রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের বারবার তাগিদ দিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। ভালো কাজের দ্বারা জনপ্রিয়তা অর্জন করে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায় বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারকদের এই প্রত্যাশা পূরণে ‘বাধা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন মাঠপর্যায়ের কিছু নেতাকর্মী। তাদের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি এবং নানা অপকর্মসহ বিভিন্ন কারণে বিএনপিতে মাথাচাড়া দিচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর গ্রুপিং। কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ন হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি। দখল-চাঁদাবাজি ও প্রভাব বিস্তার কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে আসছে। দিনকে দিন দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রুপিং, অন্তঃকোন্দল রূপ নিচ্ছে মারামারি এবং সংঘর্ষে। উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে কাজে আসছে না বিএনপির ‘জিরো টলারেন্স নীতি’। চূড়ান্ত শাস্তি হিসেবে বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপ নিলেও নেতাকর্মীদের বাগে আনতে হিমশিম অবস্থা বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর সারা দেশে অন্তত ১১টি বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অন্ততপক্ষে পাঁচজন খুন এবং প্রায় অর্ধশত গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা সদরের প্রতাপগঞ্জ বাজারের মুসা মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে শনিবার গাজীপুরের টঙ্গীর সাতাই এলাকায় মাসকো টেক্স লিমিটেড কারখানার ঝুট পণ্য নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অবশ্য বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সারা দেশে মুষ্টিমেয় নেতাকর্মীর নেতিবাচক কাজের দায় দলের সবাইকে নিতে হচ্ছে। আবার বিএনপির নাম ভাঙিয়ে ‘তৃতীয় পক্ষ’ অবৈধ সুযোগ নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। নানা কায়দায় যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা নিয়েছেন এখনো তারাই চাঁদাবাজি ও দখলদারিতে জড়াচ্ছেন। বিএনপির যারা প্রকৃত নেতাকর্মী, তারা কোনো দখল-চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। বরং কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে আড়াই মাসে কমিটি বিলুপ্ত, সাংগঠনিক মামলা, এবং সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কারসহ নানা সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও লাগাম টানতে পারছে না দলটি। দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু নেতাকর্মী দলের কঠোর অবস্থানকে তোয়াক্কা না করে অপকর্মে জড়াচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা বিব্রত দলটির হাইকমান্ড। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে একাধিকবার বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে শিক্ষা না নিলে আমাদেরও পরিণতি একই হবে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে ঈদগাঁহ মাঠে এক জনসভায় মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আজ আমরা মুক্ত বাতাসে বাস করছি। মনে রাখবেন, সে পর্যন্তই মুক্ত থাকবে, যতক্ষণ আমরা স্বাধীন রাখতে পারি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো কাজ শুরু করলে আমরা কি টিকে থাকতে পারব? আমাদেরও একই পরিণতি হবে। এলাকার মানুষের কাছে নিজেদের জনপ্রিয় করে তুলুন। কারও প্রতি অন্যায়-অত্যাচার করবেন না।’
মূলত গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। এতে বাদ যাননি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতারাও। একপর্যায়ে গত ২১ আগস্ট ফরিদপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের অনুসারীদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনা ঘটে প্রথম। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং কোন্দলের কারণে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ৫ আগস্টের পর সারা দেশে সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৫ শতাধিককে শোকজ, প্রায় ৫শ জনকে বহিষ্কার, অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর পদ স্থগিত ও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে সতর্ক এবং অনককে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও থানা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী সাংগঠনিক শাস্তির মুখে পড়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল কালবেলাকে বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলের ভেতরে প্রতিযোগিতা থাকবে, এটা স্বাভাবিক। আমরা বলব, সেটা যাতে সংঘাত-সংঘর্ষে না যায়। তবু যারা এসব করছে, তাদের বিরুদ্ধে তো দল প্রতিনিয়ত ব্যবস্থাও নিচ্ছে। এরই মধ্যে সাত থেকে আটশর মতো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। কোনো লোভ-লালসার সঙ্গে বিএনপির আদর্শ যায় না। গত ১৬ বছরে বিএনপির প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর জীবন তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লোকজন। অনেককে রিফিউজি করা হয়েছে। ফলে ৫ আগস্টের পর যেভাবে প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা, সেটা তো হয়নি। তিনি বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে এখন যেটা ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে, সেটা অপপ্রচার। কারণ যখনই কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, সেটা যত বড় নেতার বিরুদ্ধেই হোক, তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলোচিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের গাড়ি সরানোর ঘটনায় জড়িত থাকায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ওই কমিটি। ‘দলীয় আদর্শের পরিপন্থি’ বক্তব্যের জন্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরিয়ে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে। গত ২১ আগস্ট ফরিদপুরের নগরকান্দায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এক কর্মী নিহতের ঘটনায় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের দলীয় পদ স্থগিত করা হলেও কোনো সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেই শর্তে গত ১০ নভেম্বর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। দখল-হামলার ঘটনায় স্থগিত করা হয়েছে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের দলীয় পদ। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কারের পর দলের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে ময়মনসিংহের বিএনপি নেতা ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর বিরুদ্ধে। একই অভিযোগে সাইফুল আলম নীরবের নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। ফ্ল্যাট উদ্ধারে গিয়ে এক ব্যক্তিকে মারধর এবং পরে তার মৃত্যুর ঘটনায় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবির পদ স্থগিত করা হয়েছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন, খোঁজখবর রাখছেন। ৫ আগস্টের পর যাদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি, তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এসব ঘটনা দলীয় পদপদবি প্রদান এবং মনোনয়নে ‘আমলনামা’ হিসেবে দেখা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শীর্ষ কয়েক নেতার দাবি, আওয়ামী লীগ শাসনামলে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্ছেদ হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা সেগুলো উদ্ধারে গেলেও দখলের অভিযোগ আসছে। আবার কোথাও ঘাট-বাসস্ট্যান্ড ও হাটবাজারে শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্যোগ নিলেও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দখলের কথা বলা হচ্ছে। বিএনপি নেতারা জানান, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় দৃশ্যমান শাস্তির বাইরেও অনেককে কঠোর ভর্ৎসনা ও সতর্ক করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি, মহানগর, জেলা-উপজেলা সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর ব্যাপারে একই মনোভাব দেখাচ্ছেন শীর্ষ নেতারা।
জানা গেছে, গতকাল বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। আগামীকাল বুধবার উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এই সম্মেলন বাতিলের দাবিতে গণমিছিল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের একটি অংশ। উপজেলা সদরের মাতুর বাড়ির মোড় থেকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এমএ খালেক, রফিক শিকদার, জিয়াউদ্দিন জিয়া ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ড. সাইদুজ্জামান কামালের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করে, যা প্রতাপগঞ্জ বাজারে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশের অনুসারী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব একেএম মুসার মালিকানাধীন মার্কেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দুগ্রুপের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়।
গত শনিবার (১৬ নভেম্বর) পাবনায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে মৎস্যজীবী দলের সাবেক নেতা জালাল উদ্দিন (৪০) নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। ওইদিন সকালে সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের বেতেপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত জালাল উদ্দিন হেমায়েতপুর ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে। পাবনা সদর উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি আজম প্রামাণিক জানান, নিহত জালাল সদর উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। পুলিশ ও স্থানীয়দের দাবি, কিছুদিন ধরে হেমায়েতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সদস্য মুন্তাজ আলীর সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম গ্রুপের বিরোধ চলছিল। শুক্রবার রাতে ওই এলাকার ইসলামী জলসা নিয়ে দুপক্ষের বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন। তাদের মধ্যে জালালের অবস্থা গুরুতর হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুপুর ১টার দিকে মারা যান।
একইদিন দুপুরে গাজীপুর সাতাইশ শরিফ মার্কেট এলাকায় মাসকো টেক্স লিমিটেড কারখানার ঝুট পণ্য নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আগে মাসকো ট্যাক্সের ঝুট সংগ্রহ করতেন গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসন। তিন মাস ধরে কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে ঝুট বিক্রি করছিল। শনিবার সকালেও কারখানা কর্তৃপক্ষ ঝুট বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় গাজীপুর মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলামের লোকজন ওই পণ্য সংগ্রহ করতে যান। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ সাজেদুল ইসলামকে ঝুট নিয়ে যেতে বললে তিনি কয়েকটি ট্রাকে পণ্যবোঝাই করেন। একপর্যায়ে গাজীপুর মহানগরীর ৫১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ইকতিয়ার খান, আব্দুস সাত্তার, দুলাল খান, মনির হোসেন, জুম্মনসহ ২০ থেকে ২৫ যুবক ঝুটবোঝাই ট্রাকগুলো আটকে দেন। খবর পেয়ে যুবদল নেতা সাজেদুল ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কারখানার সামনে গেলে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ঘটনা জানালে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে।
গত ৫ নভেম্বর বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য সজীব তরফদারকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সজীবের মাথায় চারটি গুলি করা হয়। স্বজনদের অভিযোগ, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
গত ২১ আগস্ট ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের অনুসারীদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে কবির ভূঁইয়া (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ সময় অন্তত তিনটি গাড়ি ভাঙচুর ও ২০ জন আহত হন। পরে শামা ও বাবুলের সাংগঠনিক পদ স্থগিত করে বিএনপি। পরে ২৪ আগস্ট নগরকান্দা থানায় নিহতের স্ত্রী মোনজিলা বেগম বাদী হয়ে ৩৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করে।
গত ১৪ নভেম্বর আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়ায় বিএনপি ও যুবদলের দুই গ্রুপের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষে পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ জানায়, বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খন্দকারের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলছিল। একপর্যায়ে উভয় গ্রুপের সংঘর্ষে পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ছাড়া রাউজানের বাকুলিয়া এলাকায় জমি দখল কেন্দ্র করে পৃথক ঘটনায় স্থানীয় যুবদলের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া গত ১১ নভেম্বর মাদারীপুরের শিবচরে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে হিরু মাতুব্বর (৩৫) নামে রাজমিস্ত্রি নিহত এবং উভয় পক্ষের অন্তত ছয়জন আহত হন। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষের অন্তত পাঁচটি বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয়দের ভাষ্য, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দত্তপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতা মালেক মোল্লার সঙ্গে টুকু ফরাজির লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় মালেক মোল্লার অনুসারী হিরুকে আর্য্যদত্তপাড়া এলাকায় একা পেয়ে কুপিয়ে জখম করেন টুকু ফরাজির লোকজন। শিবচর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জিল রহমান শিহাব জানান, টুকু ফরাজি আওয়ামী লীগ করতেন। এখন বিএনপির নেতা বনে গেছেন। তিনি এলাকায় নিজের আধিপত্য দেখাতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। তার কারণেই ওই এলাকায় ফরাজি ও মোল্লা বংশের লোকজন দুভাগে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তি মালেক মোল্লার অনুসারী।
ওদিকে গত ১৩ নভেম্বর নাটোরের বড়াইগ্রামে গোপালপুর ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় টিসিবির কার্ড বিতরণ কেন্দ্র করে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে রুবেল হোসেন নামে এক বিএনপিকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা জানান, কার্ড বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে রনির চাচা ইউপি সদস্য বেলাল হোসেনের সঙ্গে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিন খলিফার সমর্থক সামাদ মেম্বারের বিতর্কের একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় শাহিন গ্রুপের কর্মী রুবেল হাতে গুলিবিদ্ধ হন।
এর আগে গত ৯ নভেম্বর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের কোলা বাজারের আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত সাতজন আহত হয়েছে। শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে কালীগঞ্জ থানার ওসি মানিক চন্দ্র গাইন জানান। স্থানীয়দের বরাতে ওসি বলেন, কোলা বাজারের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কোলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলী ও কালীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্য আব্দুল জলিলের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। শুক্রবার রাতে কোলা বাজারে শুকুরের সঙ্গে জলিলের কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে জলিলের সমর্থকরা শুকুরকে কুপিয়ে যখম করলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ছয়জন আহত হয়।
তার আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর শেরপুরে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে মিজান নামে এক ট্রলিচালক নিহত এবং উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় খোয়ারপাড় এলাকায় কমপক্ষে পাঁচটি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আশরাফুল আলম মিজান (৩৫) গৌরীপুর এলাকার মৃত মৌলভী আজাহার আলীর ছেলে।