গত ১৫ বছর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের ফরমায়েশি কাজ করার অভিযোগ ছিল। দুর্নীতি দমনে প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী ও স্বায়ত্তশাসিত এ সংস্থাটি পরিণত হয়েছিল ‘নখদন্তহীন বাঘে’। সিলেকটিভ মামলার তদন্ত থেকে সরকারঘনিষ্ঠদের ‘ক্লিনচিট’ বা দায়মুক্তি দেওয়া ছিল প্রাত্যহিক কাজ। সরকারের আজ্ঞাবহ সেই দুদক ক্ষমতার পালাবদলেই পুরো ৩৬০ ডিগ্রি ভোল পাল্টে অস্বাভাবিক গতিতে তদন্ত শুরু করে হাসিনা সরকারে মন্ত্রী, এমপি, আমলা, বিতর্কিত ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও ঘনিষ্ঠদের। আগস্টের পর গত আড়াই মাসে দুই শতাধিক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধেই দায়ের করা হয়েছে পাঁচটি মামলা। তবে রকেটগতিতে অনুসন্ধান শুরু হলেও মানা হয়নি দুর্নীতি তদন্তে দুদকেরই নীতিমালা। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ছিল খোদ দুদকের ভেতরেই। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর কমিশন তাদের গদি বাঁচাতে ভোল পাল্টে ত্রুটিপূর্ণ তৎপরতা শুরু করেছিল। বর্তমান সরকারকে বোঝাতে চেয়েছিল যে, তারা তাদের পারপাস সার্ভ করার জন্য যথেষ্ট। শেষ পর্যন্ত তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। গত ২৯ অক্টোবর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দুই কমিশনারসহ পদত্যাগ করেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।
জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেলে সমাপ্তি ঘটে হাসিনা শাসনামলের। এরপর কয়েক দিন নীরব ছিল দুদক। তবে হঠাৎ পাগলা ঘোড়ার মতো প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী সুবিধাভোগী সরকারি কর্মকর্তা ও বিতর্কিত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। গত ২৯ অক্টোবর পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ২ মাস ২৪ দিনে প্রায় ১৮৫ জন আওয়ামী সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। শতাধিক প্রভাবশালীর পরিবারসহ বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সম্পদ। তবে দুদকের নিষেধাজ্ঞার আগেই অধিকাংশ দুর্নীতিবাজ দেশে ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এ ছাড়া যাদের দুর্নীতির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেখানেও মানা হয়নি জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পত্তির মালিকানা অর্জন সংশ্লিষ্ট অভিযোগের অনুসন্ধান বা মামলার তদন্ত সংক্রান্ত নির্দেশিকা (গাইডলাইন)। ত্রুটিপূর্ণ অনুসন্ধানে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুদক সূত্রে জানা যায়, সরকারঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি তদন্তে অনীহা ছিল কমিশনের। সরকার বিব্রত হয় এমন কোনো কাজ করতে রাজি ছিল না দুদক। জানতে চাইলে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে নিয়মিত বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানের চাল চুরি, গম চুরিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আসত। তবে এসব অভিযোগ তদন্তের অনুমতি মিলত না। যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক) দিয়ে আটকে রাখা হতো। এর কারণ হিসেবে কমিশন বলত—এসব অভিযোগ অনুসন্ধান হলে সরকারের জনপ্রিয়তা কমবে। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনিক। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিও অনুসন্ধানের অনুমতি দেওয়া হতো না। ডিসি, ইউএনওদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অনেক অভিযোগ আসত। এক্ষেত্রে বলা হতো, এসব দুর্নীতির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হবে। ফলে টিআইবির গ্লোবাল র্যাঙ্কিংয়ে দুর্নীতির তালিকায় বাংলাদেশে প্রথম দিকে চলে আসতে পারে। ফলে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
দুদকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু হয়ে গেছে কিন্তু সরকার চাচ্ছে না—এমন হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিলেও অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন কোয়ারি দিয়ে ফাইল ফেরত পাঠানো হতো। এভাবে এক একটা ফাইল ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত আটকে রাখা হতো। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বর্তমানে তদন্ত শুরু হওয়া চিঠিতে দেখবেন লেখা থাকে ‘গোয়েন্দা সূত্রে’। এর মানে হলো এই ফাইল গোয়েন্দায় আগে থেকেই জমা ছিল। কোনো অভিযোগ এসেছে কিন্তু কমিশন চাচ্ছে না তদন্ত হোক—এমন হলে সেই ফাইল গোয়েন্দায় পাঠিয়ে দেয়া হতো। তদন্তের নামে বছরের পর বছর ফেলে রাখা হতো।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এখন এত অনুসন্ধান শুরু মূলত দুটি কারণে। প্রথম এই কমিশন নিজেদের গদি টেকাতে সরকারকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয়ত, এ ফাইলগুলো বহুদিন ধরে গোয়েন্দায় আটকে ছিল। ফলে গোয়েন্দা ডিজি বিপদে পড়তে পারে। তাই তিনি নিজে বাঁচতে চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে ফাইলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। অথচ এই ফাইলগুলো আগে চালু করলে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার ফেরানো যেত।
অভিযানে অনীহা: জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ে চলতি বছরের ১২ মার্চ একটি নির্দেশিকা বা গাইডলাইন প্রকাশ করা হয় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে। সেই গাইডলাইনে দুটি ধারায় অভিযান বা তল্লাশির কথা বলা হয়েছে। ৩.৪ ধারায় তল্লাশির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তল্লাশি কীভাবে করতে হবে তার নির্দেশনা দিয়ে আরও ৬টি উপধারা যোগ করা হয়েছে। ৪.৪ ধারায় ফের তল্লাশির বিষয়টি বলা হয়েছে। তবে গত আড়াই মাসে প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিলেও অভিযান চালানো হয়নি একটিও। তল্লাশি করা হয়নি দুদকের তালিকায় অভিযুক্ত বা অনুসন্ধান শুরু হওয়া কোনো ব্যক্তির বাড়ি, অফিস কিংবা সংশ্লিষ্ট দফতর।
দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতনদের অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে এক ধরনের অনীহা ছিল। তদন্ত কর্মকর্তারা চাইলেও কমিশন অভিযানের অনুমতি দেয়নি। দুর্নীতির মামলায় অভিযান পরিচালনা করলে বা অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়ি, দপ্তর ও ব্যক্তিগত অফিসে তল্লাশি করলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে মামলার সাকসেস রেট বাড়ে। এটি সারা পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃতি পদ্ধতি। আলামত না থাকলে অনেক সময় কেউ দুর্নীতি করলেও সেটি প্রমাণ করা যায় না।
দায়মুক্তির প্রতিযোগিতায় ছিল দুদক: আওয়ামী শাসনামলের গত ১৬ বছর দুর্নীতিবাজদের অনেকটা দায়মুক্তি দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল খোদ দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। দুদক থেকে একাধিকবার ক্লিনচিট বা দায়মুক্তি পাওয়া অনেকের বিরুদ্ধেই পরবর্তী সময়ে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ছিল ছাগলকাণ্ডে আলোচিত এনবিআরের কর্মকর্তা মতিউর রহমান। মতিউর দুদকে চারবার দায়মুক্তি পেয়েছিলেন। এ ছাড়া জুয়েলারি ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা দীলিপ কুমার আগরওয়ালার দুর্নীতির অভিযোগ দুবার দায়মুক্তি পেয়েছেন। দীলিপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বিদেশে শোরুমের তথ্য থাকলেও দুদক তা খুঁজে পায়নি। সন্দ্বীপের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার দুর্নীতির বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও দুদক কোনো দুর্নীতির খোঁজ পায়নি। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দেড় বছরে দুদক থেকে দায়মুক্তি পেয়েছেন ৮ সংসদ সদস্য। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু দুই দফা ‘ক্লিনচিট’ পেয়েছেন। জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিক ও সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও বিএম মোজাম্মেল হক দুদক থেকে ‘দায়মুক্তি’ পেয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা এবং দলটির ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ‘ওয়ান-ইলেভেন’-এ করা সব মামলায় দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে গুলশানের একটি বাড়ি আত্মসাতের অভিযোগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক; কিন্তু সেই মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয় প্রধান অভিযুক্ত সাবেক সংসদ সদস্য সালাম মুর্শিদীকে। এজন্য তার কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ক্ষমতার পালাবদলে পাল্টে যায় ভোল, আড়াই মাসে ১৮৫ জন দুদকের জালে: হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ২০ আগস্ট একসঙ্গে প্রভাবশালী ৪১ এমপি-মন্ত্রীর দুর্নীতির অনুসন্ধান দিয়ে শুরু হয় দুদকঝড়। সেই তালিকায় ছিলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক, সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, চিফ হুইপ, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, সাবেক সচিব শাহ কামাল, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ প্রভাবশালীরা তালিকায় যুক্ত হয়। এই তালিকায় সবশেষ গত ২২ অক্টোবর যুক্ত হন সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সবমিলিয়ে গত আড়াই মাসে ৩২ জন সাবেক মন্ত্রীসহ প্রায় ১৮৫ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তার ছেলে, মেয়ে ও বিশেষ সহকারীর বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা অভিযোগে পাঁচটি মামলা করেছে দুদক। দুদক সূত্রে জানা গেছে, আসাদুজ্জামান খান ও তার স্ত্রী-সন্তানরা ৬০ কোটি ৫৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তাদের নামে থাকা ৩৬টি ব্যাংক হিসাবে ৪১৬ কোটি ৭৪ লাখ ৮৬ হাজার ১৯ টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মনির হোসেন জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে ১৮ কোটি ৮২ লাখ ৫৬ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে দুদক।
দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘এই কমিশন ছিল একটি অদক্ষ ও অযোগ্য কমিশন। তারা কেরানিমার্কা কাজ করতেন। প্রতি সপ্তাহে মিটিং করে মামলার অনুমোদন ও চার্জশিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেন। অথচ এই কাজের জন্য দুদকের ডিজিই যথেষ্ট। তাদের উচিত ছিল পলিসি লেভেলে কাজ করা। অভিযানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেওয়া। বড় বড় দুর্নীতিবাজকে হাতেনাতে ধরার পরিকল্পনা করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই কমিশনের সবাই ছিলেন বয়স্ক। তারা বর্তমান যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন না। তারা যে ডিসিশন দিতেন বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা অ্যাপ্লিক্যাবল ছিল না।’
দুদকের এক মহাপরিচালক কালবেলাকে বলেন, ‘দুদকের ছয়টি কমিশনের মধ্যে মাত্র তিনটি কমিশন তাদের মেয়াদ পূরণ করতে পেরেছে। বর্তমান কমিশনকেও মেয়াদপূর্তির আগেই পদত্যাগ করতে হলো। এর কারণ হলো জনগণের প্রতি তাদের আস্থা ছিল না। তাই আমরা চাই যাদের প্রতি জনগণের আস্থা আছে, কখনো কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ে ছিলেন না, সর্বজনশ্রদ্ধেয় এমন তিনজনকে কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘দুদুক প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনোই নিরপেক্ষ ছিল না। আর তার চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছিল বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে। ৫ আগস্টের পর দুদক দুটি আঙ্গিকে প্রমাণ দিয়েছে যে, তারা ক্ষমতাবান এবং ক্ষমতার পাশাপাশি থাকা ব্যক্তিদের ধরতে অক্ষম। একটি হলো, আমার টিআইবি থেকে তাদের কাজে দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ দিলেও দুদুক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর তারা ক্ষমতার বাইরে গেলে আড়াই মাসে প্রায় দুইশর কাছাকাছি ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের শুরু করেছে। অন্যদিকে তারা যেই পক্ষকে মনে করছে যে তারা ক্ষমতায় আছে বা আসতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এটি কোন প্রক্রিয়ায় নিয়েছে, সেটিও নিশ্চিত নয়। তাই আমরা বলেছি, দলীয় রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত বা সুবিধাভোগী আমলাকে দুদকের ঊর্ধ্বতন হিসেবে নিয়োগ দিলে দুদক শক্তিশালী হবে না।