২০১৫ সালে রাজধানীর ৫০ লাখ মানুষকে পয়ঃসেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয় ঢাকা ওয়াসা। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে সেটি দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকায়। ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষও হয়। ঘটা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি উদ্বোধন করেন। সেই প্রকল্পের কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। অপরিকল্পিত প্রকল্পে সরকারের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হওয়ার পর ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি চালিয়ে রাখতে প্রতি বছর সরকারকে এখন গচ্চা দিতে হচ্ছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এত টাকা গচ্চা দিয়েও সক্ষমতা অনুযায়ী বর্জ্যের অভাবে প্লান্টের সব যন্ত্রপাতি চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে চললে দশ বছর পরে প্লান্টের হাজার হাজার কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি ভাঙাড়ি হিসেবে বিক্রি করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ পায়নি অনেকেই। আবার দুর্গন্ধ এবং গ্যাসে পুরো দাশেরকান্দি এলাকা প্রায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘পুরো প্রকল্পটিতে দাশেরকান্দিতে স্থাপনা বানানো আর লুটপাট করা ছাড়া আর কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। যে কারণে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এত বিশাল প্রকল্প কোনো কাজেই আসছে না। উল্টো লোকসান দিয়ে যন্ত্রপাতি চালিয়ে রাখতে হচ্ছে। এদিকে দাশেরকান্দি প্রকল্পে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যেই দুদকের দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি প্রকল্পের কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে।
নথিপত্র বলছে, রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, মহাখালী, ডিওএইচএস, তেজগাঁও, মগবাজার, ইস্কাটন, নিকেতন, কলাবাগান (আংশিক) ও হাতিরঝিল এবং তৎসংলগ্ন এলাকার পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদীতে নিষ্কাশন এবং এর মাধ্যমে পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প নেয় ঢাকা ওয়াসা। এ ছাড়া সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২-এর ইনটেক পয়েন্টে শীতলক্ষ্যা নদীর পানির দূষণ কমানোও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। রাজধানীর অন্তত ৫০ লাখ মানুষকে সেবা দিতে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্লান্ট স্থাপন করা হয়। চায়না এক্সিম ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদের ঋণসহ সরকারের এবং ঢাকা ওয়াসার নিজস্ব অর্থে প্রায় ৩ হাজার ৭১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চালু হয় একই বছরের জুলাই মাসে। এর এক বছর পর ১৩ জুলাই ঘটা করে প্রকল্পটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।
নথিপত্র বলছে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ৫০ লাখ মানুষের বর্জ্য শোধন করে প্লান্টে প্রতিদিন প্রায় ৪৫ মেট্রিক টন ছাই উৎপন্ন হবে, যা সিমেন্ট কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবে ঢাকা ওয়াসা। এ ছাড়া বর্জ্য শোধন করে তা বালু নদীতে ছাড়ার ফলে নদীর পানির গুনগত মান ভালো হবে। একই সঙ্গে পরিবেশদূষণ রোধ এবং রামপুরা খাল, বালু নদী, শীতলক্ষ্যা নদীসহ অন্যান্য জলাশয়ের পানির গুণগত মান উন্নয়নে প্লান্টটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। রাজধানীতে প্রতিদিন যে ২ হাজার মিলিয়ন লিটার বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার প্রায় ২৫ শতাংশ শোধন করতে পারবে দাশেরকান্দি প্লান্ট। তবে কালবেলার অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা। প্রকল্পটি চালু হওয়ার দুই বছরেও লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও যেতে পারেনি এটি। যেখানে প্রতি বছর ৩৩১ কোটি টাকা লাভ হওয়ার কথা ছিল ওয়াসার, সেখানে বছরে গড়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ওপরে ভর্তুকি দিয়ে চালু রাখা হচ্ছে প্লান্টটি। ফলে প্রতি বছর গড়ে অন্তত পাঁচশ কোটি টাকা লোকসানে প্রতিষ্ঠানটি। আর ভর্তুকির টাকা ওঠাতে বছর বছর পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে, যার চাপ পড়ছে রাজধানীবাসীর ওপর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্পের লক্ষ্য বর্জ্য শোধন হলেও রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে প্লান্টে বর্জ্য নেওয়ার জন্য কোনো সংযোগ লাইন নির্মাণ করা হয়নি। ফলে ব্যাপক ক্ষমতাসম্পন্ন প্লান্ট তৈরি করা হলেও বর্জ্যের অভাবে তা কোনো কাজেই আসছে না। পরে প্লান্টটি চালু রাখতে হাতিরঝিলের আশপাশের রাজউকের তৈরি করা সুয়্যারেজ লাইনের পানি নিয়ে সেটি কোনোরকম চালু রাখা হয়েছে। আর হাতিরঝিলের ময়লা পানি শোধন করে তা ফেলা হচ্ছে বালু নদীর সঙ্গে সংযোগ ময়লা-নোংরা খালে। ফলে প্রকৃতি কিংবা নদী-খাল-জ্বলাশয়ের পানির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। যার কোনো প্রভাবই পড়ছে না প্রকৃতিতে। উল্টো ওয়াসার পানিতে স্থানীয়দের কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। সংযোগ লাইন না থাকায় রাজধানীর যে ৫০ লাখ মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য এই প্লান্ট তৈরি করা হয়েছিল, তারা কোনো সেবাই পাচ্ছেন না। এতে কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না ওয়াসা। আর প্লান্টটি পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে না পারায় আয়ও হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যদি প্রকল্পের আওতাধীন এলাকায় সংযোগ লাইন নির্মাণ শুরু হয়, তাহলে তা শেষ হতে অন্তত ১০ বছর লাগবে। আর দশ বছর প্রকল্পের যন্ত্রপাতি পড়ে থাকলে তা অকেজো বা নষ্ট হয়ে যাবে। তখন প্রায় ৪ হাজার কোটির ওই প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ভাঙাড়ি হিসেবে বিক্রি করা ছাড়া কোনো কাজেই আসবে না।
ঢাকা ওয়াসা কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যপরিষদের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বড় প্রকল্পে বড় লুটপাটেই ছিল তাকসিম এ খানের নজর। তাই নেটওয়ার্ক নির্মাণের মতো অল্প টাকার কাজে তার নজর ছিল না। দেশের এমন বিপুল ক্ষতি করার কারণে তাকসিম এ খানের বিচার দাবি করছি।’
নথিপত্র বলছে, প্রকল্পটি চালিয়ে রাখতে ২০২২-২৩ বর্ষে ২২৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ২০২৩-২৪ বর্ষে ১৩৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৪-২৫ বর্ষে ১৯৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বাজেট ধরা হয়। প্রকল্পটি পূর্ণ শক্তিতে চললে বছরে প্রায় ৩৩১ কোটি টাকা লাভ হতো। সেটাও ক্ষতির তালিকায় যুক্ত হবে। কারণ, প্রকল্পের টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। সেই ঋণের টাকা ২০২৭ সাল থেকে পরিশোধ করতে হবে ওয়াসাকে।
জমি হারালেও ক্ষতিপূরণ পাননি স্থানীয়রা: প্রকল্পটিতে জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫০ কোটি টাকা, যার মধ্যে খরচ হয়েছে প্রায় ১১৮ কোটি টাকা। তবে জমি হারানো স্থানীয়রা বলছেন, তারা ক্ষতিপূরণ পাননি। কেউ কেউ পেলেও তা জমির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কম। এ ছাড়া টাকা উত্তোলনে দিতে হয়েছে ঘুষ। গত কয়েকদিন দিনভর দাশেরকান্দি এলাকায় ঘুরে অন্তত ৫০ জন ভূমি হারানো স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় কালবেলার। তাদের মধ্যে একজন নাজমা বেগম। প্লান্টের মূল জায়গাটির মালিক ছিলেন এই নাজমা বেগম। নাজমা বেগমের স্বামী এবং কর্মক্ষম এক সন্তান ৯ বছরের সন্তান রেখে মারা গেছেন। অন্তত ২৫ বছর ধরে বসবাস করা নিজ জমি হারিয়ে নাজমা বেগম এখন অন্যের বদান্যতায় তার বাসায় থাকেন। যে কোনো সময় বাসা থেকে বের করে দিলে পুত্রবধূ ও শিশু সন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে। জানতে চাইলে নাজমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে কালবেলাকে বলেন, ‘আমার জমি নেওয়ার সময় আমাকে বলেছে আমার ক্ষতিপূরণ দিবে, সঙ্গে বকশিশও দিবে। কাজের সময় আমি আমার বাসায় রান্না করে তাদের খাওয়াইছি ডরে। পরে বুলডোজার দিয়ে তারা আমার ঘর ভেঙে দিছে। বকশিশ তো দূরের কথা—কোনো টাকাই তারা আমাকে দেয় না।’ মো. কামাল হোসেন নামের আরও এক ব্যক্তির ১০ কাঠা জমি গেলেও পাননি ক্ষতিপূরণ। আরও এক ব্যক্তির দেড় বিঘা জমি চাষ করে সংসার চালাতেন শামসুন্নাহার নামের এক নারী। জমির মালিকরা ৫ ভাই অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তারাও কয়েকবার ক্ষতিপূরণের জন্য ঘুরে কোনো টাকা পাননি। একই রকমভাবে মো. হেলাল উদ্দিন নামের আরও এক ব্যক্তির ৫ কাঠা, সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সাড়ে ৩ বিঘা জমি গেলেও কোনো টাকা পাননি। এ ছাড়া স্থানীয় খনকার বংশের প্রায় ১৫টি পরিবারের ২০ বিঘার মতো জমি গেছে প্লান্টে। অল্পকিছু ক্ষতিপূরণ পেলেও বেশিরভাগ জমির কোনো টাকা পাননি। এ ছাড়াও সবুজ নামের এক পরিবারের ৮ ভাইয়ের ৬ বিঘা জমি হারালেও বিল পাননি ৪ বিঘার। জিয়াউল হক নামের এক ব্যক্তির পারিবারিক ৭ থেকে ৮ বিঘা জমি হারিয়েছেন প্লান্টে। যেখানে তাদের বাড়ি ছিল। বাড়ি ভেঙে দিয়ে জমি দখল করা হয়েছে। তবে মাত্র ৭ কাঠার বিল পেয়েছেন জিয়াউল। এ ছাড়া আলেক মিয়া, লিটন হোসেনসহ আরও দুই শতাধিক মানুষ তাদের জমি হারালেও ক্ষতিপূরণ পাননি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা গ্রাম থেকে টাকা তুলে দাশেরকান্দি থেকে আফতাবনগর পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ টাকার বালু ফেলে একটি রাস্তা নির্মাণ করেন। সেই রাস্তা দখল হয়ে গেছে প্লান্টের পেছনের দেয়ালে। এই রাস্তা দখল করে বালু নদীর সংযোগ খালে পানি ফেলা হচ্ছে। সেসময় স্থানীয়দের নতুন রাস্তা করে দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা বলেন, কেউ প্রতিবাদ করলেই পুলিশ চলে আসত। তারা বলত, সরকারের সঙ্গে ঝামেলা করে পারবেন না। মামলা খেতে খেতে জীবন শেষ হয়ে যাবে। এলাকায় থাকতে পারবেন না।
দাশেরকান্দির দুঃখ ওয়াসার প্রকল্প: স্থানীয়দের কাছে ওয়াসার এই প্রকল্প গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জমি দিয়ে ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকেই এখন অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকছেন। কেউ কেউ খালের মধ্যে টং বাড়ি বানিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। অনেকেই বাপ-দাদার জমি হারিয়েও ক্ষতিপূরণ না পেয়ে একেবারে নিঃস্ব। এর মধ্যে আবার নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ট্রিটমেন্ট প্লান্টের দুর্গন্ধ ও ধোঁয়া। তারা বলছেন, প্লান্টের ধোঁয়ার সঙ্গে মারাত্মক দুর্গন্ধ বের হয়, যে কারণে এই এলাকা প্রায় বসবাসের অনুপযোগী। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে যে গ্যাস বের হয়, সেই গ্যাসে চোখমুখ খুব জ্বালাপোড়া করে। বাচ্চাদের তখন খুব কষ্ট হয়।
নামমাত্র ক্ষতিপূরণ: দাশেরকান্দি এলাকায় জমির দাম ৭ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত কাঠা বলে দাবি স্থানীয়দের। তবে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে মাত্র সোয়া ২ লাখ টাকা করে। এ ছাড়া কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়। জানতে চাইলে মাইনুদ্দিন নামের এক ভুক্তভোগী কালবেলাকে বলেন, আমার ৩০ কাঠা জমি গেছে। আমার রাস্তার পাশের জমির দাম ১০ লাখ টাকার ওপরে। তারা মাত্র ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে। এর মধ্যে আবার ২ শতাংশ ভ্যাট ও কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে ডিসি অফিসে ঘুষ দিতে হয়েছে। এ ছাড়া যারা আংশিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, এমন অন্তত ১৫ জন কালবেলাকে কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সবাইকে চাকরিচ্যুত: শুরুতে জমি দখলের জন্য স্থানীয়দের চাকরি দেওয়া হয়। প্রকল্প শেষ হলে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থান করা হবে বলে মুলা ঝোলানো হয়। প্রকল্প শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রায় ৬০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সেখানে গোপালগঞ্জের লোকজনকে চাকরি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ চাকরিচ্যুতদের। শুরু থেকে সেখানে চাকরি করা যুবকদের মধ্যে একজন ফয়সাল আহমেদ। তার সঙ্গে আরও ৬০ জনের মতো ছিলেন বলে জানিয়েছেন এই যুবক। ফয়সাল কালবেলাকে বলেন, এটার ভেতরে সব গোপালগঞ্জের মানুষ।
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকেই ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসিম এ খান আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রকল্প পরিচালক মো. মোহসেন আলীকে একাধিকবার ফোন ও মেসেজ দিলেও তিনি কোনো রেসপন্স না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে উপপ্রকল্প পরিচালক মো. মোমতাজুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি অফিসিয়ালি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এবং বর্তমানে দাশেরকান্দি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘এটায় ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, এটা সত্যি। তবে পরিকল্পিতভাবে সংযোগ লাইন নির্মাণ করা হলে লাভ হতো।’ তিনি দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটি আসলে যারা পরিকল্পনা করেছে, তাদের বিষয়। তবে ওয়াসা সংযোগ লাইন এখন নির্মাণ করবে।’ জমি অধিগ্রহণের দুর্নীতির বিষয়ে বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণে ১৫০ কোটি টাকা বাজেট ছিল। ১১৮ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে। আমরা তো টাকা ডিসি অফিসে দিয়ে দিছি। জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি ডিসি অফিসের বিষয়।’
জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘ওয়াসার এমডির অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে; কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ তিনি ছিলেন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। এই যে জনগণের টাকায় প্রকল্প পরিকল্পনায় যে ব্যর্থতা, এটি ইচ্ছাকৃত। এর মূল্য দিতে হচ্ছে এখন জনগণকে। এখানে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। এখনই সময় ওয়াসার যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন, তাকে আইনের আওতায় আনার। সঙ্গে ওয়াসার যে নজরদারি মন্ত্রণালয় ছিল, সেখানে যে দায়িত্বে ছিল তাকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।