আলাউদ্দিন আরিফ
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ এএম
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

থানায় মামলা মানেই মাহবুব আলীর পকেটে ‘সালামি’

দুদকের অনুসন্ধান
থানায় মামলা মানেই মাহবুব আলীর পকেটে ‘সালামি’

হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী শুধু নিজেই ধনী হননি, ধনী করেছেন তার চাচা, স্ত্রী, ব্যক্তিগত সহকারীসহ অনেক আত্মীয়স্বজনকে। মাহবুব আলীর নিজের ও তার স্ত্রীর নামে বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তিনি খুন-ধর্ষণ, অপহরণসহ স্পর্শকাতর কোনো মামলার আসামিকে বিশেষ সুবিধা দিতে মামলাপ্রতি থানা থেকে ২০ হাজার টাকা করে ‘সালামি’ নিতেন। এ ছাড়া সড়কের পাশে থাকা বিপুলসংখ্যক গাছ বিক্রির জন্য দরপত্রে ১১ কোটি টাকা দাম ওঠে। সেই দরপত্র বাতিল করে এর ১১ বছর পর সেই গাছ তার অনুগত এক ব্যক্তিকে দিয়ে মাত্র ৬ কোটি টাকায় কিনে নেন। তার বিরুদ্ধে পুকুর-খাল ভরাটের অর্থ এবং পৌরসভার খাস জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে নবীগঞ্জ রিসোর্টের মালিকানা। ব্যাংক হিসাবে রয়েছে বিপুল অর্থ। সম্প্রতি দুদকের গোয়েন্দা শাখা থেকে পরিচালিত এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

মাহবুব আলী হবিগঞ্জ-৪ আসনের দুবারের সংসদ সদস্য। যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার এই বাসিন্দা গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। তবে তিনি বিপুল ভোটে পরাজিত হন যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ সায়েদুল হক ওরফে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে।

হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ প্রসঙ্গে একটি অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে কমিশন।

দুদকের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মাধবপুর-মনতলা ভায়া ধর্মঘর-হরষপুর’ সড়কে থাকা গাছ বিক্রির জন্য ২০০৬ সালে একটি টেন্ডার হয়। ওই টেন্ডারে বিদ্যমান গাছের দর ১১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। মাহবুব আলীর প্রভাবে ওই টেন্ডার বাতিল করা হয়। দীর্ঘ ১১ বছর পর ওই সড়কের গাছ মাত্র ৬ কোটি টাকায় বিক্রির টেন্ডার হয়। মাহবুব আলীকে ‘ম্যানেজ’ করে সরকারি সম্পদের বড় ধরনের ক্ষতি করে এসব গাছ কম দামে বিক্রি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মাধবপুর উপজেলার আদাইর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পতিত পুকুর ও সংলগ্ন খাল-নালা ভরাট দেখিয়ে মাহবুব আলী আত্মসাৎ করেছেন ৬০ লাখ টাকা। নিজস্ব লোক দিয়ে করা কমিটির মাধ্যমে তিনি কোনো কাজ না করেই এই অর্থ তুলে নেন। মাহবুব আলী মাধবপুর উপজেলার বুল্লা বানেশ্বর এলাকার উকিল পাড়ায় একটি পাকা বাড়ি তৈরিতে ব্যয় করেছেন কয়েক কোটি টাকা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাধবপুর বাজারে প্রথমে ৫ শতাংশ ও পরে আরও ৮ শতাংশ মোট ১৩ শতাংশ খাস জমি দখল করে অবৈধভাবে তিনতলা ভবন তৈরি করেছেন, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া তার কোটি টাকা দামের দুটি বিলাসবহুল গাড়ি ও ব্যাংকে ১ কোটি টাকা করে দুটি এফডিআর পাওয়া গেছে। মাহবুব আলীর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে প্রচুর পরিমাণ নগদ টাকা ও নবীগঞ্জ রিসোর্টে মালিকানা থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মাহবুব আলীর চাচা হেলাল মিয়া মাধবপুর বাজারে ছোট্ট একটি ওষুধের দোকান চালাতেন। মাহবুব আলী এমপি ও প্রতিমন্ত্রী থাকার সুযোগে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। মাধবপুরের কাটিয়ারা শ্মশানঘাটের কাছে একটি বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন।

মাহবুব আলীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) বিল্লাল হোসেনকে দিয়ে মাধবপুর-চুনারুঘাটের রিজার্ভ ফরেস্ট, রাবার ফরেস্ট ও সোনাই নদীর বালু উত্তোলন করান। স্থানীয় মাদক কারবারি পংকজ সাহাকে দিয়ে বালু তোলার সুযোগ করে দিয়ে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। মাহবুব আলীর বহু অপকর্মের সহযোগী এই পংকজ সাহা।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহবুব আলী সংসদ সদস্য হওয়ার পর থানা থেকে প্রতি মামলায় ২০ হাজার টাকা করে ‘সালামি’ নিতেন। এই টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব ছিল পিএস বিল্লাল ও থানার কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার ওপর। তথ্যমতে, মাধবপুর থানায় মহাববু আলীর টাকা আদায়ে সহযোগী ছিলেন উপপরিদর্শক (এসআই) মমিন। যিনি প্রায় ১৬ বছর একই থানায় থেকে থানার প্রায় ৭০ শতাংশ মামলার তদন্ত নিয়ন্ত্রণ করতেন। মাহবুব আলী সংসদ সদস্য থাকাকালে মাধবপুর চুনারুঘাটে শতাধিক গুম, খুন, অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব মামলায় আসামিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের অর্থ।

মাহবুব আলীর অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক আখতারুল ইসলাম জানান, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা অনুসন্ধান করে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

আবু জাহিরের অনুসন্ধান শুরু

হবিগঞ্জ-৩ (লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবু জাহির বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার নামে ব্যাংকে নগদ টাকাসহ রাজউকে প্লট, স্ত্রীর নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আবু জাহিরের গানম্যান ও পুলিশ সদস্য মাহবুব আহম্মদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে ছাত্র-জনতার ওপর শটগান নিয়ে নির্বিচার গুলি করেন। ওই সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে আবু জাহির ও গানম্যান মাহবুবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। সে ঘটনার দেড় মাস পরও তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসনাত-সারজিসের হত্যাচেষ্টা নিয়ে জামায়াত আমীরের ফেসবুক স্ট্যাটাস

রাজধানীতে প্রায় এক কেজি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের অভিযোগ

পর্তুগাল-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের জমকালো উদ্বোধন

সাকিবরা আইপিএলে দল না পাওয়ায় ফাহিমের ‘দুখ’

পাকিস্তানের সামনে বাংলাদেশ

আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে ঢাবিতে সমাবেশ ও মশাল মিছিল

ফ্যাসিবাদী রাজনীতি চিরতরে নির্মূল করতে হবে : জুয়েল

ইসকনকে নিষিদ্ধ ও সাইফুল হত্যার প্রতিবাদে বশেমুরবিপ্রবিতে বিক্ষোভ মিছিল

হাসনাত-সারজিসকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ঢাবিতে বিক্ষোভ

বিএনপির বিরুদ্ধে কালিমা লেপনের ষড়যন্ত্র চলছে: আজাদ

১০

‘প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে ব্যবহারিক জ্ঞান প্রয়োজন’

১১

হত্যাচেষ্টার পর হাসনাত-সারজিসের ফেসবুক স্ট্যাটাস

১২

যে কারণে মিরপুর থেকে সরে গেল এনসিএল

১৩

আইনজীবী হত্যায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুজনসহ অংশ নেয় ১৫ জন

১৪

জন্মস্থান সৈয়দপুর যাচ্ছেন বেবী নাজনীন

১৫

কাউকে আর রাষ্ট্র নিয়ে খেলা করতে দেওয়া হবে না : জেএসডি 

১৬

ফেসবুক লাইভে দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন রাফি

১৭

আন্দোলনে নিহত শ্রমিক দল নেতার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন

১৮

কাবাডি বিতর্কের মূলে ‘৮ কোটি’!

১৯

আ.লীগের ‘গুজব সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে মানববন্ধন

২০
X