বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১
জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৭ এএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আগে কোন নির্বাচন দ্বিধায় ইসি

স্থানীয় নাকি জাতীয়
আগে কোন নির্বাচন দ্বিধায় ইসি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দেশ ছাড়েন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের মতো গা ঢাকা দেন স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও। ফলে কয়েকটি আদেশে সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। সর্বশেষ অনুপস্থিত থাকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদেরও অপসারণ করে এসব জায়গায় প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু জনপ্রতিনিধি না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে নাগরিকরা নিয়মিত সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠেছে। আর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করায় জাতীয় সংসদও বিলুপ্ত রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি—আগে জাতীয় নির্বাচন হোক। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে। স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সংস্কারে গঠিত দুই কমিশনপ্রধানও। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি। এ অবস্থায় আগে জাতীয় সংসদ নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন, তা নিয়ে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসি সূত্র জানায়, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার পর ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ রুটিন মাফিক কার্যক্রম শুরু করে এ এম এম নাসির উদ্দিন কমিশন। কিন্তু সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির অপসারণের পর আগে স্থানীয় নির্বাচন নাকি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। অনেকেই বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা যাচাই করা উচিত। আগের কমিশনগুলোও সেটাই করেছিল। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলেছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা। সর্বশেষ স্থানীয় সরকার সংস্কারে গঠিত কমিশন প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ সোমবার গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে স্থানীয় সরকারের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ তাদের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত। ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাঠপর্যায়ের কর্মীরাও আগে স্থানীয় নির্বাচন চান। যদিও দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা আগে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে। এ ছাড়া আগে স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারাও। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলো অতিপ্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে শক্ত কোনো নির্দেশনা বা সংকেত দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন নাকি স্থানীয় নির্বাচন আগে—সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ইসি।

যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা চিন্তা করছেন না তারা। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে তিনি ঢাকার বাইরে সফরও শুরু করেছেন।

জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, সব জনপ্রতিনিধি পলাতক নন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচিত অনেক জনপ্রতিনিধি এখনো প্রকাশ্যে রয়েছেন। আর নির্বাচিত হওয়া বিএনপির নেতারা তো রয়েছেনই। সেজন্য একযোগে সব জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করা কোনোভাবেই ন্যায়বিচার হতে পারে না। প্রয়োজনে পতিত সরকারের দোসর এবং পলাতক জনপ্রতিনিধিদের জায়গায় প্রশাসক নিয়োগ অথবা জরুরিভাবে নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন তারা। হাইকোর্টের আদেশে অপসারণ আদেশ স্থগিত পাওয়া মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানমো. শাহজাহান আলী সাজু কালবেলাকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনুপস্থিত জনপ্রতিনিধিদের তালিকা চেয়ে ১৩ আগস্ট স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয় সরকার। অনুপস্থিত থাকা জনপ্রতিনিধিদের জায়গায় ইউএনওরা দায়িত্ব পালন করবেন বলে জনানো হয়; কিন্তু আমরা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে সক্রিয় ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। ১৮ আগস্টও আমি ডিসি অফিসে বৈঠক করেছি। কিন্তু ওইদিনই একযোগে আমাদের অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আমি উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। আশা করি আপিল বিভাগেও ন্যায়বিচার পাব।’

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই রাষ্ট্র সংস্কারে মনোযোগ দেয় সরকার। তার অংশ হিসেবে বিভিন্ন সেক্টর সংস্কারে ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। সরকারের উপদেষ্টারা বলছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখে সংস্কার প্রস্তাবনা বা সুনির্দিষ্ট সুপারিশের আগেই একপর্যায়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার চাপ অব্যাহত রেখেছে বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলো। মাঝে দলগুলোর চাপের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ বছর ডিসেম্বর অথবা আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে প্রাথমিক ধারণা দেন; কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের চাপ অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে গত সোমবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন কমিশনপ্রধান ড. তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের পর আবারও স্থানীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গটি রাজনীতিতে আলোচনায় আসে। তিনি বলেছেন, স্থানীয় পর্যায়ের জনগণ আগে স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে। সেজন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে বিএনপি এ মতের বিরোধিতা করে আগে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষেই নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। সর্বশেষ গত সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটির নেতারা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় না বিএনপি। দলটির অভিমত, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে জনআকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে এখন সরকারের উচিত জাতীয় নির্বাচনের দিকে ফোকাস করা। সরকারকে কোনো চাপ কিংবা কোনো পক্ষ বা কারোর স্বার্থ প্রাধান্য না দিয়ে জনস্বার্থে দেশকে নির্বাচনমুখী করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

এর আগে সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পঞ্চগড়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, জনপ্রতিনিধি ছাড়া কাঙ্ক্ষিত নাগরিকসেবা দেওয়া সম্ভব নয়। নাগরিকরা ভোগান্তির শিকার হয়, সময়ক্ষেপণ হয়। এই চ্যালেঞ্জটা আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে সরকার দুটি কমিশন গঠন করে দিয়েছে। তাদের মত হচ্ছে আগে স্থানীয় নির্বাচন করা। অনেকেই রিহার্সেল হিসেবে স্থানীয় নির্বাচনকে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন; কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো চায় আগে জাতীয় নির্বাচন। এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচন কমিশনের রুটিন মাফিক কাজগুলোই চলছে। সেজন্য আগে কোন নির্বাচন হবে—সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে জনগণের মতামত সংগ্রহ করেছি। সেখানে আগে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনগুলোই সেরে ফেলার জন্য পরামর্শ এসেছে। রাজনীতিকরা তার বিরোধিতা করলেও আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু আগে কোন নির্বাচন হবে—তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ কালবেলাকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে প্রদান নির্বাচন কমিশনার মহোদয় বলে দিয়েছেন। নতুন করে বলার মতো আর কোনো কথা নেই।’ এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিনা খরচে বিয়ে-হানিমুনের সুযোগ, যা করতে হবে

ডাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

'রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আ.লীগের প্রেতাত্মারা এখনো বহাল'

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু, যা জানা যাচ্ছে

অ্যাম্বুলেন্স রেখে ছেলের গাড়িতে চড়ে হাসপাতালে গেলেন খালেদা জিয়া

লিফলেটে শেখ হাসিনার বাণী, ৩ কর্মকর্তার শাস্তি

ভিন্ন নারীকে মেজর ডালিমের স্ত্রী দাবি

বরিশালে বিএনপির দুই নেতার বাড়িতে হামলা

বিজিবির আপত্তিতে শূন্যরেখা থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিল বিএসএফ

অছাত্রদের দিয়ে জাবি ছাত্রদলের কমিটি

১০

কিশোরীর শ্লীলতাহানি, ৩ লাখ টাকায় ধামাচাপার চেষ্টা

১১

ঢাবির আবাসন সুবিধা পেতে আগ্রহী ছাত্রীদের আবেদনের আহ্বান

১২

হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে দেওয়া চিঠির জবাব এখনো আসেনি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৩

অবৈধভাবে পদ্মায় বালু উত্তোলনের দায়ে ৯ জনের কারাদণ্ড

১৪

ছাত্রলীগের পদ নেওয়াকে কৌশল বললেন ছাত্রদল নেতা

১৫

সার না দেওয়ায় কৃষি কর্মকর্তা অবরুদ্ধ

১৬

ইউসিটিসিতে সিন্ডিকেট মিটিং অনুষ্ঠিত

১৭

রাফির বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাল্টা প্রতিক্রিয়া হাসনাত আব্দুল্লাহর

১৮

প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু 

১৯

গোপনে স্বামীর ফোনে নজরদারি করে বিপাকে স্ত্রী

২০
X