হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মৌলিক অধিকার বঞ্চিত চা শ্রমিকদের সন্তানরা

মৌলিক অধিকার বঞ্চিত চা শ্রমিকদের সন্তানরা

চা শিল্পে জড়িত জনগোষ্ঠী অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আধুনিকতা ও তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এ যুগে চা শিল্পে জড়িত জনগোষ্ঠীর বাগানের বাইরের পৃথিবীটা অনেকটাই অজানা-অচেনা। চা শ্রমিক ও তাদের সন্তানরা এখনো মৌলিক ও মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, করে যাচ্ছে।

চা শ্রমিকদের কর্মস্থলে অর্থাৎ চা বাগান এলাকায় বাস করা বাধ্যতামূলক। তাই মালিকপক্ষ বা কোম্পানির বরাদ্দ করা ১০-১২ ফুটের ঘরে তিন পুরুষ ধরে বাস করে আসছেন তারা। শুধু তাই নয়, তাদের নিজস্ব কোনো আবাদি জমিও নেই। নগণ্য আয়ের কারণে (দিনে ১২০ টাকা) একজনের মজুরি দিয়ে সংসার চলে না, তাই পরিবারের প্রায় সবাই কাজ করে থাকেন।

গোবিন্দ শ্রী গোবিন্দপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র বিশিষ্ট শিল্পপতি মহসিন মিয়া মধু বলেন, আমরা যারা চা বাগান মালিকরা ব্যাবসায়ী, আমরা বিনিয়োগ করি কিছু লাভের আশায়। বাগান মালিক হিসেবে চা শ্রমিকদের যে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি, তা কি যথেষ্ট নয়? তিনি বলেন, রেশন সুবিধা, বাড়ি, সন্তানদের প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। তবে এখন তাদের জীবনমান আরও উন্নয়ন করতে হলে সরকারকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা সরকারের শতভাগ ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করছি।

এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বর্তমানে চা শ্রমিকদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। এ ছাড়া বেকার ও ছাঁটাই শ্রমিকদের অবস্থা আরও কষ্টকর। কাজের সুযোগ না থাকা, লেখাপড়া না জানা, গৃহহীনতা, সঞ্চয় করতে না পারা, পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে না পারা, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব—এ রকম পরিবার থেকে শিশুরা লেখাপড়া করবে কীভাবে, তা ভাবনার বিষয়। তাই স্বাধীনতার ৫১ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে হাতেগোনা দু-একজন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।

চা শ্রমিকদের অধিকাংশ নিরক্ষর বলে সন্তানদের লেখাপড়ার বিষয়ে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না। এ ছাড়া সন্তানদের শিক্ষার ব্যয় বহনের ক্ষমতা ও সামর্থ্যও নেই তাদের। এতে অনেকে ঝরে পড়ে। ফলে চা শিল্পে জড়িত জনগোষ্ঠীর শিশুরা শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়। চা শ্রমিক বসতিপূর্ণ এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।

দেশের মোট চারটি ইউনিয়নে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এর মধ্যে একটি রাজশাহী জেলার একটি ইউনিয়ন, যেখানে ভিন্ন ভাষাভাষীর আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাস করে এবং বাকি তিনটি ইউনিয়নই মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। প্রথম শ্রেণির বাগানগুলোতে শ্রমিকের শিশুদের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এ ছাড়া ১৬০টি চা বাগানে মালিকপক্ষের ৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চারটি উচ্চ বিদ্যালয় আছে। কিন্তু চা বাগান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা গ্রহণের কোনো সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ নেই। শিক্ষকের অভাব ও শিক্ষা কারিকুলাম সঠিকভাবে মেনে চলা হয় না। অনেক সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা চা জনগোষ্ঠীর শিশুদের সহজভাবে নিতে পারে না, ওদের অমর্যাদার চোখে দেখে। এসব স্কুলের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কারিগরী শিক্ষাকেন্দ্র নেই। এমনকি শিক্ষকদের গুণগত মান উন্নয়নের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

চা শিল্পে শিশুশ্রম, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য হওয়া, পর্যাপ্ত মজুরি থেকে বঞ্চনা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সমস্যা ইত্যাদি প্রতিকারে একদিকে যেমন মালিকদের সদিচ্ছার পরিচয় দিতে হবে, তেমনি এর জন্য রাষ্ট্রকে আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রধান শিক্ষক সমিতির সম্পাদক ও ঝরে পড়া রোধে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ভাড়াউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণ দেব জীবন বলেন, চা শ্রমিক সন্তানদের স্কুলে ভর্তির হার আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে ইদানীং বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন না থাকার কারণে অনেক চা শ্রমিক সন্তান ভর্তি হতে পারছে না।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট চা শ্রমিক সন্তান প্রেম সাগর হাজরা জানান, সামান্য টাকা মজুরি দিয়ে ঠিকমতো সংসার নিয়ে চলা দায় হয়ে পড়ছে। এ জন্য সন্তানদের পড়াশোনা করাতে হিমশিম খাচ্ছে অভিভাবকরা। প্রাইমারিতে ঝরে পড়ছে অনেক চা শ্রমিক সন্তান। এ বিষয়ে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মোহাম্মদ মিঠুন বলেন, আমি এ অঞ্চলে নতুন যোগদান করেছি, কিন্তু বিস্তারিত জেনে চা শ্রমিকদের জন্য বৃহৎ পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা আছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজায় এবার মার্কিন সেনা, তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী সমুদ্রবন্দর

হিটস্ট্রোকে পেপার বিক্রেতার মৃত্যু

শ্রমিকদের ভিসা সহজ করতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি প্রবাসী প্রতিমন্ত্রী আহ্বান

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারবিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী 

বিএনপির ৭৫ নেতা বহিষ্কার

খেলা দেখা নিয়ে অবাক তথ্য মোস্তাফিজের

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

মিরসরাইয়ে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা

বিশ্বজয়ী অধিনায়কের সংগ্রহে ‘১০০০’ ব্যাট

মার্ক জাকারবার্গকে টপকে গেলেন ইলন মাস্ক

১০

থাইল্যান্ডের কাছে চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

১১

আমার দেখা ভিয়েতনাম

১২

মানুষের কষ্টে যুবলীগ ঘরে বসে থাকে না: পরশ

১৩

মার্কিন সহায়তায় কি বাঁচবে ইউক্রেন?

১৪

গরমে গরিবের এসি যেন মাটির ঘর

১৫

টানা তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ, ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড

১৬

বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠাকরণে বাজেটে বরাদ্দ প্রয়োজন

১৭

দলবদলে সরগরম থাকবে বার্সা!

১৮

থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ সমঝোতা ও চুক্তি সই

১৯

ফ্লোরিডায় কনসাল জেনারেল হলেন সেহেলী সাবরীন

২০
*/ ?>
X