বিভিন্ন প্রশ্নে মতপার্থক্য থাকলেও সংস্কার, নির্বাচন এবং ‘পতিত’ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারসহ বড় দাগের প্রশ্নগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো এবং স্টেকহোল্ডারদের একটা মতৈক্যে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। জাতীয় ঐক্য প্রশ্নে গতকাল শুক্রবার কালবেলাকে এ কথা বলেন তিনি।
সাইফুল হক বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে জাতীয় ঐক্যটা গড়ে উঠেছিল, ১০০ দিন পরে মনে হচ্ছে, সে ঐক্যের মধ্যে কিছুটা ফাটল, কিছুটা বিভাজন তৈরি হয়েছে, সেটা একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। যদি আন্দোলনের দলগুলোর, অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর মধ্যে এ রকম বিভাজন থাকে, তাহলে আমাদের গণতন্ত্রে উত্তরণটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে; পতিত ফ্যাসিস্ট রেজিম নানা চেহারায় ফিরে আসতে পারে। সেই নানা চেহারার বহু লক্ষণ আমরা দেখছি। এখানে নানা ধরনের বিতর্ক-বিভাজন। বিদ্যমান সংকট তো সরকারের পক্ষে একা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই এখানে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সবাই মিলে একটা প্ল্যাটফর্ম গঠন করা, ব্যাপারটা এ রকম নয়। যেসব সংস্কার একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য অত্যাবশ্যক, সে ব্যাপারে ঐকমত্যের জায়গাটা তৈরি হতে হবে। ঐকমত্যে এসে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের একটা পথনকশা ঘোষণা করা, এ ব্যাপারে মোটা দাগে একটা বড় ঐক্যের জায়গা আছে।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের ব্যাপারে একটা ভিত্তি এই সরকার তৈরি করে দিয়ে যেতে পারে। আমাদের নানা প্রশ্নে হয়তো বিতর্ক আছে, পার্থক্য আছে; কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় সংহতি কিংবা গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার প্রশ্নে বড় দাগে কোনো দ্বিমত নেই। এ ব্যাপারগুলোতে একটু বোঝাপড়ার জায়গা তৈরি করা, এখানে জাতীয় ঐক্যের দরকার আছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতীয় ঐক্য তৈরির উদ্যোগটা দুদিক থেকে হতে পারে। সরকারের দিক থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বোঝাপড়ার জায়গাটা তৈরি করা, এটা একটা উদ্যোগ হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে, অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো উদ্যোগী হয়ে নিজেদের মধ্যে সংহতি, মতৈক্য ও বোঝাপড়া বাড়িয়ে তোলা এবং ন্যূনতম প্রশ্নে একটা ঐকমত্যের জায়গা তৈরি করা।
জাতীয় ঐক্য তৈরির প্রক্রিয়া কীভাবে শুরু হতে পারে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনা, বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে এটা শুরু হতে পারে। সংস্কার, নির্বাচন এবং পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারসহ বড় দাগের প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে একটা মতৈক্যে আসা, যেগুলো নিয়ে এরই মধ্যে সাধারণ মতৈক্য রয়েছে। আমাদের বিভক্তির সুযোগ নিয়ে কোনো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, কোনো অন্তর্ঘাত কিংবা নাশকতা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
ঐক্যের পথে প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে সাইফুল হক বলেন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টিতে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। আমরা এখন পর্যন্ত সরকারকে পুরোপুরি অ্যাক্টিভ দেখছি না। তাদের মধ্যে এক ধরনের নিস্পৃহ মনোভাব লক্ষ করেছি। যে কোনো একটি অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের যে গতি-উদ্যোগ থাকা দরকার এবং তাদের যে আস্থা নিয়ে কাজ করা দরকার, যে দৃঢ়তা থাকা দরকার, সেটি আমরা দেখছি না। এই সরকার একটা দুর্বল সরকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলসহ সমাজের নানা গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের সঙ্গে সরকারের এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা বা দূরত্বের জায়গা আছে। সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে এটা কাটিয়ে ওঠা দরকার।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক ধরনের এজেন্ডা রয়েছে। আবার রাজনৈতিক দলগুলো প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার শেষে নির্বাচন চাচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা জোর দিচ্ছে। অন্য অংশীজনেরও নানা ধরনের এজেন্ডা আছে। বহু এজেন্ডা থাকবে, এগুলোর মধ্য থেকে সরকারকে তার রাজনৈতিক অগ্রাধিকারগুলো ঠিক করতে হবে।