বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ এএম
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিচারক বদলি-পদোন্নতিতে সক্রিয় পুরোনো সিন্ডিকেট

আওয়ামী লীগ আমলে সুবিধাভোগী
গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

অধস্তন আদালতে এখন প্রায় দুই হাজার একশ বিচারক কাজ করছেন। কর্মরত বিচারকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে বদলি ও পদোন্নতি। কাউকে পুরস্কার বা তিরস্কার করার মোক্ষম অস্ত্র বদলি। আওয়ামী শাসনামলে বিচারকদের বদলি নিয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। সরকারের অনুগত ও সুবিধাভোগী ছাড়া কাউকেই ঢাকার ভেতরে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই বদলি-পদোন্নতির নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে সুবিধাভোগী প্রায় দুই শতাধিক বিচারক এক যুগ ধরে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় পোস্টিং বাগিয়েছেন।

অন্যদিকে ঢাকার বাইরে যারা বছরের পর বছর কাটিয়েছেন, তাদের মেধা ও যোগ্যতা থাকলেও কখনই ঢাকার কোনো আদালতে পদায়ন করা হয়নি। এ ছাড়া বড় বড় জেলার দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, প্রেষণে গুরুত্বপূর্ণ পদে কে যাবেন—এই সবকিছুই ঠিক করা হতো এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। গত সরকারের আমলে সুবিধাভোগী বিচারকদের টিকিয়ে রাখতে এখনো কাজ করে যাচ্ছে ওই পুরোনো সিন্ডিকেট। ক্ষুব্ধ বিচারকরা দ্রুত এই সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বিচার বিভাগ পৃথককরণ রায়ের আলোকে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আলাদা সচিবালয় করার দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তৎকালীন ওয়ান ইলেভেনের সরকার বিচার বিভাগ পৃথক ঘোষণা করে। এর এক বছর পরই ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। ক্ষমতায় আসার পরই বিচারকদের বদলি-পদোন্নতি নিয়ন্ত্রণে আইন মন্ত্রণালয়ে গড়ে ওঠে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। শুরু হয় বিচারকদের মুখ দেখে খাদিম দেওয়ার। বিচারকদের সুখ-দুঃখ দেখার জন্য যে অ্যাসোসিয়েশন, তারও নিয়ন্ত্রক ছিল ওই সিন্ডিকেট। ফলে সাধারণ বিচারকদের পক্ষে কথা বলার মতো কেউ ছিল না। বিচারকদের এক প্রকার বোবার মতো কাজ করতে হয়েছে বলে দাবি সাবেক বিচারকদের।

ভুক্তভোগী বিচারকরা জানান, বিভিন্ন সময়ে এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিল সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সচিব প্রয়াত আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক দুলাল, সাবেক যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-১) বিকাশ কুমার সাহা, বর্তমান সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, সাবেক যুগ্ম সচিব (বাজেট) হুমায়ুন কবির, যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২) শেখ গোলাম মাহবুব প্রমুখ। এর বাইরেও বেশ কয়েকজন বিচারক বিচার বিভাগের এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাদের ইশারায় বিচারকদের বদলি-পদোন্নতি হয়েছে। অনুগত হয়ে কাজ না করলেই বিভাগীয় মামলা, বহিষ্কার ও স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। আবার এই সিন্ডিকেটের অনেকেই প্রেষণে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার জন্য নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক সিনিয়রকে ডিঙিয়ে এবং উচ্চ আদালতের রায়ের লঙ্ঘন করে আইন সচিব হন প্রয়াত দুলাল। ক্ষমতা হাতে পেয়ে দুলাল বিচার বিভাগের মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হন। তার অত্যাচারে অনেক সিনিয়র জেলা জজ নীরবে চোখের পানি ফেলেছেন।

এর পরও তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা সুবিধাভোগীদের অনেকেই প্রেষণে থাকতে থাকতে পদোন্নতির শর্ত হিসেবে বিচারিক কাজের অভিজ্ঞতার শর্তও পূরণ করতে পারতেন না। এ কারণে অতীতে নিজেদের স্বার্থ-এ আইন পাল্টানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। পদোন্নতির শর্ত শিথিল করা হয়েছে। আর শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে এসব ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনও তখন সায় দিয়েছেন। এখনো ঘুরেফিরে সেই সিন্ডিকেটের উত্তরসূরিদের হাতেই রয়েছে বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা।

জানা গেছে, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার মন্ত্রণালয়ের আলোচিত যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর আরেক যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২) শেখ গোলাম মাহবুবকে প্রথমে আইন কমিশনে প্রেষণে বদলি করেন। শেখ গোলাম মাহবুব সাবেক সরকারের বড় সুবিধাভোগীদের একজন হওয়ায় তার বদলি নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। সমালোচনার মুখে তাকে আইন কমিশন থেকেও বদলি করে কুষ্টিয়ার নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বদলি করা হয়েছে। আর মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) হিসেবে আনা হয়েছে মো. গোলাম রব্বানীকে। সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ গোলাম রব্বানীর নিয়োগ নিয়েও ক্ষুব্ধ অনেক বিচারক।

কারণ হিসেবে বিচারকরা বলছেন, বিচারক গোলাম রব্বানী আওয়ামী সরকারের একজন বড় সুবিধাভোগী। বিগত সরকারের রোষানলে পড়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশত্যাগের পর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল হয়। আর ওই রদবদলের সময় ২০১৭ সালে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার হিসেবে বিচারক গোলাম রব্বানীকে পদায়ন করা হয়। বিচারক গোলাম রব্বানী নিজেকে ‘শেখ কামালের বন্ধু’ হিসেবে পরিচয় দিতেন বলে বিচারকরা দাবি করেছেন।

তিনি ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে প্রেষণে কাজ করেছেন। এরই মধ্যে পদোন্নতি পেয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলও হন। রেজিস্ট্রার জেনারেল হিসেবে তার হাত হয়ে বিচার বিভাগের সব কর্মকর্তার পদোন্নতি-বদলির ফাইল যেত সুপ্রিম কোর্টের জিএ (জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কমিটির কাছে। তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে কাজ করেছেন।

সর্বশেষ গত ১ জুলাই তাকে চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি করা হয়। এর পেছনের কারণ হিসেবেও বিচারকরা বলছেন, দীর্ঘদিন প্রেষণে সুপ্রিম কোর্টে থাকায় তার বিচারিক কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না। এ কারণেই তাকে মূলত মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়। আবার ১ মাস ১৩ দিনের মাথায় তাকে প্রেষণে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) করা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরাই ঘুরেফিরে বিচার বিভাগের দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন। আইন সচিব গোলাম সারওয়ার এখনো বহাল তবিয়তে কাজ করছেন। তিনি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজন। জামিন ও রায়ে প্রভাব বিস্তারে বিচার বিভাগের যত তদবির করা হতো এই আইন সচিবের মাধ্যমে। এ ছাড়া নিয়োগ-পদোন্নতি, বদলির নিয়ন্ত্রণও করতেন তিনি। এখন তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই বিচার বিভাগের যত বিচারক বদলি হচ্ছে। আর এটা নিয়ে মাঠ পর্যায়ের বিচারকদের মধ্যে সমালোচনার তৈরি হচ্ছে।

জানা গেছে, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বদলির যতগুলো জিও (সরকারি আদেশ) জারি করা হয়েছে, তার মধ্যে বিতর্কিত সুবিধাভোগীরাও ফের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেছেন, ভালো পোস্টিং পেয়েছেন। বিচারকরা বলছেন, বিচারকদের সম্প্রতি বদলিগুলো হচ্ছে অনেকটা ‘ভালো চাউলের ভেতর খারাপ চাউল’ ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো। বিচারকদের অভিযোগের মুখে সম্প্রতি জারি করা প্রজ্ঞাপনগুলো বিশ্লেষণ করেও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রজ্ঞপনে দেখা গেছে, আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত বিচারক শেখ হুমায়ূন কবিরকে বদলি করে নরসিংদীর জেলা ও দায়রা জজ করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রভাবশালী যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম। তিনি আইজিআর (ভূমি নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তাকে বদলি করা হয়েছে ঢাকায় আইন কমিশনের সচিব হিসেবে। সুপ্রিম কোর্টের সাবেক ডেপুটি রেজিস্ট্রার নেত্রকোনার জেলা ও দায়রা জজ মো. শাহজাহান কবিরকে করা হয়েছে বগুড়ার জেলা ও দায়রা জজ। এভাবেই গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদেই আওয়ামী সরকারের আমলে সুবিধাভোগীদের বসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিচারকরা।

এ ব্যাপারে আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার কালবেলাকে বলেন, ‘যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো সঠিক না। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া বিচার বিভাগের কারও বদলির সুযোগ নেই। সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে।’

তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল সোমবার নানাভাবে চেষ্টা করা হলেও যুগ্ম সচিব মো. গোলাম রব্বানীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘুরেফিরে ঢাকায় থাকেন সুবিধাভোগীরা

সাধারণত একই কর্মস্থলে তিন বছর থাকার পর বদলির বিধান প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু গত ১০ থেকে ১৫ বছর যাবত একটানা ঢাকাতেই থেকেছেন এমন সুবিধাভোগী বিচারকের সংখ্যা অনেক। এরা সরকারের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ঢাকাতেই স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। এখনো তাদের বেশিরভাগই বহাল তবিয়তে আছেন। এই তালিকায় প্রথমেই নাম আসে বর্তমান আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের নাম। তিনি ২০১৫ সালে আইন মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব হন। পরে বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া হওয়ায় এবং সাবেক আইনমন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় তিনি হয়ে যান আইন সচিব। এর আগে ২০১৩ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্ব পালন করেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে।

এরপর যার নাম আসে, তিনি হলেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মজিবর রহমান। তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঘুরেফিরে ঢাকাতেই আছেন। ঢাকার বিশেষ জজ মো. ইকবাল হোসেন, বিশেষ জজ মো. বদরুল আলম ভুঁঞা ও বিশেষ জজ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অন্তত ১৫ বছর ধরে আছেন ঢাকাতেই। ঢাকা ও এর আশপাশে ১৫ বছর কাটিয়েছেন বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সাল আতিক বিন কাদের।

এ ছাড়া সাবেক যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম ২০১৫ সাল থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। এখন তাকে বদলি করা হয়েছে আইন কমিশনে। এর আগেও তিনি বেশ কিছুদিন ঢাকাতেই ছিলেন। আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর রুনা নাহিদ আখতার ১০ বছর ধরে ঢাকাতেই আছেন। এ ছাড়াও যারা অন্তত ১০ বছর করে ঘুরেফিরে ঢাকায় আছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন—তথ্য মন্ত্রণালয়ের আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুর রহমান গাজী, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-২-এর সদস্য ফাতিমা ইমরোজ ক্ষণিকা, উপসচিব এস মোহাম্মদ আলী, উপসচিব একেএম এমদাদুল হক, উপসলিসিটর মোহা. রকিবুল ইসলাম, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের উপসচিব এজিএম আল মাসুদ ও কমিশনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শরীফ এ এম রেজা জাকের, আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোরশেদ ইমতিয়াজ ও খাদিজা নাসরিন, লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান আবেদা সুলতানা, আইন কমিশনের অনুবাদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন চৌধুরী, লিগ্যাল এইডের উপপরিচালক মাসুদা ইয়াসমিন, ১ম কোর্ট অব সেটেলমেন্টের সদস্য আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান, পিএসসির আইন উপদেষ্টা মো. খাদেম উল কায়েস, ঢাকার অতিরিক্ত জেলা জজ জিনাত সুলতানা ও সৈয়দা মিনহাজ উম মুনীরা, জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের বিচারক উৎপল চৌধুরী, ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ মেহের নিগার সূচনা, মেরিন আদালতের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম খালেদা ইয়াসমিন, ঢাকার স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ওয়াসিম শেখ, ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক রোকসানা বেগম হ্যাপী, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা জজ মো. আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া ঘুরেফিরে ঢাকা ও এর আশপাশে আছেন অন্তত ১০ বছর ধরে। ঢাকার বিভিন্ন কর্মস্থলে দীর্ঘদিন থাকা এমন বিচারকের তালিকা অনেক লম্বা।

‘কী বলছেন সাবেক ও বর্তমান বিচারকরা’

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত ১৪ আগস্ট ‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফোরাম’ এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আওয়ামী সরকারের সময়ে জুডিশিয়ারিতে অনেককে বোবার মতো কাজ করতে হয়েছে। তারা সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম, সাবেক সচিব ও বর্তমান সচিবসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন গঠন করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। তারা বলেন, নিম্ন আদালতের দুইশ বিচারককে ডিঙিয়ে সাবেক সচিব দুলালকে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের তদবির না থাকলে অকারণে বদলি করা হতো। অনেককে করা হতো বহিষ্কার, কাউকে স্বেচ্ছায় অবসরে চলে যেতে হতো। তারা যেসব বিচারক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য প্রকাশ্যে সরকারকে সমর্থন করে ন্যায়বিচারের পরিপন্থি কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিচারিক আদালতের সব স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ন্যায়বিচার পরিপন্থি স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষে কাজ করা বিচারকদের বদলি করে সৎ ও নিরপেক্ষ বিচারকদের পদায়ন করাসহ ১২ দফা দাবি জানান।

এ বিষয়ে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) এবং অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনের যে হাওয়া লাগার কথা বিচার বিভাগে তা দেখা যাচ্ছে না। পূর্বে যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, তাদের বেশিরভাগই এখনো বহাল রয়েছেন। উচ্চ আদালত আইন মন্ত্রণালয় সবখানেই একই অবস্থা। ফলে পূর্বে যেভাবে বদলি হতো, এখনো সেভাবেই হচ্ছে। সুযোগসন্ধানীরা ঘুরেফিরেই তাদের ভালো ভালো পোস্টিং বাগিয়ে নিচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার বিচার বিভাগকে হাতের মুঠোয় রাখার জন্য বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির নিয়ন্ত্রণ করত। তারা সুপ্রিম কোর্টকেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেন। যার কারণে অধস্তন আদালত নিয়ন্ত্রণ সহজ ছিল। এখনো স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাভোগীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছেন। ফলে তাদের ইচ্ছামতোই বদলি হচ্ছে। আশা করি, সরকার জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাভোগীদের দ্রুত বদলি করে বিচার বিভাগের আমূল সংস্কার করবেন। একই সঙ্গে এই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা।’

জানতে চাওয়া হলে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জেলা জজ মো. ‘জাকির হোসেন গালিব কালবেলাকে বলেন, বদলি-পদোন্নতির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ রয়েছে। উপদেষ্টা আছেন। তারা এগুলো করছেন। বদলি-পদোন্নতির ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যোগদান করলেন বাকৃবির নবনিযুক্ত উপাচার্য

ডর্‌পের কর্মশালায় ‘স্মোকিং জোন’ বিলুপ্তির প্রস্তাব

হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহ আলী গ্রেপ্তার

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইবিতে মিছিল

সিলেটে পাথরবোঝাই ট্রলিচাপায় কিশোর নিহত

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ববিতে বিক্ষোভ

ব্রাহ্মণপাড়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ

হাতিয়া উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদককে শোকজ

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে চবিতে মশাল মিছিল

শহীদদের স্মরণে ববিতে দ্রোহের গান ও আজাদী সন্ধ্যা

১০

খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত

১১

দেশকে নতুন করে সাজাতে হবে : ডিআইজি মঞ্জুর মোরশেদ

১২

বনানীতে বিপুল পরিমাণ মদ জব্দ

১৩

দিনমজুরকে গলা কেটে হত্যা, ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

১৪

জাবিতে কোনো কমিটিই নেই, হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে : ছাত্রদল

১৫

মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল গৃহবধূর

১৬

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গ্রেপ্তার

১৭

দেশের ৩ অঞ্চলে হিট ওয়েভের শঙ্কা

১৮

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ

১৯

চট্টগ্রামে হাতকড়া পরে ফিরল সাবেক এমপি ফজলে করিম

২০
X