা সম্ভব নয়। কারণ জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, যা বাতিল করার জন্য জটিল আইনগত পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে।
এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত বন্ধ এবং সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের আদেশেও ট্রাম্প সই করতে পারেন।
বাণিজ্য ও অর্থনীতি সংক্রান্ত যেসব আদেশে প্রথম দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প সই করতে পারেন তার মধ্যে রয়েছে শুল্ক ও ক্রিপ্টো রিজার্ভ। ট্রাম্প এরই মধ্যে আমদানি পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাকে তিনি আমেরিকান উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প চীনের ওপর শুল্ক আরোপসহ এ-সংক্রান্ত বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যা জো বাইডেনের প্রশাসন ধরে রেখেছিল। এবার ট্রাম্প আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ, কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত আদেশে তিনি প্রথম দিনেই সই করবেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক ভোক্তা পণ্যের দাম বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। কিছু দেশ প্রতিশোধমূলক শুল্কের পরিকল্পনা করছে।
আলোচনায় আরও যেসব ইস্যু: জলবায়ু ও জ্বালানি সংক্রান্ত কিছু বিষয়েও প্রথম দিনেই উদ্যোগী হতে দেখা যেতে পারে ট্রাম্পকে, যার মধ্যে রয়েছে জো বাইডেনের জলবায়ু নীতি বাতিল এবং প্যারিস চুক্তি থেকে আবারও সরে আসা। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার আমলে এমন একটি নির্দেশনা, আইন ও তহবিল কর্মসূচি চালু করেছিলেন, যা সবুজ চাকরি বাড়ানো, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং অবকাঠামো উন্নত করতে সহায়ক ছিল। তিনি এটিকে তার অন্যতম বড় অর্জন হিসেবে দেখেন। তবে এর অনেক অংশ বাতিল করবেন বলে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প। এর বদলে তিনি ফেডারেল জমিতে ড্রিলিং সীমাবদ্ধতা সরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্বাহী আদেশ ব্যবহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা আমেরিকার জ্বালানি উৎপাদন ও স্বাধীনতা বাড়াবে বলে তিনি মনে করেন।
২০১৭ সালে প্রথম দফায় দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনা ট্রাম্প এবারও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন, আর তা হতে পারে তার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ শেষে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার সীমা নির্ধারণে কাজ করা এই আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ২০২১ সালে ফের যোগ দিয়েছিলেন জো বাইডেন।
এসবের বাইরে আন্তর্জাতিক যেসব বিষয়ে ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই উদ্যোগী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেন ও গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা এবং কিউবা ও ভেনেজুয়েলার বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা। এর বাইরে গ্রিনল্যান্ড, কানাডা ও পানাম খাল নিয়েও বিভিন্ন সময়ে নানা মন্তব্য করতে দেখা গেছে ট্রাম্পকে। তবে প্রথম দিনেই তিনি এসব বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারের সময়ে দাবি করেছিলেন, নির্বাচিত হলে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই তিনি এই সংঘাতের অবসান ঘটাবেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর বলেছেন, এই সংঘাত থামাতে তার ছয় মাস লাগতে পারে। এ বিষয়ে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি কী করবেন, তা এখনই পরিষ্কার নয়।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর গাজায় যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি শপথ নেওয়ার এক দিন আগেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। অবশ্য এই চুক্তির পেছনে নিজের ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করছেন ট্রাম্প, যদিও বাইডেন এই দাবিকে ‘মজা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প ও তার প্রতিনিধিদের কৌশল এই চুক্তিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে বাইডেন প্রশাসন কিউবাকে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রের তালিকা থেকে বাদ দিলেও দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আবার তা বহাল করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করতে পারেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে আনার কথা বলেছেন, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যে বানানোর রসিকতাও করেছেন। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট পানামা খালের নিয়ন্ত্রণও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন। তবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স, আলজাজিরা ও সিবিএস নিউজ।