কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫৭ এএম
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির আশীর্বাদ

এক দশকে শতকোটির মালিক সায়মুম

এক দশকে শতকোটির মালিক সায়মুম

এক যুগ আগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বটতলা এলাকায় বাবার সিমেন্টের দোকানের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মুম। এর দুই বছর পর ঢাকায় এসে চাকরি শুরু করেন মোটরসাইকেল শোরুমে। মাত্র ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি জীবন শুরু করা সেই সায়মুম এক দশকেই বনে গেছেন শতকোটি টাকার মালিক। গুলশান ও উত্তরায় দুটি আলিশান ফ্ল্যাট এবং দুটি অফিস, পাঁচতারকা মানের হোটেলের শেয়ার, কোটি টাকা মূল্যের মার্সিডিজ, রেঞ্জরোভারের মতো একাধিক দামি গাড়ি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাতে একাধিক ভবন, কয়েক বিঘা জমিসহ অঢেল সম্পদ রয়েছে তার। শুধু দেশে নয়, অর্থ পাচারের মাধ্যমে দুবাইয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের আশীর্বাদ, নিয়োগ বাণিজ্য, রাশিয়া থেকে গম ও বিমানসহ বিভিন্ন কেনাকাটায় মধ্যস্থতায় কমিশন নিয়ে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে আত্মগোপনে চলে যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। আর দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক আইজিপি দেশ ছেড়েছেন আরও আগেই। এই দুই প্রভাবশালীর সম্পদ রক্ষায় তিনি কাজ করছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, মোটরসাইকেল শোরুমে চাকরি করার সময় আসাদুজ্জামান খান কামালের এক পিএসের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে সায়মুমের। তার মাধ্যমেই পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয় আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় নির্বিঘ্নে মন্ত্রণালয়ে আসা-যাওয়া করতেন। পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাদের বদলি বাণিজ্য, রাশিয়া থেকে গম ক্রয়, বিমান কেনার কমিশনসহ নানা কেনাকাটায় মধ্যস্থতা করে কমিশন বাণিজ্য, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান ও বেনজীরের হয়ে বিভিন্ন সেক্টরের কমিশনের অর্থ সংগ্রহ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল তার হাতে। এমনকি তার পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ উপস্থিত থাকতেন।

সায়মুমের ঘনিষ্ঠজন জানিয়েছেন, দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা না থাকলেও সায়মুমের গুলশান এবং বনানীতে দুটি অফিস রয়েছে। আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বেনজীর আহমেদের অবৈধভাবে আয় করা টাকা বিদেশে পাচারে এই অফিস ব্যবহার করা হতো। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান ও উত্তরায় ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি রেনেসাঁ নামের একটি অভিজাত হোটেলের পার্টনারশিপও আছে তার। সবসময় চলাফেরা করেন চার-পাঁচটি দামি গাড়িতে। ২০২০ সাল থেকে অধিকাংশ সময় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেই ঘুরতেন। বোট ক্লাব, গুলশান ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাবের সদস্য হয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশীর্বাদে সায়মুম সরকারকে তিনটি হেলিকপ্টার সরবরাহ করেছেন। কমিশন পৌঁছে দিয়েছেন আসাদুজ্জামান খান কামালকে।

সূত্র জানায়, গুলশানে ফ্ল্যাট, বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পদ রয়েছে তার নামে। মূলত এসব সম্পদের মূল মালিক হচ্ছেন আসাদুজ্জামান ও বেনজীর আহমেদ। গুলশান-১-এ রয়েছে একটি ফ্ল্যাট, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে দুটি বহুতল ভবন, গুলশান-২ নম্বরের সিক্স সিজন হোটেলের পার্শ্বে ৫ হাজার স্কয়ার ফিটের রয়েছে ব্যক্তিগত অফিস। গুলশান-২-এ রোড নম্বর-২ তে তার ব্যক্তিগত ফ্ল্যাট, স্যুট এ/১ ভ্যালেন্টাইন প্যালেসে রয়েছে ব্যক্তিগত একটি অফিস, রোড নম্বর ৯৬, প্লট নম্বর ৪/১-এ রয়েছে আরও একটি ব্যক্তিগত অফিস। বনানীর হাউস নং ৭৭-বি, রোড নম্বর ১২তেও রয়েছে তার আরও একটি অফিস। এ ছাড়া নামে-বেনামে ও বড় ভাই মাসুমসহ তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নামে আরও বেশকিছু সম্পদ রয়েছে। আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বেনজীর আহমেদের বিদেশে অর্থ পাচারের অন্যতম হাতিয়ার সায়মুমের শ্যালক আসিফ। বর্তমানে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে শ্যালক আসিফের সঙ্গেই আত্মগোপনে থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোপাট করা বিপুল পরিমাণ টাকা ও ডলার নিয়ে সায়মুম আত্মগোপনে রয়েছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মুম জানান, বাংলাদেশ বা বিদেশে আমার কোনো হোটেল নেই। আমি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ব্যবসা করি, তাই কোনো বেআইনি কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ১৬ বছর ধরে ব্যবসা করছি।

ফ্ল্যাট ও অফিসের বিষয়ে তিনি জানান, এসব ভবন সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও তার ছেলের। তার নামে থাকা বিএমডব্লিউ গাড়ির বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। বাবার সিমেন্টের দোকানের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি তার বাবার দোকান, তার বাবার ৭০ বছর বয়স। এ ছাড়া কোনো প্রসঙ্গ ছাড়াই তিনি বলেন, তার বাবা জামায়াতের সমর্থক। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সায়মুমের বাবা সৈয়দ নরুদ্দিন খুশি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জামায়াতের শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি ছিলেন। যদিও পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন বলে স্থানীয়রা জানান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী

আরেকটি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল কাল

বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থা আসবে না : ড. ইউনূস

ভারতীয় মিডিয়ার তথ্য বিভ্রান্তিকর-অতিরঞ্জিত : প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেক

দিল্লিতে অবৈধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ

ইটিভি-সিজেএফবি সংগীত-সাংবাদিকতা এবং চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান / সম্মাননা পাচ্ছেন বেবী নাজনীন, ফাহিম আহমেদ এবং জয়া আহসান 

রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ৯৭৯ মামলা 

সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ডিসি কর্তৃক গালাগালের প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজশাহী ওয়াসার পানির দাম কমাতে আলটিমেটাম

‘জনশক্তি’ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি : জাতীয় নাগরিক কমিটি

১০

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড আর নিরাপদ নয়’ : ইয়েমেন

১১

লন্ডনে বড় মেয়ের বাসায় রয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ

১২

দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে প্রাণ গেল বাবা-ছেলের

১৩

রাখাইনে সেনা সদর দপ্তর দখল আরাকান আর্মির

১৪

‘অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল’-এর আয়োজন করল ব্র্যাক ব্যাংক

১৫

গাজীপুরে ট্রাকচাপায় বাইকের দুই আরোহী নিহত

১৬

আমরা আল্লাহর ওপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারত : দুলু

১৭

কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের

১৮

সহসমন্বয়ক সাজিদুলকে জড়িয়ে কালবেলার নামে ভুয়া ফটোকার্ড

১৯

উপদেষ্টা হাসান আরিফের দাফন সোমবার

২০
X