দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুনভাবে শুরু হওয়া কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বিএনপি। ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনকে নতুন রূপ দিতে চান দলটির নীতিনির্ধারকরা। প্রথম ধাপে ঘোষিত তিন দিনের কর্মসূচি গত বুধবার শেষ হয়েছে। কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ও কৌতূহল ছিল লক্ষণীয়। এটাকে সামনে টেনে নিতে চান নেতারা। পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হতে পারে। সেইসঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতাও জোরদার করতে চাইছে বিএনপির হাইকমান্ড। এর আগেও এ ধরনের অনেক কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। আগামী সোমবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার কালবেলাকে বলেন, গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে যে কর্মসূচি শুরু হয়েছে, তা চলবে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় দলের স্থায়ী কমিটির আগামী মিটিংয়ে নতুন কর্মসূচি ঠিক করা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ। সর্বশেষ ১০ দিন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে তিনি বাসায় ফেরেন। এ দফায় খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। এ অবস্থায় তার মুক্তির দাবিতে বিএনপি নতুন কর্মসূচি দেয়। গত ২৯ জুন রাজধানী ঢাকায়, ১ জুলাই মহানগর এবং গত বুধবার জেলা পর্যায়ে পৃথকভাবে সমাবেশ করে দলটি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত সরকার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে বিদেশে পাঠিয়েছিল। খালেদা জিয়াকেও দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেদিন খালেদা জিয়া দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ আমার সন্তান। আমি এই মাটি ছেড়ে কোথাও যাব না। এমনকি সেসময় শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। অথচ খালেদা জিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ তো দূরের কথা, শেখ হাসিনা তাকে জেলে রেখেছেন। আসলে নির্মম, নিষ্ঠুর ও রসিকতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল পুঁজি।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি কূটনৈতিক এবং আইনি লড়াইকেও গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। এক্ষেত্রে তারা সম্প্রতি উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়টিও বিবেচনায় নিচ্ছেন। নেতারা মনে করেন, অ্যাসাঞ্জকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থোনি আলবানিজ। অস্ট্রেলিয়ার আইনপ্রণেতাদের একটি দল গত সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটন সফরে যায়। পরের মাসেই রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যান আলবানিজ। তিনি হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বাইডেনের কাছে অ্যাসাঞ্জের মুক্তির প্রসঙ্গ তোলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির সাবেক সহআন্তর্জাতিক সম্পাদক বর্তমানে ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ কালবেলাকে বলেন, খালেদা জিয়া মানেই বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র। তাকে ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনা করা কঠিন। খালেদা জিয়া কোনো অপরাধী নন। একজন বয়স্ক নেত্রীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জোরালোভাবে তাকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন বলেন, খালেদা জিয়া আমাদের আবেগের জায়গা। সরকার এ পর্যন্ত তাকে নিয়ে যা করেছে, তা মাত্রারিক্ত। বিএনপি নেতাকর্মীরা যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। তার মুক্তির জন্য ধারাবাহিক কর্মসূচির বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া কারাবন্দি হন। করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদন এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এরপর থেকে তার পরিবারের আবেদনে দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।