কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩, ০৯:১৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আর্থিক খাত সংস্কারে শক্তিশালী অর্থনৈতিক টিম গঠন জরুরি

আর্থিক খাত সংস্কারে শক্তিশালী অর্থনৈতিক টিম গঠন জরুরি

বর্তমান ভূরাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতিতে যে ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে আর্থিক খাতের নীতি সংস্কার করা না হলে, নির্বাচনী বছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ আবার শঙ্কা প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। অর্থবছর শেষে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি, প্রবাসী আয় ও রপ্তানির মতো সূচকগুলো ধারাবাহিক কমতে থাকা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি। তাদের মতে, অর্থনীতির এ সংকট সমাধানে এ মুহূর্তে শক্তিশালী অর্থনৈতিক টিম গঠনের বিকল্প নেই। যেটার মাধ্যমে নীতিগুলো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।

চলতি অর্থবছরের জন্য সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলাতে যে বাজেট বরাদ্দ করেছিল সরকার, তার সবশেষ পরিস্থিতি ও আসছে অর্থবছরের বাজেটে করণীয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

পিআরআইর চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তারের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে ১ জুন। এরই মধ্যে ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে রাজস্ব আয় ধরা হচ্ছে ৫ লাখ কোটি, আর এতে এনবিআর জোগান দেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে মূল প্রবন্ধে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের ব্যয় মেটাতে প্রতিবছরই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়; কিন্তু শুধুমাত্র রাজস্ব আয় বাড়ালেই হবে না, রাজস্ব ব্যয়ের গুণগত মান বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়, প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয় বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন রিজার্ভসহ অর্থনীতির প্রতিটি সূচকই চাপে আছে। এই ঘাটতির ওপর আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট প্রাক্কলন করা হবে। ফলে এই বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

একই বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে মৌলিক সংস্কার না করা হলে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। আর অর্থনীতি যখন স্থিতিশীল থাকে, তখনই অল্প অল্প করে সংস্কার করা উচিত। তিনি বলেন, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা প্রতিবছরই বাড়ানো হয়; কিন্তু কোনো বছরই তা অর্জন করতে পারছে না। এর জন্য এ খাতে সংস্কার দরকার। শুধু এখানেই নয়, অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংস্কার করা দরকার। আর এটি না করলে আগামী দিনে সংকট আরও বাড়বে। করহার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বলা হয় দেশে ৭০ লাখ টিনধারী রয়েছে। আর করে দেয় মাত্র ১৩ থেকে ১৪ লাখ। এনবিআর কেন বাকিদের ধরছে না—এটি একটি বড় প্রশ্ন। তিনি আরও বলেন, টোল সিস্টেম ভালোভাবে চালু করতে পারলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব।

আগামী বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে আহসান মনসুর বলেন, প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই প্রাক্কলন বাস্তবতা নির্ভর নয়। বাস্তবতা হলো, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ৫ বা ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিই অনেক বেশি। বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফও এমন পূর্বাভাসই দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি অর্থনৈতিক বাস্তবতা সমর্থন করে না। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে কোনো দেশই এ নিশ্চয়তা দিতে পারে না। বাংলাদেশ সেখানেই অবস্থান করছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে বিশেষ সুযোগ ঘোষণা করা হয়েছিল। কোনো টাকাই ফেরত আসেনি। স্বার্থান্বেষী মহল কেউ কেউ এ সুবিধা নেবে; কিন্তু নৈতিকভাবে এটি সঠিক নয়। বদনামের ভাগীদার হবে, কিন্তু উপকার আসবে না। সরকারের এটি একটি অপরিপক্ব ও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এবার আবার প্রত্যাহার হবে। আমারা সাধুবাদ দেব, এটি আর দরকার নেই।

অর্থমন্ত্রীর নিষ্ক্রিয়তা অর্থনৈতিক সমস্যা বাড়ার মূল কারণ কি না—জানতে চাইলে আহসান মনসুর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত ১৫ মাস ধরে এ সমস্যাটি দেখা যাচ্ছে এবং তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এটি যত দীর্ঘায়িত হবে, সমস্যা তত বড় হবে। ক্ষত ততটা বাড়তে থাকবে। অর্থনীতির এ ক্ষত সারাতে কোনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নামক মলম নয়; বরং রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সংস্কারের যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তার জন্য সরকারের একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক টিম গঠন করতে হবে, যার মাধ্যমে নীতিগুলো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।

আহসান মনসুর বলেন, অর্থনৈতিক সংস্কারে সরকার এখন পর্যন্ত বড় কিছু করেনি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, সুদ হার এখনো পরিবর্তন করেনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো নীতি গ্রহণ করেনি। ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। রিজার্ভ নিয়ে এখন পর্যন্ত যে নীতি নিয়েছে, তাতে পতন ঠেকানো যায়নি। এটি চলছেই। গত ৯ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। আগামী ৮ থেকে ৯ মাস যদি আরও ৮ থেকে ৯ বিলিয়ন হারায়, তাহলে আমরা কোথায় দাঁড়াব?

তিনি বলেন, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় সরকারের নীতি কাজ করছে না। যদি কাজ না করে তাহলে নীতির পরিবর্তন করতে হবে। সরকারের নীতি হওয়া উচিত, আমরা আর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করব না, প্রত্যেকে বাজারে যাও। তাহলে বাজারে মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হবে। আস্তে আস্তে স্থিতিশীলতা আসবে। আর সরকার যে ধার করে নিয়ে আসবে, সেটা জমা হবে। রিজার্ভ বাড়বে।

রিজার্ভ সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। আর এর ফলে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে। এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। ঝুঁকিতে পড়বে প্রবৃদ্ধি, উল্লেখ করেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক।

অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষ না; কিন্তু নিয়ন্ত্রণে সার্থক বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, তারা বাজেট কমিয়ে দেবে। বাজেটের খরচ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ খুবই শক্তিশালী। অন্তত ২০টি দেশে কাজ করেছি। এসব দেশকে এত কার্যকর ম্যানেজ করতে দেখিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিপজলের দায়িত্ব পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা হাইকোর্টের

রাইসিকে কেন ভয় পেতেন ইসরায়েলের নেতারা

রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের পাশে ভারত

রাইসির মৃত্যুতে বদলে যাবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি?

রাইসির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার হলো কোরআনের তিন আয়াত 

রাইসিকে কি হত্যা করা হয়েছে?

ড্রোন ফুটেজে উঠে এলো রাইসির হেলিকপ্টারের করুণ পরিণতির দৃশ্য

রাইসির মৃত্যুতে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টের আবেগঘন স্ট্যাটাস

ইব্রাহিম রাইসি নিহত, জরুরি বৈঠকে ইরান

বিএনপির ৩ নেতা বহিষ্কার

১০

রাইসির জন্য প্রার্থনায় বসেছিল গোটা দেশ

১১

মেঠোপথে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বুনো ফুল ‘পটপটি’

১২

ব্রাজিলের কোপার স্কোয়াডে নতুন চার মুখ

১৩

রাইসির হেলিকপ্টারের যা ঘটেছিল

১৪

দুপুরের মধ্যে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

১৫

বিচারক থেকে প্রেসিডেন্ট, কে এই রাইসি

১৬

ইব্রাহিম রাইসি মারা গেছেন

১৭

ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত : রাইসি ছাড়াও যারা মারা গেলেন

১৮

রাঙামাটিতে চলছে ইউপিডিএফের আধাবেলা অবরোধ

১৯

পায়ুপথে ব্রাশ দিয়ে কিশোরকে নির্যাতন করলো বখাটেরা

২০
X