নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের ৯ মাস, অর্থাৎ আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আগস্ট বিপ্লব-পরবর্তী জনআকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণই হবে বিএনপির অঙ্গীকার। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে দেশকে মুক্ত করা হবে তাদের অগ্রাধিকার।
কালবেলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সালাহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচন কমিশনের কেমন সংস্কার চায়, বৈদেশিক সম্পর্কে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে চায়—এসব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজকুমার নন্দী
আড়াই মাস হয়ে গেল অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে কী মনে করছেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এটা সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। আর বন্যা পরিস্থিতির কারণে নিত্যপণ্য বিশেষ করে কাঁচাবাজারে সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে, এটাও সত্য। তবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রেখে যাওয়া বাজার সিন্ডিকেট যে রাতারাতি নির্মূল হয়ে যাবে—এটা আমাদের ভাবা ঠিক হবে না। সে বিষয়ে সরকার কাজ করছে। আশা করি, ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে ক্রমশ উন্নতির দিকে। এটা একটু সময় নেবে। কারণ, পুলিশ বিভাগ এখনো পুরোপুরি কাজে নামতে পারেনি সেভাবে সমবেত হয়ে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
অনেকে বলছেন, এখনো প্রশাসনে আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্টরা রয়ে গেছেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: এটা সত্য যে, এখনো প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে রয়েছে। সরকার চাইলেও রাতারাতি প্রশাসনকে খোলনলচে পাল্টে ফেলতে পারবে, এমন নয়। তারা
চেষ্টা করছেন, যেন যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় পদায়ন করা যায়, সেটা দেখা যাচ্ছে। প্রশাসনে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরে। মাত্র দুই-আড়াই মাস সময়ে পুরোটাই যে তারা সংস্কার করে ফেলতে পারবেন, এটা আশা করাও তো ঠিক নয়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আশা করি, এই সরকার সেটা পারবে।
রাষ্ট্র সংস্কারে সরকারের ১০ কমিশনের পাশাপাশি বিএনপিও ছয় কমিটি গঠন করেছে। আপনি নিজেও বিএনপির একাধিক কমিটিতে রয়েছেন। এসব কমিটির কাজ কতদূর? কমিটি প্রদত্ত রিপোর্ট বিএনপি কীভাবে কাজে লাগাবে?
সালাহউদ্দিন: আমাদের প্যারালাল স্যাডো (ছায়া) কমিটিগুলোও কাজ শুরু করেছে। বেশিদিন সময় লাগবে না। আমরা বিভিন্ন এক্সপার্টের সঙ্গে বসে এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করছি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংস্কারের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য এরই মধ্যে অনেকদূর এগিয়েছি। সরকার গঠিত কমিশনের কাছে এগুলো জমা দেব, কথা বলব তাদের সঙ্গে।
কালবেলা: বর্তমান রাষ্ট্রকাঠামো কতটুকু সংস্কারের প্রয়োজন? রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি কী ধরনের পরিবর্তন আনতে চায়?
সালাহউদ্দিন: রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের জন্য গত বছরের জুলাইয়ে ৩১ দফা প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলাম। এর বাইরে অন্য কোনো সংস্কার প্রস্তাব কোনো কর্নার থেকে এখনো আসেনি। কারণ, আমরা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, অনেক সময় নিয়ে ৩১ দফা প্রণয়ন করেছি। বলা ছিল, আমরা যদি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করার সুযোগ পাই, তখন ৩১ দফার আলোকে রাষ্ট্রকাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করা হবে।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত এবং সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে এমন একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে চাই, যে রাষ্ট্রে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি হবে, এটা আমাদের লক্ষ্য। ১নং দফায় রয়েছে, সংবিধান সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া মিডিয়া সংস্কার কমিশন, জুডিশিয়ারি সংস্কার কমিশন, পুলিশ বিভাগ সংস্কার কমিশনসহ প্রয়োজনীয় সব জায়গায় আমরা সংস্কার প্রস্তাব রেখেছি। এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। সরকারে গেলে এসব সংস্কার কমিশন প্রণয়ন করে ইন-ডিটেইল (বিস্তারিত) কী কী সংস্কার করা হবে, সেটা দেখা যাবে। বর্তমানে যেহেতু সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের, তারা কিছু সংস্কার তাদের সময়ের মধ্যে করে যেতে পারবেন। কিছু পরেও কনটিনিউ করতে হবে। আর এমন কিছু সংস্কার হবে, যেগুলো পার্লামেন্ট গঠন না হলে করা যাবে না।
আমরা বলেছি, সেই অঙ্গীকার যেটা আমরা নির্বাচনী ইশতেহার এবং জাতির সামনে প্রদান করব। যেসব গণতান্ত্রিক দল এই প্রক্রিয়ায় আছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল—আমরা বিশ্বাস করি, এটা তাদের সবার অঙ্গীকার। আর ৩১ দফা তো জাতির কাছে আমাদের অঙ্গীকার, আমাদের প্রতিশ্রুতি। ৩১ দফা প্রস্তাবনা সূচির প্রথম প্যারায় বলা আছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনরত সব গণতান্ত্রিক শক্তি, দল, জোট—তাদের সঙ্গে নিয়ে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা জাতীয় সরকার গঠন করব। সেই জাতীয় সরকার এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
কালবেলা: সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিএনপি কোন নির্দিষ্ট নির্বাচনী সংস্কারের দাবি জানায়? নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশনের কেমন পুনর্গঠন চান?
সালাহউদ্দিন: নির্বাচনী সংস্কারে সাংবিধানিক কিছু সংশোধনী প্রয়োজন। নির্বাচনী আইনগুলোর মধ্যে আরপিও এবং ভোটার তালিকা প্রণয়ন থেকে শুরু করে নির্বাচনী ব্যবস্থার মধ্যে আরও বেশ কিছু আইন আছে। সে আইনগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর সংশোধনীর জন্য আমরা প্রস্তাব আনব। আর নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটা আলাদা আইন আছে, যেটি ২০২২ সালে তাড়াহুড়া করে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার করেছিল। সেখানে সার্চ কমিটির কথা বলা আছে, আরও কতগুলো বিষয় বলা আছে। এগুলোর মধ্যে আমাদের কিছু সংশোধনী আনতে হবে, যেন ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে বারবার এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে না হয়। একটা নিউট্রাল বডি থাকে, একটা ওই রকম নিউট্রাল সার্চ কমিটি থাকে। এটাকে প্রতিষ্ঠানিক একটা রূপ দিতে হবে, যেন প্রতিটি নির্বাচনের আগে আবার কথা বলতে না হয়। এগুলো প্রণয়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
কালবেলা: সাম্প্রতিক সময়ে আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির কথা আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী?
সালাহউদ্দিন: এ ব্যাপারে আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমরা আগে থেকে যেভাবে বেড়ে উঠেছি, সেখানে আসনভিত্তিক নির্বাচনের সংস্কৃতি আছে। এটাতে মানুষ অভ্যস্ত। এর মধ্য দিয়ে মানুষ তার নিজের এলাকার প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পছন্দ করে। ওয়েস্টমিনস্টার টাইপ অব সিস্টেম যুক্তরাজ্য, ভারতসহ পৃথিবীর বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশে যেটির প্র্যাকটিস রয়েছে। আমরা হঠাৎ করে এখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে নতুন কোনো সিস্টেমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাটা এই মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করি। এখানে হয়তো কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থ আছে এবং তারা সেটা উত্থাপন করতেই পারে, এ ব্যাপারে তাদের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু ঐক্যটা হতে হবে রাজনৈতিক। বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা ঐক্য হতে হবে এসব বিষয়ে। আমাদের অবস্থান হচ্ছে, আমরা আনুপাতিক নির্বাচনে বিশ্বাসী নই। আমাদের ঐতিহ্যবাহী যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আছে ওয়েস্টমিনস্টার টাইপ অব সিস্টেমে, সেই আসনভিত্তিক নির্বাচনী সিস্টেমে আমরা বিশ্বাস করি। এখানে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার।
কালবেলা: আপনারা বলছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি যৌক্তিক সময় দেবেন। এই যৌক্তিক সময়ের মেয়াদ ঠিক কতদিন?
সালাহউদ্দিন: কিছুদিন আগে একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে আমি বলেছিলাম—অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ এরই মধ্যে দুই মাস (বর্তমানে আড়াই মাসের অধিক) পার হয়ে গেছে। সংস্কার কমিশনগুলো রিপোর্ট প্রণয়নে তিন মাস সময় নেবে। তার পরবর্তী এক মাস প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের সঙ্গে কথা বলবেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, এতে ছয় মাস কাভার হয়। ইতোমধ্যে এই চলমান প্রক্রিয়ায় যদি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় এবং তারা যদি ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন, তাহলে এই ছয় মাস-পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়া সম্ভব। সে হিসাবে সময়টা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ৯ মাসে দাঁড়ায়। আমার কাছে এটাই যৌক্তিক মনে হয়েছে। অবশ্য এটা কোনো শক্ত বক্তব্য নয়। যদি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংস্কারের জন্য আরও কিছুটা সময় নিতে হয়, যে সংস্কারগুলো নির্বাচনমুখী যেমন—নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, জুডিশিয়ারি। এসব জায়গায় প্রয়োজনীয় সংস্কারে যদি আরও সময়ের প্রয়োজন হয়, সেটা তখন দৃশ্যমান হবে। আমরা অনুরোধ করেছি, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় যে সংস্কার, সেটা অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করুন। পাশাপাশি একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ দ্রুত প্রকাশ করা দরকার। জনগণের মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে ফিরে যাওয়া, একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার পাওয়ার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা, সে জায়গায় যাওয়ার একটি রোডম্যাপ এই সরকার যত শিগগির প্রদান করবে, তত আমাদের জন্য কল্যাণকর।
কালবেলা: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন? বিএনপি এ ক্ষেত্রে কীভাবে অবদান রাখতে পারে?
সালাহউদ্দিন: বাংলাদেশে আগস্ট বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে যে জনআকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, যে চেতনা মানুষের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে—এটাকে ধারণ করে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা আমাদের অঙ্গীকার। জাতির এবং শহীদদের প্রত্যাশাও ছিল তাই। আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা কোনো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব নয়, বলশেভিক টাইপেরও কোনো বিপ্লব নয়; মানুষের গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাওয়ার বিপ্লব। সুতরাং এই বিপ্লবের চেতনা-আকাঙ্ক্ষা সর্বোপরি শহীদদের রক্তের আকাঙ্ক্ষাকে ধরে রাখতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে।
কালবেলা: আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী গুমের শিকার হন। আপনি নিজেও একটা সময় পর্যন্ত গুম ছিলেন। বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে গুম প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেবে?
সালাহউদ্দিন: জুলাই-আগস্টে যে বিপ্লব সাধিত হয়েছে, এই বিপ্লবের প্রধান বার্তা কী? দেশে গুম-খুনের কোনো সংস্কৃতি থাকতে পারবে না এবং বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ হবে। ভিত্তি হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার।
প্রথম দিন গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যে আওয়াজটা উঠেছে, আয়নাঘর খুঁজে বের করো, বন্দিদের মুক্ত করো। কয়েকজন মুক্ত হয়েছেন। ওই
গুম-খুনের সংস্কৃতি যারা সৃষ্টি করেছিল সেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী—এটা তাদের রাজনীতির ইতিহাস। তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের একটা উগ্র বাসনা থেকে এসব গুম-খুনের সংস্কৃতি চালু করেছিল। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে। আমার কাছে ৮ হাজার ১৭৭ জনের মতো একটি তালিকা ছিল, যেটা অধিকার নামের একটি সংগঠন করেছে। ২ হাজার ৭০০ জনের মতো এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের (বিচারবহির্ভূত হত্যা) শিকার হয়েছে। সেটা অবশ্যই বাংলাদেশের অপসংস্কৃতি, ফ্যাসিবাদ কায়েম। এ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে, এটা অগ্রাধিকার।
কালবেলা: বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এবং অন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনবে কি না?
সালাহউদ্দিন: ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। এখানে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, নিরাপত্তা, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটা পারস্পরিক নির্ভরশীলতা আছে।
ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘ইন্টার ডিপেনডেন্সি ইজ এ পাওয়ার অ্যান্ড ইজ এন অপরচুনিটি’। এটাকে আমরা উভয় দেশের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের সার্বভৌম ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে কীভাবে কাজে লাগাতে পারি, সে চেষ্টা করব। আমাদের নীতির মধ্যে আগে থেকেই যেটা বলা আছে যে, আমরা পারস্পরিক সার্বভৌম সমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে শুধু প্রতিবেশী নয়, পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রাখব। এটাই আমাদের নীতি। সেটা চীন হোক, ভারত কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্র।