বই ভালোবাসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এম এস শাহীন। আর সেই ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতেই গড়ে তুলেছেন নিজের মতো করে একটি উন্মুক্ত পাঠাগার। জানাচ্ছেন সিফাত রাব্বানী।
স্বপ্ন তার একটি বড় উন্মুক্ত পাঠাগারের। তাই উদ্যোগের নাম দিলেন স্বপ্নসিঁড়ি। পথচলা শুরু ২০১৮ সালের শেষদিকে। তখন অবশ্য এ নাম ছিল না, ছিল না কোনো স্লোগান। ছিল শুধু সবার জন্য একটা কিছু করার দৃঢ় ইচ্ছা। শাহীনের কাছে মনে হলো, এত এত সমস্যার সমাধান দিতে পারে বই। কাউকে জ্ঞানী, মানবিক করে গড়ে তুলতে বইয়ের বিকল্প তো নেই। আর এতেই মিলবে সমাধান।
নিজের কেনা ঘরে থাকা ১০০ বই নিয়ে স্বপ্নসিঁড়ির শুরু। সেখান থেকে বন্ধুদের দিতে শুরু করলেন বই। এরপর পরিচিত জুনিয়র ও আশপাশের ডিপার্টমেন্ট থেকেও অনেকে বই নিতে আসতে লাগল শাহীনের কাছে। এরপর ফেসবুক গ্রুপে চলতে লাগল কার্যক্রম।
এক বছরের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি ডিপার্টমেন্টে স্বপ্নসিঁড়ির পাঠক ছড়িয়ে যায়। তখন পাঠক এত বেড়ে যায় যে, আর বাসা থেকে প্রতিদিন বই এনে বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। ২০১৯ সালের শেষদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্থায়ী বুক সেলফ রাখার জায়গার আবেদন করেন শাহীন। পরে অনুমতি পান।
তবে একা আর কতদূর! ২০২০ সালে স্বপ্নসিঁড়িকে সাংগঠনিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রক্টরের তত্ত্বাবধায়নে ১০ জন কার্যনির্বাহী সদস্য নিয়ে ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু হয় নবোদ্যমে। মাঝে করোনার কারণে কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ থাকলেও ক্যাম্পাস খোলার পর আবারও স্বপ্নসিঁড়ি উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে বাড়ছে বইপ্রেমীদের পদচারণা।
স্বপ্নসিঁড়ির সদস্যরা একটি বই নিয়ে এক সপ্তাহ নিজের কাছে রেখে সেটা পড়ার সুযোগ পায়। বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা ৪৫০-এর বেশি। নিয়মিত পাঠক আছে দেড় হাজার। শিক্ষার্থীদের বইমুখী করতে ক্লাস প্রমোশন, বুক রিভিউসহ আরও কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে স্বপ্নসিঁড়ি।
শাহীন জানালেন, ক্যাম্পাসে বুক সেলফ রাখার অনুমতি পেলেও সেখানে বসে বই পড়ার পরিবেশ নেই। স্বপ্নসিঁড়ির জন্য নেই কোনো রুম। তাই চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সবাইকে বই পড়ার সুবিধা দিতে পারছে না স্বপ্নসিঁড়ি। এ ছাড়া বইয়ের সংকটও আছে। দামি বইগুলো সহজে সংগ্রহ করাও যায় না।