ঝিনাইগাতীর পাহাড়ি এলাকায় পানি সংকট

পাহাড়ি ঝিরির তীরে গর্ত করে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের চেষ্টায় দুই নারী। ছবিটি সম্প্রতি তোলা।
পাহাড়ি ঝিরির তীরে গর্ত করে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের চেষ্টায় দুই নারী। ছবিটি সম্প্রতি তোলা।ছবি : কালবেলা

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে। এতে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী কয়েক হাজার মানুষকে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, ঝরনাসহ জলাশয়ের পানি পান করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পাহাড়ি জনপদের লোকজন। গারো পাহাড়ে বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করার কোনো উৎস নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া, সেচ কাজে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে অতিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, নদনদীর নাব্য হারানো, পাহাড়ি ঝরনা ও ঝিরির ক্ষীণধারা এবং প্রাকৃতিক জলাশয় ক্রমেই ভরাট হওয়ার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এমনভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে বলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রামগুলোতে প্রতিবছরই বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। গত বছরের মতো এ বছরও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে নেমে গেছে। এতে উপজেলার সীমান্তবর্তী তাওয়াকুচা, পানবর, বাকাকুড়া, গুরুচরণ দুধনই, ছোট গজনী, বড় গজনী, গান্ধিগাঁও, হালচাটি, সন্ধ্যাকুড়া, হলদীগ্রাম, নওকুচি, নকশীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রায় ১৩০-১৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে ওইসব এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রাধা বল্লভ বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে এ উপজেলার দুটি ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। ফলে পানির জন্য প্রতিবছরই কষ্ট করে জনসাধারণ। তবে রিংওয়েল টিউবওয়েল বসানো হলে পানির সংকট কমে যাবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিশুদ্ধ খাবার পানি না পেয়ে মানুষ মাটির কূপ, পাহাড়ি ঝরনাসহ বিভিন্ন জলাশয় থেকে পানি সংগ্রহ করছে। আবার অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করে গৃহস্থালির কাজ ও খাবার পানির ব্যবস্থা করছে। নানা রোগজীবাণুযুক্ত পানি ব্যবহারের ফলে লোকজন ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন পানিবাহিত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি. নবেশ খকসী বলেন, মূলত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর লোকজনকে বছরের ছয় মাস দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। কারণ জানুয়ারি থেকে মে-জুন পর্যন্ত পানির স্তর গভীরে চলে যায়। যার দরুণ পুরো ছয় মাস তাদের পানির তীব্র সংকটে ভুগতে হয়। তিনি এসব পানি সংকট এলাকায় পানির নতুন উৎস উদ্ভাবন করে বিশুদ্ধ পানির সংকট দূরীকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com