অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে আপনারা কোন কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দিচ্ছেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন খাত রয়েছে। তার একটি হলো ব্যাংক খাতের সংস্কার। এ খাতে প্রথমে আমরা দেশের রাষ্ট্রীয় এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পদ্ধতির উন্নতি করতে চাই। ব্যাংকগুলোর ঋণখেলাপি অনেক বেড়ে গেছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে আমরা কাজ করতে চাই। যে বড় বড় পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছে সেগুলো কোথায় এবং কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তা যাচাই করতে চাই। ব্যাংকগুলো নিজস্ব পরিচালনা কাঠামোর দুর্বলতা এবং সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই। ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফেরত আনতে চাই।
আমানতকারীরা ভরসা পাচ্ছেন না। ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ লুটপাট করে খালি করে দেওয়ায় অনেক সময় আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারছেন না। অনেকে এলসি খুলতে পারছেন না। বিশেষ করে বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যাদের ব্যাংকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তারা ছাড়া অন্যরা এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন। এ ছাড়া নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। আমরা এসব সমস্যা অ্যাড্রেস করতে চাই এবং ব্যাংক খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে চাই।
দ্বিতীয়ত, আমরা দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধ করতে চাই। অনেকে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং করে টাকা পাচার করছে। অনেকে আবার হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করছে। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে সেখানে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অর্থ পাচারের কাজে যারা জড়িত তাদের দেশের ব্যাংকগুলোতে বড় বড় ঋণ রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক থেকে অর্থ ঋণ নিয়ে সেই অর্থ তারা বিদেশে পাচার করছে। এতে একে তো দেশের সম্পদ বিদেশে চলে যাচ্ছে, তার ওপর ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীরা যে টাকা রেখেছিলেন সেখানে অনিরাপত্তা তৈরি হচ্ছে। তাই টাকা পাচার রোধ করা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব প্রশাসন এবং কার্যপরিধি সংস্কারও আমাদের অগ্রাধিকারে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক নীতি আগে দেশের অর্থনীতি এবং বাজারব্যবস্থা খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। আগের সরকার ইচ্ছেমতো বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবহার করেছে। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকিং নিয়মনীতি না মেনে অতিরিক্ত পরিমাণ টাকা ছাপিয়ে নিয়েছে। সরকার ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে। আর এর ভুক্তভোগী হয়েছে দেশের মানুষ। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার করাটাও আমরা জরুরি বলে মনে করছি।
ব্যাংকিং সেক্টরের এ তিনটি জায়গায় সংস্কারের পাশাপাশি আরেকটি জায়গা আমি উল্লেখ করতে চাই যেখানে আমরা গুরুত্ব দিতে বাধ্য। আর সেটা হলো দেশের পুঁজিবাজার। এজন্য আমরা দেশের সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। পুঁজিবাজারের মনিটরিং ও জবাবদিহিতা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছি। পুঁজিবাজারের ইনসাইডার ট্রেডিং এবং ম্যানুপুলেশন নিয়ন্ত্রণে একটি কমিটি করা হয়েছে, যারা এ বিষয়গুলো দেখবে। আমরা চেষ্টা করছি যেন পুঁজিবাজারে ফলপ্রসূ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
আর্থিক খাতের সংস্কারে আমাদের আরেকটি বড় অগ্রাধিকার দেশের ট্যাক্স বা রাজস্ব খাত। এনবিআরসহ সরকারের আয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। রাজস্ব আহরণে প্রচুর লিকেজ হয়, একই সঙ্গে ট্যাক্স কালেকশনে অনেক অর্থও ব্যয় হয়। ফলে পুরো রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও পৃথিবীর বহু দেশের তুলনায় অনেক কম। আয়কর আদায় বাড়ানো আমাদের একটি বড় লক্ষ্য হবে। একই সঙ্গে আমরা কাস্টম খাতেও সংস্কার আনতে চাই। বিদেশি ঋণ ম্যানেজমেন্ট নিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে। কাজ করতে হবে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি নিয়ে। সার্বিকভাবে আর্থিক খাতের সংস্কারে এগুলোই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।
কালবেলা: সংস্কার কাজ কি শুরু করেছেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমরা এরই মধ্যে এ সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি। বিভিন্ন সেকশন ধরে ধরে টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে। বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পলিসি রিফর্মের চিন্তাগুলো আগে করা হয়েছে। ফলে এখন এ খাতের সংস্কার নিয়ে কাজ করা আমাদের জন্য অনেকটা সহজ হচ্ছে।
আর্থিক খাতের বাইরে ব্যবসা খাতেও সংস্কার প্রয়োজন। বাণিজ্য বহুমুখীকরণে কাজ করতে হবে, পণ্য বহুমুখীকরণের সঙ্গে ডেসটিনেশন বহুমুখীকরণেও কাজ করতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে হবে, রপ্তানির জন্য সুবিধাজনক খাতকে উৎসাহিত করতে হবে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে যেন অরাজকতা না ঘটে, যেন অর্থ পাচারের সুযোগ না থাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এগুলো দেশের বাণিজ্য খাতের সংস্কারের মধ্যে পড়বে।
এর বাইরে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সংস্কার। এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ নানা ধরনের বাণিজ্যিক সংগঠন রয়েছে। এগুলো যথেষ্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ কি না, তা যাচাই করতে হবে। তারা আসলেই প্রকৃত ব্যবসায়ীদের এবং দেশের স্বার্থরক্ষা করতে কাজ করছে কি না, তাও যাচাই করতে হবে। দেখতে হবে তারা শুধু তাদের সিলেকটিভ কিছু মেম্বারদেরই সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছে কি না। আমরা এসব বিষয়ে নজর দিতে চাই।
কালবেলা: দেশের অর্থনীতি অনেকটা সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। এ সংকট পরিস্থিতি তৈরি হলো কেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমাদের পলিসিগত যে সমস্যাগুলো ছিল সেগুলো অত্যন্ত মায়োপিক। ফল কী হবে তা চিন্তা না করেই অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের খারাপ পলিসিগুলো নেওয়া হয়েছিল ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের খুশি করার লক্ষ্যে। এমনকি আমাদের আইটি সেক্টরে বড় বড় কন্টাক্ট পেয়েছে মুষ্টিমেয় কিছু লোক। এসব প্রজেক্টে সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হয়নি। গত এক দশকে প্রচুর পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে ব্যাপক পরিমাণ লুটতরাজ করা হয়েছে।
পাঁচ বছরের প্রকল্প ১৫ বছর টেনে নেওয়া হয়েছে। আর এসব করে লাভ হয়েছে কন্ট্রাক্টরদের এবং মুষ্টিমেয় কিছু লোকের। প্রকল্পের গুণগতমান এবং বাস্তবায়নে কোনো মিল নেই। গত ১৫ বছর যাবৎ এসব চলছে। একই সঙ্গে সদিচ্ছার অভাব এবং দুর্নীতি—সব মিলে দেশের অর্থনীতি তারা ধ্বংস করে ফেলেছে। অর্থনীতিতে তারা বিরাট একটি ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
শুধু সরকারি প্রকল্পে এরকম হয়েছে তা নয়, প্রাইভেট সেক্টরের প্রকল্প বা উদ্যোগগুলোও তারা নষ্ট করেছে। ব্যবসায়িক সেক্টরে তারা কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হতে দেয়নি। সৎ ও মেধাবী উদ্যোক্তাদের তারা সামনে আসতে দেয়নি। নানাভাবে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। একজন সৎ ব্যবসায়ীকে তারা বাজারে নামতে দেয়নি সেখানে অসৎ ও ধান্দাবাজ লোকদেরই একচেটিয়া ক্ষমতা দিয়েছে। ভালো ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ছেড়ে বের হয়ে যেতে বাধ্য করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের নামে লুটতরাজ করেছে।
প্রশাসনের মুষ্টিমেয় লোক প্রশাসনিক ব্যয়ের সুবিধা গ্রহণ করেছে। স্বাভাবিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জনকল্যাণমুখী খাতগুলোতে ব্যয় করা হয়নি। ফলে মানুষের মনে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আর এ ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে।
কালবেলা: লুটপাটকারীদের বিচারের আওতায় আনার কোনো চিন্তা আপনাদের আছে কি?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: দেশটাকে আজ এই জায়গায় নিয়ে আসার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দেশের অর্থ খাত, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতে এরই মধ্যে বিভিন্ন লোককে বিভিন্ন দুর্নীতির দায়ে এবং অন্যান্য ইস্যুতে আইনের আওতায় নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিষয়গুলো এবং জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে যারা অপরাধ ঘটিয়েছে তাদের দিকে বেশি দৃষ্টি দেওয়ায় অন্যান্য বিষয় চোখে পড়ছে না। তবে একই সময়ে দুর্নীতিবাজ অনেক লোকজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ এবং আয়কর যাচাই করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমরা হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের চেয়ে বড় বড় কেসের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছি। আস্তে আস্তে অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। ব্যবসায়ী বা রাজনীতিবিদ যারাই দুর্বৃত্তায়নে লিপ্ত ছিল, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
আমরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দিকে বেশি দৃষ্টি দিচ্ছি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাক সেটা আমরা চাইছি না। কারণ একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান, অনেক মানুষের রুটি-রুজি জড়িয়ে থাকে। এজন্য আমরা কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করিনি। বরং আমরা শুধু অপরাধী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। সম্প্রতি বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে অনেক অর্থসম্পদ বিদেশে পাচার করার তথ্য উঠে এসেছে। এসব ক্ষেত্রে হয়তো সরকার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তবে ঢালাওভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার চিন্তা করছে না।
দুর্নীতি ও লুটপাটকারীদের চিহ্নিত এবং তাদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কোনো দুর্বল কেস নিয়ে লাভ হবে না। এ কারণে আগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। অর্থ পাচারসংক্রান্ত তথ্যের জন্য আমরা এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে, এ ছাড়া অন্যান্য দেশের সংস্থা এবং সরকারকে অনুরোধ করা হবে যাতে তারা আমাদের সহযোগিতা করে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে জানিয়েছে তারা এক্সপার্ট দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবে। এমনকি আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক বলেছে, তারা আমাদের কারিগরি সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
আমরা এরই মধ্যে জানি কারা দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে এবং দেশ থেকে অর্থ পাচার করেছে। এখন আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি সেই অর্থের পরিমাণ কত। তদন্ত শেষ হলে আমরা অন্যান্য দেশ থেকে পাচারের অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করব। আর যেসব দুর্নীতির টাকা এখনো দেশের মধ্যে রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।
কালবেলা: ব্যাংক খাত সংস্কারে আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: সরকারি ব্যাংক হলে সেখানে আমাদের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সেখানের গভর্নিং বডি পরিবর্তন বা অন্যান্য কাজ আমরা যে কোনো সময় করতে পারব। আর ইসলামী ব্যাংকের মতো বেসরকারি যে ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোও আমরা মনিটরিংয়ের মধ্যে রেখেছি। আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধ করতে পারব না কারণ সেখানে মানুষের আমানত রয়েছে। ব্যাংক বন্ধ করলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক চিন্তাভাবনা করছে, দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে লিকুইডিটি সাপোর্ট দিয়ে টিকিয়ে রাখতে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজে বা অন্যান্য ভালো অবস্থানে থাকা ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়া ব্যাংককে লিকুইডিটি সহায়তা দেবে।
আমরা চিন্তা করছি, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মার্জ করে একটু শক্তিশালী করা যায় কি না। এটি আমাদের সামনে একটি অপশন কিন্তু এখানে তাড়াহুড়া করা বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য ঠিক হবে না। আমাদের নিজেদেরও কিছু চিন্তাভাবনা রয়েছে, যা আমরা এই মুহূর্তে প্রকাশ করছি না। এসব বিষয় নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ করব।
কালবেলা: নতুন সরকারের কাছে মানুষ আশা করে যে, জিনিসপত্রের দাম কমবে। মানুষ কষ্টে রয়েছে। জিনিসপত্রের দাম কেন কমানো যাচ্ছে না? সরকার কী উদ্যোগ নিচ্ছে?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: বাজারে পণ্যের সংকট নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। কিছু ব্যবসায়ীর অসততার কারণে বাজারে মূল্যস্ফীতি কমছে না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। তারপরও সুফল মিলছে না।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা নিজেদের মধ্যে এক ধরনের যোগসাজশের মাধ্যমে বাজারদর উচ্চ রেখেছে। এ ক্ষেত্রে তারা নানা ধরনের অজুহাত দিচ্ছে, যা সত্য নয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে অত্যধিক লাভ করার প্রবণতা বাজার ব্যবস্থায় অনেক ক্ষতি করছে। এখানে সরকারের পক্ষ থেকে যতটা বাজার মনিটরিং করা প্রয়োজন, সেটা হয়তো এই মুহূর্তে ততটা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি আমরা জেলা পর্যায়ে ডিসিদের বলে দিয়েছি যাতে তারা বাজার মনিটরিং জোরদার করেন। আমরা আশা করছি আস্তে আস্তে বাজার শান্ত হবে।
আমরা মনে করেছিলাম বাজার থেকে চাঁদাবাজি উঠে যাবে। কিন্তু এক গ্রুপ গেলে আরেক গ্রুপ সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে। বিভিন্ন বাজারে এখনো চাঁদাবাজি হচ্ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশে অন্যান্য আরও অনেক ইস্যুতে অনেক ব্যস্ত। সবকিছু মিলে তারাও সবদিকে মনোযোগ দিতে পারছে না। আমরা চেষ্টা করছি একটা বার্তা দিতে যাতে ক্রেতা ও বিক্রেতা সবাই একটু ধৈর্য ধরেন এবং আমাদের ওপর ভরসা রাখেন। আমরা আশা করব সবাই দেশের এবং দেশের মানুষের মঙ্গল চিন্তা করে নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসবেন।