ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যাপক আলোচিত ওয়াগনার গ্রুপ হলো রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী। তারা মূলত ভাড়ায় বিভিন্ন যুদ্ধ বা অভিযানে অংশ নিয়ে থাকে। এই গ্রুপে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি থেকে শুরু করে ভাড়াটে খুনিরাও রয়েছে। তা ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও কাজ করেন। বিভিন্ন দেশ এই গ্রুপকে সক্রিয় অপরাধী সংগঠন বলে ঘোষণা দিয়েছে। রুশ সেনাদের সহযোগী হিসেবে ইউক্রেনে ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় ৫০ হাজার সক্রিয় যোদ্ধা রয়েছে। এই গ্রুপের নেতা হচ্ছেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, যিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত। অতীতে এই ওয়াগনার গ্রুপ সিরিয়া, লিবিয়া, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রসহ বেশ কিছু দেশে তৎপর ছিল। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর দখলের লড়াইয়ে ওয়াগনার গ্রুপ বড় ভূমিকার পালন করছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
গতকাল শনিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দেওয়ায় ওয়াগনার বাহিনী ও এর প্রধান প্রিগোজিন নতুন করে আলোচনা উঠে এসেছে। পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে একসময় গোটা রাশিয়ায় তিনি পুতিনের বাবুর্চি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তিনি একসময় ক্রেমলিনের জন্য খাবার সরবরাহ করতেন। ক্রিমিয়া দখলের জন্য রাশিয়ার হয়ে ২০১৪ সালে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরপর ২০১৫ সালে সিরিয়ার সরকার সমর্থক বাহিনীর পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করে ওয়াগনার বাহিনী। ওই সময় তারা তেলের খনিগুলোও পাহারা দেয়।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির সরকার ইসলামী জঙ্গি গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াগনার বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে। সুদানে সোনার খনি পাহারা দেওয়ার কাজ করছে ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারা। সুদান ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র গ্রুপটির ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর আগে, হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, পূর্ব ইউক্রেনে বাখমুত দখলের লড়াইয়ে ওয়াগনার গ্রুপ সক্রিয় থাকার কারণ হচ্ছে প্রিগোজিন সেখানকার লবণ ও জিপসামের খনিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে চান।
চেচনিয়ায় যুদ্ধ করা রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন ওয়াগনার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করলেও বর্তমানে এর প্রধান হচ্ছেন ধনী ব্যবসায়ী প্রিগোজিন। তার জন্ম ১৯৬১ সালে। ঘটনাচক্রে, পুতিন এবং প্রিগোজিনের জন্ম একই শহরে, রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে। প্রিগোজিন একাধিকবার সাজা খাটা আসামিও। ১৯৭৯ সালে, ১৮ বছর বয়সে চুরির অভিযোগে আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন তিনি। জেল থেকে বের হওয়ার দুবছর পর আবারও চুরি-ডাকাতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এরপর ফের ১৩ বছরের জেল হয় তার।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে হটডগ এবং অন্যান্য ফাস্টফুড বিক্রির দোকান খোলেন প্রিগোজিন। সে সময়ে পুতিনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ওই সময় সদ্য ভেঙে যাওয়া সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি থেকে পুতিন রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনে বদলি হয়ে আসেন। পুতিনের সঙ্গে পরিচয়ে সূত্র ধরে তৎকালীন ক্রেমলিনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে প্রিগোজিনের। ক্রমশ তিনি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ক্রেমলিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় বিভিন্ন লোভনীয় সরকারি ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন প্রিগোজিন।
মন্তব্য করুন