সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী সেই একই চক্র হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আবারও পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলন করছে। গত অক্টোবরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার পর থেকে চার মাস বন্ধ ছিল অবৈধ বালু উত্তোলন। অপরিকল্পিত এ বালু উত্তোলনে বদলে যাচ্ছে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি। ভেঙে যাচ্ছে ফসলি জমি, বসতবাড়ি। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলা প্রশাসন বালু তোলা অবৈধ বললেও উত্তোলনকারীদের পক্ষ নিচ্ছে নৌ-পুলিশ।
২০২৩ সালের ২৯ মার্চ বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চের আদেশ অনুযায়ী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে পাবনার পাকশী পর্যন্ত পদ্মায় বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রভাবশালীরা সেই নির্দেশনা অমান্য করে প্রথম থেকেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। গত বছরের ২০ অক্টোবর অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন ছয় সাংবাদিক। হামলার ঘটনায় সাংবাদিকদের করা ওই মামলা এখনো চলমান। এরপর চার মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যায় বালু উত্তোলন। বিরতি দিয়ে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে আবারও বালু উত্তোলন শুরু করেছে ওই প্রভাবশালী চক্র। এবারও বালু তোলা হচ্ছে কুষ্টিয়ার হাটশ হরিপুরসংলগ্ন পদ্মা নদী থেকে। পদ্মার এই পয়েন্টে প্রতিদিন অসংখ্য নৌকায় বসানো ড্রেজারে করে বালু উত্তোলন চলছে। এই বালু বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে শতাধিক বড় বড় নৌকায় করে। এই পয়েন্টে একপাশে কুষ্টিয়া জেলার সীমানা, অন্যপ্রান্তে পাবনা। পাবনা প্রান্তে নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে শত শত বিঘা কৃষিজমি।
স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, এবার বালু তোলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাংবাদিকদের করা মামলার আসামি কুষ্টিয়ার মিরপুরের তালবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান, পাবনার দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হাসান, কুষ্টিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়াছির আরাফাত তুষার ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌ-পুলিশের ওসি এমদাদ হোসেন বলেন, শুনেছি তারা বালু তোলার বৈধ কাগজপত্র করেছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।
পাবনা নৌ-পুলিশ সুপার রুহুল কবির বলেন, একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বাস ট্রেডার্স, টনি, খান এন্টারপ্রাইজসহ পাঁচটি কোম্পানিকে ১২টি পয়েন্টে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে সেই রিটের তথ্য, এমনকি রিট নম্বরও দিতে পারেননি তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে দুই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ও আলী হাসানকে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে দেওয়া মোবাইল নম্বরে বারবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
আরেকজন সোহেল রানা পবন বলেন, আমি হাটশ হরিপুর অঞ্চলে পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলন করি না। ওখানে বালু উত্তোলন করেন হান্নান মণ্ডলরা।
এদিকে বালু উত্তোলন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন উপজেলাভিত্তিক মনিটরিং টিম গঠন করে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী, সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ওসি ও নৌ-পুলিশের পরিদর্শককে সদস্য করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। একটি মনিটরিং টিমের আহ্বায়ক ভেড়ামারার ইউএনও আকাশ কুমার কুণ্ডু বলেন, গত কয়েকদিনে আমরা দুজনকে কারাদণ্ড দিয়েছি। অভিযান চলবে। বালু তুললেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, নদীটি দুই জেলার সীমানার মাঝামাঝি হওয়ায় কুষ্টিয়া থেকে অভিযান চালালে উত্তোলনকারীরা নৌকা রেখে পাবনার দিকে পালিয়ে যায়। দুই জেলা মিলে যৌথ অভিযানের কথা ভাবছি।