মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদী পাড়ের বাসিন্দারা বন্যার পানি নামার পর নতুন দুর্যোগের মুখে পড়েছেন। শুরু হয়েছে নদীভাঙন। পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু পানি কমলেও বাড়ছে ভাঙনের তীব্রতা। এরই মধ্যে অনেকের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা আসতে না আসতেই প্রতিরক্ষা বাঁধে ধস শুরু হওয়ায় অনেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর ৫৭ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধের এখন নাজুক অবস্থা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ধলাই নদীর বাঁধ পুরোনো হওয়ায় ঝুঁকি বেশি। অনেক স্থানে বাঁধের অর্ধেক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা কমলগঞ্জের ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ধলাই নদীর দুই পাশের বাঁধ ঢল ও বন্যায় অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ভেঙে গেছে। আবার বাঁধের অনেক জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৯৬ সালের পর আর কোনো বড় প্রকল্প গ্রহণ না করায় বাঁধ এখন হুমকির মুখে রয়েছে। প্রায় ২০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামলেই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গত বুধবার নদীর বড়চেক ও চৈতন্যগঞ্জ এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কমলগঞ্জ পৌরসভা অংশের চারটি স্থান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানগুলো হলো রামপাশা, কুমড়াকাপন, আলেপুর ও নরেন্দ্রপুর। রামপাশায় বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা ধসে পড়েছে। অন্যদিকে ইসলামপুর ইউনিয়নের মোকাবিল, গোলের হাওর, শ্রীপুর, আদমপুর ইউনিয়নের হকতিয়ারখোলা, তিলকপুর, ঘোড়ামারা, রানীরবাজার, বনগাঁও, কেয়ালীঘাট, মাধবপুর ইউনিয়নের হিরামতি, মাধবপুর বাজার, পাত্রখোলা, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ, নারায়ণপুর, রামপুর, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর, বাদে করিমপুর, খুশালপুর, লক্ষ্মীপুর, রহিমপুর ইউনিয়নের বড়চেক, ছয়কুট, শ্যামেরকোনা, চৈত্রঘাট, কালেঙ্গাসহ প্রায় ২০টি স্থানে নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদী পাড়ের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ফের ভারি বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢলে বাঁধ বিলীন হয়ে যাবে। কমলগঞ্জ পৌর এলাকার রামপাশা গ্রামের রফিক বখসের বাড়ির পাশেই ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ৩০০ ফুট অংশ ভেঙে পড়েছে। সেখানে এক ফুট পরিমাণ বাঁধ টিকে আছে। কুমরাকাপন এলাকায়ও মাটি ধসে পড়েছে। এতে গ্রামবাসী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, কয়েকদিন হলো বন্যা গেল। এখন আবার আতঙ্ক হয়েছে ভাঙন। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। নদীভাঙন ঠেকাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
কমলগঞ্জে দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রাসেল মিয়া বলেন, ‘ধলাই নদীর উভয় পাশে প্রতিরক্ষা বাঁধ পুরোনো। নতুন প্রকল্প গ্রহণ ছাড়া বাঁধ টিকানো সম্ভব নয়।’