শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সতর্ক পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী আত্মগোপনে থেকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা মনে করছেন, পরিস্থিতি অনুকূলে এলে তারা রাজনীতিতে সক্রিয় হবার সুযোগ খুঁজবেন। আওয়ামী লীগের বিষয়ে বর্তমান সরকারের মনোভাব বুঝতেও চেষ্টা করছে দলটির নীতিনির্ধারকরা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন। এরপর থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। সরকারের মন্ত্রী, এমপি, দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতা এমনকি তৃণমূলের নেতারা পর্যন্ত আত্মগোপনে চলে যান। ফোন নম্বর বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ নেতাকর্মীর। কেউ কেউ নম্বর পরিবর্তন করেছেন। কেউ কেউ বিদেশে চলে যান।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল থাকতে পারে; কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন অপমানিত করছে? যে দেশি-বিদেশি চক্রটি বঙ্গবন্ধুকে সহ্য করতে পারেনি, তারাই এখন এই হীন চক্রান্তে মেতে উঠেছে। যুগে যুগে বিভিন্ন দেশেই এসব অপচেষ্টা হয়েছে। এই অবস্থায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আওয়ামী লীগ হেরে যাওয়ার দল নয়, শিগগির ঘুরে দাঁড়াবে ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষে দলের নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাসভবন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আহ্বান করা হয়। আগের দিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক কর্মীরা মোমবাতি প্রজ্বালন শেষ করার পর তাদের ওপর চড়াও হয় একটি গোষ্ঠী। এরপর দিন ৩২ নম্বরের আশপাশে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। রাজধানীতে না পারলেও সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে শোক দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়। এরপর থেকে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয় হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিতে বরং আপাতত পরস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে।
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক কালবেলাকে বলেন, আপাতত নিরাপদে থেকে দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দলের নির্দেশনা রয়েছে। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের মনোভাব বুঝে দলীয় কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার যদি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়, তবেই রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগের ফোন বন্ধ, সরাসরি সাক্ষাৎ করা দুরূহ হয়ে পড়ায় দলের স্পষ্ট বার্তা পাচ্ছে না তৃণমূলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এই মুহূর্তে দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী আত্মগোপনে আছেন, গ্রেপ্তার, হামলা-মামলার আতঙ্কে আছেন। দলের সভাপতি ভারতে অবস্থান করছেন, সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সতর্ক অবস্থানে থাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।