জাফর ইকবাল
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪১ এএম
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০৮:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আ.লীগপন্থি শীর্ষ আমলারা এবার দুদকের নজরে

তালিকায় ডজনের বেশি সাবেক আমলা
আ.লীগপন্থি শীর্ষ আমলারা এবার দুদকের নজরে

আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসনের শীর্ষ পদে থাকা কর্মকর্তাদের সম্পদের খোঁজে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৫ বছরে যেসব আমলা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন শিগগিরই তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবদের সম্পদের তথ্য তলবের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই প্রক্রিয়া। এরপর তদন্তের আওতায় আসবেন সাবেক জনপ্রশাসন সচিব ও জ্বালানি সচিবরা। এর বাইরে আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন আমলার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বিগত ১৫ বছরে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন আমলারা। বিভিন্ন সময়ে অনেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তবে বিভিন্ন মহলের চাপের কারণে এতদিন সেসব অভিযোগ নিয়ে কাজ করতে পারেনি সংস্থাটি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন সেসব অভিযোগ অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দীর্ঘদিন লাল ফিতায় বন্দি থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।

সূত্র জানায়, গত সরকারের কয়েক ডজন প্রভাবশালী আমলার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। এর মধ্যে কয়েকজনের অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে। চাকরি জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে মালিক হয়েছেন শত শত কোটি টাকার। এসব অবৈধ অর্থে তারা দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। কারও কারও রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির বিপুল পরিমাণ শেয়ার। দেশের বিভিন্ন জায়গায় জমি আছে অনেকের। এসব সম্পদের বেশিরভাগই স্ত্রী, সন্তান কিংবা আত্মীয়স্বজনদের নামে। অনেকেই চাকরি শেষে নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতে। কেউ কেউ গড়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কয়েকজন আবার দেশ ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। কারও কারও বিরুদ্ধে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে।

দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে দুদকে ফাইলবন্দি ছিল। সরকারে ওপর মহলের চাপে তাদের বিষয়ে কোনো কাজ করা যায়নি। ক্ষমতার পালাবদলে সেসব ফাইল নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে দুদক। এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব অভিযোগ নিয়ে কাজ করা হবে।

দুদকের একজন উপপরিচালক কালবেলাকে বলেন, ‘অনুসন্ধান তালিকায় প্রথমদিকে রয়েছেন বিগত সরকারের আমলের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবরা। এসব শীর্ষ আমলা বিগত সরকারের আমলে অনেক প্রভাবশালী ছিল। তারা তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি খাটিয়ে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগিরই সাবেক এই আমলাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হবে।’

জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানের তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, মোহাম্মদ শফিউল আলম, মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া এবং এম আবদুল আজিজ। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবদের মধ্যে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ড. আহমদ কায়কাউস, মো. নজিবুর রহমান, ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মো. আবুল কালাম আজাদ, আবদুস সোবাহান সিকদার, শেখ মো. ওয়াহিদ উজ্জামান এবং এম আব্দুল আজিজের সম্পদের খোঁজে নামবে দুদক।

তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। দুদক বলছে, সাবেক এই আমলার ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ ও পরিবারের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিকবার অভিযোগ জমা পড়েছে। এর কয়েকটি অভিযোগের কপি এসেছে কালবেলার হাতে। এসব অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মহাপরিচালক (প্রশাসন) পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি কমিশন নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে সুপারিশ করতেন। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে তিনি ১০ শতাংশ হারে কমিশন নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতেন। নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরি করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, তীর সংরক্ষণ, ভূমি পুনরুদ্ধার, নদী ড্রেজিং, পুনর্বাসন, যন্ত্রপাতি ক্রয়, ছোট নদী, খাল, জলাশয় পুনর্খনন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরে বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম করে বিপুল পরিমাণে অর্থ হাতিয়েছেন। সাধারণ প্রকল্পকে বিশেষ জরুরি আখ্যা দিয়ে টেন্ডার না করেই মৌখিকভাবে কাজ বণ্টন করেছেন। আবার দফায় দফায় সেসব কাজের বরাদ্দ এবং সময় বৃদ্ধি করেছেন। এভাবে অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে কবির বিন আনোয়ারের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

দুদকে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রচণ্ড প্রভাবশালী এই আমলার ভয়ে তটস্থ থাকতেন অধীনরা। প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, সেন্টমার্টিনের সোনাদিয়া, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে দেশের বাইরে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। কানাডার বেগমপাড়ায় তিনটি বাড়িসহ বিপুল পরিমাণে অর্থ রয়েছে। কবির বিন আনোয়ার তার ৫ বোন ও বোনের স্বামীদের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের বিরুদ্ধেও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে। তার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নজিরবিহীন দুর্নীতি আর অনিয়মে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যুতের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে শত শত কোটি টাকা হাতান তিনি। এ ছাড়া মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বদলি-পদায়ন ও পছন্দের ঠিকাদারদের বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দিতে তদবির বাণিজ্য করেন।

এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এই সচিবের সময়ে পদ্মা সেতুসহ দেশে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এসব প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক না কেন—যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের তপশিলভুক্ত অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণিত হলে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে, কোর্টে মামলা দাখিল করা হচ্ছে। দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, কাউকেই ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যোগদান করলেন বাকৃবির নবনিযুক্ত উপাচার্য

ডর্‌পের কর্মশালায় ‘স্মোকিং জোন’ বিলুপ্তির প্রস্তাব

হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহ আলী গ্রেপ্তার

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইবিতে মিছিল

সিলেটে পাথরবোঝাই ট্রলিচাপায় কিশোর নিহত

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ববিতে বিক্ষোভ

ব্রাহ্মণপাড়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ

হাতিয়া উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদককে শোকজ

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে চবিতে মশাল মিছিল

শহীদদের স্মরণে ববিতে দ্রোহের গান ও আজাদী সন্ধ্যা

১০

খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত

১১

দেশকে নতুন করে সাজাতে হবে : ডিআইজি মঞ্জুর মোরশেদ

১২

বনানীতে বিপুল পরিমাণ মদ জব্দ

১৩

দিনমজুরকে গলা কেটে হত্যা, ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

১৪

জাবিতে কোনো কমিটিই নেই, হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে : ছাত্রদল

১৫

মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল গৃহবধূর

১৬

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গ্রেপ্তার

১৭

দেশের ৩ অঞ্চলে হিট ওয়েভের শঙ্কা

১৮

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ

১৯

চট্টগ্রামে হাতকড়া পরে ফিরল সাবেক এমপি ফজলে করিম

২০
X