বিলুপ্তির ২৫ দিনের মাথায় আব্দুল মোনায়েম মুন্নাকে সভাপতি এবং নুরুল ইসলাম নয়নকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী যুবদলের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
নতুন কমিটিতে জায়গা পাওয়া সব নেতাই সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও ‘ক্লিন ইমেজের’ অধিকারী জানিয়ে যুবদলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী বলছেন, আন্দোলনে সাফল্য পেতে বিএনপির হাইকমান্ড তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। নতুন কমিটি সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে তারা মনে করেন।
যুবদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সালাউদ্দিন টুকু সংগঠনের মুন্না-নয়ন নেতৃত্বাধীন নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে গতকাল বলেন, ‘আশা করি এই কমিটি খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
যদিও পদবঞ্চিত কারও কারও দাবি, কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করিম পল, ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল ও দপ্তর সম্পাদক নূরুল ইসলাম সোহেলকে অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। তার পরও এ কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন বঞ্চিতরা।
ছয় সদস্যের নতুন কমিটি
যুবদলের নতুন কমিটির সভাপতি মুন্না এর আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আর নতুন সাধারণ সম্পাদক নয়ন ছিলেন ওই কমিটির সহসভাপতি। আগের কমিটি বিলুপ্ত করার পর থেকেই এই দুজন মূল নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে আলোচনা চলছিল।
নতুন কমিটির সভাপতি মোনায়েম মুন্না ১৯৮৫ সালে আবুজর গিফারী কলেজ ছাত্রদলের সেক্রেটারি এবং মতিঝিল থানার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে মতিঝিল থানা ছাত্রদলের সেক্রেটারি, ১৯৮৮ সালে মতিঝিল থানার সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের আহ্বায়ক, ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক (১৯৯০), আবুজর গিফারী কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস এবং মতিঝিল থানা ছাত্রদলের সভাপতি (১৯৯১), ২০০৩ সালে যুবদলের বুলু-আলাল কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২০১০ সালে বন ও পরিবেশবিষয়ক সহ-সম্পাদক, ২০১১ সালে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ২০২০ সালে যুবদলের নীরব-টুকু কমিটির সহসভাপতি এবং গত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
শীর্ষ পদ পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মোনায়েম মুন্না কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে লক্ষ্যে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তার যথাযথ প্রতিদান দিতে সচেষ্ট থাকব। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার আদায়ে বিএনপির যে কোনো কর্মসূচিতে যুবদল সম্মুখ সারিতে থাকবে।’
নতুন সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সোহেল-পিন্টু কমিটির সদস্য হিসেবে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। এরপর তিনি পর্যায়ক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের মুনির-মামুন নেতৃত্বাধীন কমিটির সহসভাপতি এবং পরপর তিনবার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়।
নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া অন্য নেতাদের মধ্যে রেজাউল করিম পল যুবদলের গত কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহসভাপতি এবং ছাত্রদলের টুকু-আলিম কমিটির সহসভাপতি ও ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। কামরুজ্জামান জুয়েল ছিলেন যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, বিল্লাল হোসেন তারেক ছিলেন যুবদলের গত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এবং নূরুল ইসলাম সোহেল ছিলেন যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক।
১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বিল্লাল হোসেন তারেক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কালবেলাকে বলেন, ‘দলের লক্ষ্য অর্জনে সর্বোচ্চটা দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করব।’
আলোচিত অনেকেই জায়গা পাননি
যুবদলের হেভিওয়েট নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ২ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মওলা শাহিন, সহসভাপতি রুহুল আমিন আকিল, জাকির হোসেন সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহমেদ, সাঈদ ইকবাল টিটু, আসাদুজ্জামান পলাশসহ কয়েকজন শীর্ষ ছয় পদে জায়গা পাননি। তাদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। এমনকি কয়েকজনের সাজাও হয়েছে। অবশ্য যুবদলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলছেন, পদবঞ্চিত কেউ থাকবেন না। যারা যোগ্য, ত্যাগী এবং রাজপথে সক্রিয় ছিলেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিএনপির হাইকমান্ড তাদের সবাইকে যথাযথ মূল্যায়ন করবেন।
অনেক সিনিয়রের রাজনীতি ‘ঝুঁকিতে’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবদলের ছয় সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটিতে কাউকে কাউকে অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গত কমিটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেন, যারা একসময় রাজনীতিতে ‘নিষ্ক্রিয়’ এবং পেছনের দিকে ছিলেন, তাদের হঠাৎ করেই শীর্ষ পদ দেওয়া হয়েছে। ফলে যারা দীর্ঘদিন ধরে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত, তারা রাজনৈতিকভাবে কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবেন। তাদের অনুসারীদের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। অনেকের রাজনীতি ঝুঁকিতে পড়বে।
নয়াপল্টনে স্বাগত মিছিল
যুবদলের নতুন নেতারা গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেলে যুবদল ও অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, গবেষণা সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, উত্তর বিএনপির সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, যুবদলের নতুন সভাপতি আবদুল মোলায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করিম পল, ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, যুবদলের সাবেক নেতা গিয়াস উদ্দিন মামুন, মেহেবুব মাসুম শান্ত, ওমর ফারুক কাওসারসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
পরে যুবদলের কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এ সময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে রাজকোষ খালি করে দিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। তাই দেশের জনগণ তাকিয়ে আছে তরুণদের দিকে। শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে আনন্দ করবে যুবদল।’