চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মুক্তার হোসেনের বাবা ছিলেন ভ্যানচালক। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মুক্তার ভাগ্য বদলের আশায় ঢাকায় এসে বারিধারার ‘অ্যাভিনিউ’ নামে একটি মদের বারে ওয়েটার হিসেবে চাকরি নেন। কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই মুক্তার নিজেই এখন পাঁচটি বারের মালিক! শুধু দেশে নয়, ইউরোপ-আমেরিকাতেও বিপুল সম্পদ রয়েছে তার। বেশিরভাগ সময় থাকেন দেশের বাইরে। তার এমন অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে কঠিন পরিশ্রম কিংবা কঠোর অধ্যবসায়ের গল্প খুঁজতে গিয়ে লাভ নেই। কারণ মদের ব্যবসায় মুক্তারের সাফল্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে তার রাজনৈতিক ‘কানেকশন’। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও পতিত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠতার সুবাদে বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো মদের ব্যবসা করেছেন মুক্তার। অর্থের জোরে বাগিয়ে নিয়েছেন চাঁদপুর জেলার জহুরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদও।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুক্তারের মতো আরও অনেকেই নাম লিখিয়েছেন মদের ব্যবসায়। সেই তালিকায় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যেমন রয়েছেন, আছে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রভাবশালী অনেকেই। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মদের ব্যবসায় মধু পেয়ে গত আট বছরে দেদার বারের অনুমোদন নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা ও সংশ্লিষ্টরা। দলীয় নেতাদের সুবিধা দিতে নিয়মনীতি না মেনে ৮৯ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় দেড়শ বারের অনুমোদন দিয়েছে পতিত সরকার। আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রভাবশালীরা তো বটেই, বারের মালিকানা পেয়েছেন তাদের আত্মীয়-স্বজন, এমনকি তৎকালীন সরকারঘনিষ্ঠ সাংবাদিকরাও!
রাজনৈতিক বিবেচনায় বারের অনুমোদন: পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বর্তমানে ১৭৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে ২৩৭টি বারের অনুমোদন রয়েছে। তার মধ্যে হোটেল বার ১২৩টি, রেস্টুরেন্টে ৬২, ক্লাবে ৪৮ এবং রিসোর্টে রয়েছে চারটি বার। আইনি প্রক্রিয়া মেনে দেশে প্রথম বারের অনুমোদন দেওয়া হয় ১৯৫৯ সালে। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ আবাসিক হোটেল লিমিটেডের অনুকূলে দেওয়া হয় এই বারের অনুমোদন। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫৬ বছরে বার খোলার অনুমোদন পেয়েছে ৮৮ প্রতিষ্ঠান। বাকি ৮৯টি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে মাত্র আট বছরে!
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ সাল থেকে বারের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে রীতিমতো ‘দিলদরিয়া’ হয়ে ওঠে তৎকালীন সরকার। দেশে সবচেয়ে বেশি বারের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১৯ সালে, ৩০টি। বাকিগুলোর মধ্যে ২০১৮ সালে ৯টি, ২০২০ সালে ৮টি, ২০২১ সালে ৩টি, ২০২২ সালে ২০টি, ২০২৩ সালে ২০টি এবং চলতি বছর দেওয়া হয়েছে চারটি বারের অনুমোদন।
দলের নেতাকর্মীদের বারের অনুমোদন দিতে আইনকানুন বদলে ফেলতেও পিছপা হননি আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিনির্ধারকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০ অনুযায়ী বারের লাইসেন্স দেওয়ার একক ক্ষমতা ছিল সংস্থাটির মহাপরিচালকের হাতে। এক্ষেত্রে কয়েক ধাপে যাচাই-বাছাইয়ের পর বিভিন্ন সংস্থার ছাড়পত্রও পাওয়া লাগত। কিন্তু ২০১৮ সালে এ আইন সংশোধন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা তৈরি করা হয়। বিধিমালার ৫নং ধারায় বারের অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদনের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারের পক্ষে বিভাগীয় অনাপত্তি-সনদ (এনওসি) দিতেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি কাউকে ছাড়পত্র দিলে সেটি বাতিল করার বা আটকে রাখার সুযোগ ছিল না অধিদপ্তরের হাতে। অনুমোদনের ক্ষমতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পরের বছর ২০১৯ সালে দেশে সর্বোচ্চ ৩০টি বারের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রিমিয়ার হোটেল কোম্পানির অধীনে গুলশানের রেনেসাঁ হোটেলকেই দেওয়া হয়েছে সাতটি বারের অনুমোদন। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচ বি এম ইকবাল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্তাদের দাবি, মহাপরিচালকের নিয়ন্ত্রণে থাকার সময় তারা অনেক যাচাই-বাছাই করে বারের অনুমোদন দিতেন। কিন্তু অনুমোদনের বিষয়ে মন্ত্রণালয় যুক্ত হওয়ার পর অধিদপ্তরের ক্ষমতা খর্ব হয়। ২০১৮ সাল থেকে বারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মূলত ওই সময় থেকে যাচাই-বাছাই ছাড়া বারের অনুমোদন দেওয়া শুরু হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। অনেক ক্ষেত্রে অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বার পরিচালনা করছেন।
বেশিরভাগ বারের মালিকানায় আওয়ামী লীগের লোকজন: নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, দেশজুড়ে গত ১০ বছরে অনুমোদন দেওয়া বেশিরভাগ মদের বার আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী-নেতা ও তাদের আত্মীয়স্বজন কিংবা ঘনিষ্ঠদের নামে। আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের নামেও রয়েছে বার। এর মধ্যে মায়া চৌধুরী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ মুক্তারের নামে রাজধানী ঢাকা, রংপুর, ও নারায়ণগঞ্জে অন্তত ৫টি মদের বার রয়েছে। ৫ আগস্টের পর মুক্তার যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেলেও তার বারগুলোতে ব্যবসা চলছে দাপটের সঙ্গে। মুক্তারের বারের মধ্যে রয়েছে উত্তরার কিংফিশার, লেকভিউ, ক্যাফে সেলিব্রিটিয়া ও কোরিয়া বাংলাদেশ ক্লাব।
জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবের অনুকূলে ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর একটি মদের বারের অনুমোদন নেওয়া হয়ে। ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ মির্জা আজম ও সাধারণ সম্পাদক জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক আহমেদ চৌধুরী।
বগুড়ার বিখ্যাত ক্ষুদ্র ঋণভিত্তিক এনজিও ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগমের ছেলে টিএম হায়দার আলী নামে নেওয়া হয়েছে মম ইন বার রেস্টুরেন্ট।
একইভাবে কক্সবাজারে হোটেল কক্স টু-ডের মালিক আবদুল কাইয়ুম। রিহ্যাব চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট আওয়ামীঘেঁষা এই ব্যবসায়ী। সি-পার্ল বিচ রিসোর্ট ও স্পা লিমিটেডের মালিক ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু। তিনি ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ইনানী বিচ সংলগ্ন এই রিসোর্টে বারের অনুমোদন নেন। এ ছাড়া কয়লা রেস্টুরেন্টের পরিচালক শেখ নুরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের নেতা। নওগাঁওয়ের ম্যানিলা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে ও কমিউনিটি সেন্টারের মালিক সুমন কুমার সাহা আওয়ামী লীগের নেতা। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এই বারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায় স্থানীয় জনতা। রংপুর নগরীর জিএল রায় রোডের গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেলের মালিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি। বারের অনুমোদন নিয়েছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারও। ২০২৩ সালে তিনি হোটেল জাবীর প্যারাডাইস লিমিটেডের অনুকূলে একটি মদের বারের অনুমোদন নেন। এ ছাড়া রাজধানীর উত্তরায় একই নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামেও বারের বরাদ্দ নেন।
এক সময় দর্জির কাজ করা অগাস্টিন পিউরিফিকেশন এখন কালীগঞ্জের কার্লব রিসোর্ট ও খ্রিষ্টানদের একটি সংগঠনের নেতা। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে তিনিও নিয়েছেন বারের অনুমোদন।
রাজধানীর ডরিন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের মালিক আওয়ামী লীগের দুবারের সংসদ সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকী। প্লান-বি রেস্টুরেন্টের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ সাদ জামান। চট্টগ্রামের ওয়েল পার্ক রেসিডেন্স বারের অনুমোদন পায় ২০১৬ সালে। এটির মালিক চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ সালাম। দ্য ক্যাপিটাল রিক্রিয়েশন ক্লাব বারের অনুমোদন নিয়েছেন আওয়ামীঘেঁষা মো. আবুল হাসান। ফারজি ক্যাফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল হাসান চৌধুরী। এ ছাড়া রাজধানীর ডেমরায় স্থাপিত হলদি রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বারের অনুমোদন নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন। উত্তরার ক্যাম্পফায়ার রেস্টুরেন্টের মালিক ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন সরকার। তিনি ২০২৩ সালে এই রেস্টুরেন্টের নামে বারের অনুমোদন নেন। তবে অনুমোদনের সময় সোহেল আহমেদ নামের একজনের নাম ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা আলম আহমেদ। তার নামে রয়েছে বেশ কয়েকটি বারের লাইসেন্স। নিজের প্রতিষ্ঠান হোটেল হাবিব ইন্টারন্যাশনালের নামেই ৭টি বারের লাইসেন্স নেওয়া হয়।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অদৃশ্য ক্ষমতার বলয়ে সরকারি বনের জমি দখল করে গড়ে তোলা ‘ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’ সেন্টারেও রয়েছে বারের অনুমোদন। ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি ওই রিসোর্টে বারের অনুমোদন দেওয়া হয়।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নিজেদের নাম গোপন করেও বারের অনুমোদন নিয়েছেন অনেকে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তৈরি করে সেই সংগঠনের নামে কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সেই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলেও বার লাইসেন্স নিতে দেখা গেছে। এসব বারে কোনো সমস্য হলে কমিটি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। যার মধ্যে একটি বাংলাদেশ ক্লাব। ২০১৮ সালে এই ক্লাবের অনুকূলে মদের বার অনুমোদন নেওয়া হয়। এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের তালিকায় রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, ব্যবসায়ী শফিউল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের আমলের পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ২০২১ সালে ঢাকা বোট ক্লাব নামের একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে সেখানে বারের অনুমোদন নেওয়া হয়। তথ্য বলছে, বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ প্যানেলের হয়ে ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর নির্বাচন করা অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরাও নিয়েছেন মদের বারের অনুমোদন।
জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী কালবেলাকে বলেন, ‘ওই সময়ে যারা বারগুলোর অনুমোদন দিয়েছেন তারা বিস্তারিত বলতে পারবেন কীভাবে দিয়েছেন। এই বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। করা সমীচীনও হবে না।’
জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের উপপরিচালক মো. মানজুরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘মদের বার নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮-এর পরিপ্রেক্ষিতে ২২৬ পৃষ্ঠার একটি বিধিমালা তৈরি করা হয়। সেই বিধিমালা দিয়েই বারগুলো পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত। তবে কোথাও আইনের ব্যত্যয় ঘটলে আমরা সেখানে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। সম্প্রতি আমরা একটি বারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১টিকে এক মাসের জন্য লাইসেন্স বন্ধ রেখেছি। হঠাৎ বার অনুমোদন বেড়ে গেল কেন সেটা তো আমি বলতে পারব না। ওই সময়ে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি বলতে পারবেন কীভাবে দিয়েছেন।’
সার্বিক বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘আমি এখানে দায়িত্ব নিয়েছি সাত মাস হলো। এই সাত মাসে একটিও মদের বারের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও আমাদের ফিল্ড লেভেলের কর্মকর্তারা এগুলো নজরদারি (মনিটর) করেন। মনিটর করে কোথাও কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি, বারের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়। আমরা বিষয়গুলো মনিটর করে দেখব। কোথাও কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সমাজ ও অপরাধ গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. মো. তৌহিদুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের জায়গায় মদের বারের কোনো সুযোগ নেই। তবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে ক্লাবের অনুমোদন নেওয়া হয়। যাদের টাকা-পয়সা আছে, উচ্চাভিলাষী, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খুশি বা ভাগবাটোয়ার অংশ করে সেখানে মদের বারের অনুমোদন নেন। সেখানে শুধু মদ পান করা হয় তাই নয়, সঙ্গে আধুনিক বিভিন্ন মাদক সেবন করা হয়। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের সূত্রপাত কিন্তু এসব ক্লাব থেকেই। এর একটি নেতিবাচক প্রভাব সমাজে পড়ছে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে মানুষের চাহিতা তো আছেই। তাই চাহিদা পূরণে এসব বার অনুমোদনের পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। তাহলে এখন যে পরিবেশ পরিস্থিতি, হয়তো তার পরিবর্তন হবে।’