অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছেন আজ শনিবার। ‘রাষ্ট্র সংস্কার এবং ছয় সংস্কার কমিশন গঠন’ ইস্যুতে রাজধানীর হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’য় দুপুর আড়াইটায় বিএনপিকে দিয়ে সংলাপ শুরু হচ্ছে। সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়া রাজনৈতিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, প্রথমত তারা প্রধান উপদেষ্টার কথা শুনবেন। এরপর তারা রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ বিষয়ে সরকারের মনোভাব জানতে চাইবেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এটি হবে তৃতীয় দফা সংলাপ। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে আজ কয়টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা সংলাপ করবেন, তার সংখ্যা জানা যায়নি।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, আমরা যাব। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সংলাপে ডেকেছে, গণতন্ত্র মঞ্চ সংলাপে যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কী বলতে চান, তা শুনব। তারপর দেশের পরিস্থিতি ও করণীয় সম্পর্কে আমাদের কিছু বক্তব্য থাকবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ডেকেছেন। সংস্কার কমিশনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। আমরা যাব, দেখি প্রধান উপদেষ্টা কী বলেন।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিকেল সাড়ে ৫টায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট ইস্যুতে কথা বলবেন।
সংলাপের সময় সূচি: আজ দুপুর আড়াইটায় বিএনপি, বিকেল ৩টায় জামায়াতে ইসলামী, বিকেল সাড়ে ৩টায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিকেল ৪টায় বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিকেলে সাড়ে ৪টায় হেফাজতে ইসলাম, ৫টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সাড়ে ৫টায় এবি (আমার বাংলাদেশ) পার্টির সঙ্গে সংলাপ করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঙ্গে থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাম গণতান্ত্রিক জোটের (সিপিবি) বাসদ (খালেকুজ্জামান), বাসদ (মাক্সসবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতন্ত্র মঞ্চের (জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, হেফাজতে ইসলামের (জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামী ইসলাম পার্টি) মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, এবি পার্টির এএফএম সোলায়মান চৌধুরী নিজ নিজ দলের নেতৃত্ব দেবেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের কথা জানান। পরে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনে সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসনে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই ছয় কমিশনের মধ্যে পাঁচ কমিশনের সদস্যদের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।