সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের পাঁচ খলিফার তাণ্ডবে আওয়ামী লীগের পুরোটা সময় তটস্থ ছিল লাকসাম ও মনোহরগঞ্জবাসী। আয়নাঘর বানিয়ে নির্যাতন করে টাকা আদায়, টেন্ডারবাজি ও জোর-জুলুম করে জমি দখলসহ নানাভাবে হয়রানি করাই ছিল তাদের কাজ। এসব অনৈতিক কাজে নেতৃত্ব দিতেন মন্ত্রীর ভাতিজা সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ও যুবলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন, ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মো. কামাল হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) জাহিদ হোসেন ও মন্ত্রীর শ্যালক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত আলী। অনৈতিক কাজ করে তারা এখন বিশাল সম্পদের মালিক। তবে গত ৫ আগস্টের পর থেকে এই জুলুমবাজদের আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, তাজুল ইসলাম এমপির পদে বসেই বিস্তার করতে থাকেন নিজের সাম্রাজ্য। গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। নিজেকে ভাবতে শুরু করেন লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার একক অধিপতি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলগুলোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করে দাবিয়ে রাখার হোলিখেলায় মেতে ওঠেন তিনি। ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এলজিআরডি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। এরপর অহংকার ও দম্ভের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছান তিনি। স্যার না ডাকলে মাইন্ড করতেন। মন্ত্রিত্ব পেয়েই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। লাকসাম-মনোহরগঞ্জের সম্রাট যেন তিনিই। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর তাজুল লুটপাট আর অবৈধ সম্পদ অর্জনের খেলায় মেতে ওঠেন। দেশ-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন। দুর্নীতি, অনিয়ম ও সীমাহীন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তিনি।
হলফনামা ঘেঁটে জানা যায়, ১০ বছর আগে তাজুল ইসলামের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি টাকার কিছু বেশি। বর্তমানে তা ১২০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এলজিইডি মন্ত্রী থাকাকালীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জেলা পরিষদ, উপজেলা ও পৌরসভায় উন্নয়নের নামে দেওয়া বরাদ্দ থেকে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তাজুল ইসলামের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, মন্ত্রী এখন বছরে আয় করেন ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তার আয় ৪ কোটি টাকার কিছু বেশি ছিল। মন্ত্রী হওয়ার আগে ২০১৮ সালে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। চার বছরের ব্যবধানে সেই সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। তবে এলাকাবাসী বলছে তার সম্পদের সিকিভাগও হলফনামায় দেখানো হয়নি। তাজুল ইসলাম হাজার কোটির মালিক। তার সম্পদের পাশাপাশি বেড়েছে তার স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের সম্পদও। অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তারাও।
স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ
সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী কর্তৃক বান্দরবানের লামায় জোরপূর্বক অসহায় পরিবারের ৫০০ একর জায়গা দখল করার অভিযোগ উঠেছে। দখল থেকে বাদ যায়নি মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গাও। ২০১৯ সালে লামার সরই ইউনিয়নে স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের নামে ক্রয় করেন ১০০ একরের বেশি জায়গা। জমি ক্রয় করার পর থেকেই ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দখল করে নিয়েছেন আশপাশের অসংখ্য মানুষের জায়গা। এ জমিতে স্ত্রীর জন্য তৈরি করেন বিশাল বাংলো বাড়ি। বাড়িতে যাতায়াতের জন্য পাকা রাস্তা, কালভার্ট, বৈদ্যুতিক সংযোগ, সীমানা পিলার, মাছের প্রজেক্ট, গবাদি পশুর খামার তৈরি করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের টাকায়। এ দখলি জমি ফিরে পেতে সম্প্রতি মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।
মন্ত্রণালয় চলত এপিএস জাহিদ ও ভাতিজা আমিরুলের কথায়
মন্ত্রণালয় চালাতেন তার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) জাহিদ হোসেন ও ভাতিজা আমিরুল ইসলাম। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি, টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য, স্থানীয় সরকার পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে অর্থ বরাদ্দ, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত কিংবা প্রত্যাহার সবকিছু হতো তাদের ইশারায়। বড় বড় আমলাও ছিলেন তাদের ভয়ে তটস্থ। মন্ত্রী নিয়মিত সচিবালয়ে না গেলেও তারা অফিস করতেন নিয়মিত। মন্ত্রী তাজুল ইসলাম হলেও মন্ত্রণালয় পরিচালনা করতেন এই ‘ছায়া’ দুই মন্ত্রী।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পটপরিবর্তন হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, এপিএস জাহিদ ও ভাতিজা ছায়ামন্ত্রী হিসেবে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। সবকিছু ছিল তাদের কবজায়। ভাতিজা ও এপিএসের সঙ্গে দেখা না করে মন্ত্রীর কাছে গেলে কোনো কাজ হতো না। মন্ত্রী নিজেই জিজ্ঞেস করতেন তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে কি না। এ সুযোগে তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই), ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলা পরিষদ, পৌরসভার প্রকল্প গ্রহণ, টেন্ডার ও ঠিকাদার নিয়োগ করতেন ভাতিজা ও এপিএস। একই সঙ্গে এসব সংস্থার কর্মকর্তাদের বদলি, থোক বরাদ্দ গ্রহণ, বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণসহ সব কার্যক্রমই মূলত তাদের দুজনের নিয়ন্ত্রণে হতো। এসব প্রকৌশলীর বদলি হতে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিতেন তারা। আর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বদলি ও প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা রেট ধার্য ছিল। ঢাকার বনশ্রীতে তারে রয়েছে তার হাউজিং ব্যবসা। এসব করে রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক বনে যান তারা। এলাকাবাসীর ধারণা, ৫ আগস্টের আগে তারা দুবাইয়ে পালিয়ে গেছেন। দুবাইয়েও রয়েছে তাদের অবৈধ সম্পদ। বিদেশে পালিয়ে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
মনোহরগঞ্জের ত্রাস ভাতিজা শাহাদাত হোসেন
মনোহরগঞ্জে বিগত আওয়ামী শাসনামলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ভাতিজা সাবেক যুবলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন। এলাকায় মন্ত্রীর ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত। চাচা মন্ত্রী হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ মানুষকে তুলে নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ সম্পদের পাহাড় গড়তে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। গত ইউপি নির্বাচনে বিনা ভোটে নির্বাচিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন প্রার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ১১ জন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে মোট ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, সর্বমোট ৩৩ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে মন্ত্রীর ভাতিজা আমির। এলজিইডির প্রতিটি কাজে ১০ শতাংশ হারে কোটি কোটি চাঁদা নিতেন ওই আমির। বর্তমানে তার নামে যমুনা ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ টাকা রয়েছে। বিপুল অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ৫ আগস্টের পর তাকেও এলাকায় দেখেননি স্থানীয়রা। পলাতক থাকায় তার সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি।
পিএস কামালের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা:
কুমিল্লা এলজিইডি অফিসের টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ, ঠিকাদারি, মন্ত্রীর কমিশন বাণিজ্য এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ফুলেফেঁপে উঠতে থাকেন। মাস্টার এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের এলজিইডির বেশিরভাগ ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতেন তিনি। কোটি কোটি টাকার কাজ কমিশন নিয়ে সাব-কন্ট্রাক্টে বিক্রি করে দিতেন পিএস কামাল। মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ম-দুর্নীতির ফলে দুদক কামালের বিরুদ্ধে মামলাও করে। ৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর দুদক কুমিল্লার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের অনুসন্ধানে তার নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৫ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। দুদক সূত্র জানায়, তার পারিবারিক ব্যয়, পরিশোধিত কর ও অপরিশোধিত দায়সহ ১৭ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ২৬ টাকার নিট সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ২০ লাখ ২১ হাজার ৮০ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া গেছে। আর ৮ কোটি ৯৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৬ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।
কামালের বিপুল সম্পদের সিকিভাগও দুদকের তদন্তে আসেনি। তার কুমিল্লার হাউজিং এস্টেটে একাধিক বাড়ি, কান্দিরপাড় এলাকায় বিগ বাজার সুপার মার্কেট, একই এলাকায় অনেক ফ্ল্যাট, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও প্লট এবং কৃষি ও অকৃষি জমির তথ্য বের করতে পারেনি দুদক। স্থানীয়রা জানান, শুধু কুমিল্লা শহরেই কামালের ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকার বেশি। তারা তার এসব অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়েছেন। মনোহরগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, কামাল কৃষকের ছেলে। ঠিক মতো খেতেও পারতেন না। তিনি এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক। দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করলেও সম্পদের সিকিভাগও বের করতে পারেনি। তার দৃশ্যমান কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
মো. তাজুল ইসলাম এলজিআরডি মন্ত্রী থাকাকালে সাড়ে পাঁচ বছর শুধু কুমিল্লায় ডিপিএইচইর হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। প্রতিটি কাজের ঠিকাদার নিয়োগ দিতেন কামাল। প্রতিটি কাজ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন নিতেন। আর এর সহযোগী ছিলেন ডিপিএইচই কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ। তিনিও নামে-বেনামে প্লট, ফ্ল্যাটসহ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালের ২৬ জুলাই কার্যাদেশ দেওয়া কাজ মাত্র চার দিনে অর্থাৎ ৩০ জুলাই শেষ হয়ে যায়। আড়াই কোটি টাকার এ কাজ সম্পন্ন ও চূড়ান্ত বিল প্রদানের মতো হরিলুট করেছেন এ কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর সহচর কামাল।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কামাল হোসেনের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও আত্মগোপনে থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে।
শ্যালক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত আলী:
সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের শ্যালক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত আলীর কোনো মহব্বত নেই। নানা অপরাধমূলক কর্মের জন্য এলাকায় তিনি কসাই হিসেবে পরিচিত। কুমিল্লা জেলার লাকসাম শহরের প্রাণকেন্দ্র থানার সামনেই ছিল তার ব্যবসায়ীক অফিস। জেলায় এটি আয়নাঘর হিসেবে পরিচিত। এই ঘর থেকেই লাকসামে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের নির্দেশ দেওয়া হতো। মহব্বতের ছিল দুই খলিফা। চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন শামীম ও চেয়ারম্যান ওমর ফারুক। তাদের গোবিন্দপুর ও কান্দিরপাড়ে ছিল আয়নাঘরের দুটি শাখা। আরও দুটি শাখা পরিচালনা করতেন লাকসাম পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর মনসুর আহমদ মুন্সী ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু ছায়েদ বাচ্চু। বাচ্চুর পশ্চিমগাঁও পুরান বাজারের বাসা ও রাজঘাটে মুন্সীর কার্যালয়ে ছিল আয়নাঘরের জল্লাদখানা। আয়নাঘরের প্রধান কার্যালয় থেকে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী প্রতিদিন চারটি শাখা থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। এসব করে টোকাই মহব্বত আলী রাতারাতি হয়ে যান গাড়ি, বিশাল অট্টালিকা ও নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক। এসব আয়নাঘরে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদেরও নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল। নির্যাতিত লাকসামবাসী এসব নির্যাতনের বিচার চান।
২০১২ সালে শ্যালক মহব্বতকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করেন তিনি। যদিও ওই সময় ধনসম্পদ বলতে মহব্বতের তেমন কিছু ছিল না।
অভিযোগ রয়েছে, ধীরে ধীরে তৈরি হয় মহব্বতের গুন্ডা বাহিনী। তারা রেলওয়ের জায়গাসহ বিভিন্ন সরকারি জায়গা দখল করতে থাকে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে কৌশল পাল্টে তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিবিদ হওয়ার চেষ্টা করেন মহব্বত।
২০১৮ সালে তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। এ সময় একক রাজত্ব শুরু হয় মহব্বতের। প্রশাসনের প্রতিটি দপ্তরে তার প্রভাব ছিল। শুরু করেন প্লট-বাড়ির ব্যবসা। গত ১০ বছর লাকসামে অন্তত ৭০টি পুকুর ভরাট করেন তিনি। বাদ যায়নি ফসলি জমিও, যা প্লট আকারে বিক্রি করতেন।
সম্প্রতি ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন কুমিল্লার লাকসাম পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও দৈনিক দিনকাল পত্রিকার লাকসাম প্রতিনিধি মনির আহমেদ। একই অভিযোগে আরও অজ্ঞতা ৯০ জনকে আসামি করা হয়।
এ মামলায় অন্যান্য আসামির মধ্যে ২নং আসামি করা হয়েছে তার শ্যালক লাকসাম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী, পৌর কাউন্সিলর মোহাম্মদ উল্লাহ, বিপুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, লাকসাম পৌর মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের, গোবিন্দপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন শামীম, কান্দিরপাড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, কাউন্সিলর খলিলুর রহমান, মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মন্ত্রীর ভাতিজা আমিরুল ইসলাম, মন্ত্রী তাজুলের উন্নয়ন সমন্বয়কারী কামাল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আজকরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, রুহুল আমিন, আবদুল কাদের শাহীন ও কাওছার আহমেদ। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৩০ দিনের জন্য জব্দ করা হয়েছে তার ব্যাংক হিসাব।